প্রথমেই গণিতের একটি জাদু দিয়ে শুরু করা যাক। যে কোনো দুটি সংখ্যা ধরে নিয়ে এদের যোগফল বের করুন। প্রাপ্ত যোগফলটির সাথে ধরে নেওয়া দ্বিতীয় সংখ্যাটিকে আবার যোগ করুন । এবার প্রতিটি যোগফলকে আগের সংখ্যা দিয়ে যোগ করতে থাকুন । এভাবে ২০তম সংখ্যা পর্যন্ত বের করে ২০তম সংখ্যাটিকে ১৯তম সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল পাবেন ১.৬০৮ । যে কোনো সংখ্যা দিয়েই শুরু করা হোক না কেন, প্রতি ক্ষেত্রেই ফল আসবে ১.৬০৮ । উদাহরণস্বরূপ ৫ এবং ২ সংখ্যা দুটিকে বিবেচনা করব ।
৫+২ = ৭; ২+৭ = ৯; ৭+৯ = ১৬; ৯+১৬ = ২৫; ……………………
এভাবে ১৯ এবং ২০তম সংখ্যাটি পাওয়া যায় যথাক্রমে ১৩,১৫৩ এবং ২১,২৮২ । ২১,২৮২-কে ১৩,১৫৩ দ্বারা ভাগ করলে ভাগফল হয় ১.৬০৮ । এই সংখ্যাটিকে বলা হয় গোল্ডেন রেশিও। এটি প্রকৃত অর্থেই একটি জাদুকরী সংখ্যা। গণিতে যতগুলো তাৎপর্যপূর্ণ সংখ্যা আছে সেগুলোর মধ্যে গোল্ডেন রেশিও বা সোনালি অনুপাত একটি। বোঝাই যাচ্ছে, এটি একটি আনুপাতিক রাশি। এর মান ১.৬১৮০… এবং প্রকাশ করা হয় গ্রীক অক্ষর φ (ফাই) দ্বারা । এটি একটি অমূলদ সংখ্যা । অর্থাৎ এটাকে দুটি পূর্ণসংখ্যার ভগ্নাংশরূপে প্রকাশ করা যায় না । φ-কে প্রকাশ করার একটি সাধারণ রীতি হচ্ছে-
দেখা যাচ্ছে, φ-কে সাধারণ ভগ্নাংশে প্রকাশ করা সম্ভব নয় । এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। গণিতের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা পাই (π) অমূলদ সংখ্যা হলেও সেটাকে ২২/৭ ভগ্নাংশরূপে বেশ কিছু সংখ্যা পর্যন্ত সঠিকভাবে প্রকাশ করা যায় । এজন্য φ-কে বলা হয় গণিতের সর্বাধিক অমূলদ সংখ্যা ।
φ (ফাই) অক্ষরটি নেওয়া হয়েছে গ্রীক ভাস্কর ফিডিয়াস-এর নামের আদ্যক্ষর থেকে । বলা হয়, ফিডিয়াস (৪৮০-৪৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) এথেনীয় পার্থানন-এর নকশা করেছিলেন সোনালি অনুপাতের ওপর ভিত্তি করে । এর পর থেকেই সোনালি অনুপাতকে φ দ্বারা প্রকাশ করার রীতি চালু হয় । গোল্ডেন রেশিওকে গোল্ডেন সেকশন (Golden Section), গোল্ডেন মিন (Golden Mean), গোল্ডেন নাম্বার (Golden Number), ডিভাইন প্রোপরশন (Devine Proportion), ডিভাইন সেকশন (Devine Section), গোল্ডেন প্রোপরশন (Golden Proportion)-ইত্যাদি বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়েছে । φ সম্পর্কে প্রাচীন মিসরীয়দের জানা-শোনা ছিল বলে মনে করা হয় । আনুমানিক ২৫৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তৈরি হওয়া প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের একটি-মিশরের পিরামিডে সোনালি অনুপাতের ব্যবহার লক্ষ করা গেছে । ইউক্লিডের এলিমেন্টস-এও সোনালি অনুপাতের অনুরূপ একটি জ্যামিতিক প্রতিজ্ঞা দেওয়া ছিল । ১৫০৯ সালে ইতালীয় গণিতবিদ ও অ্যাকাউন্টিং-এর জনক লুকা প্যাচিওলির লেখা ‘ডি ডিভাইনা প্রোপরশনি (De divina proportione)’ নামক গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পর সংখ্যাটি অধিক পরিচিতি লাভ করে । বইয়ের জ্যামিতিক চিত্রগুলো এঁকে দিয়েছিলেন রেনেসাঁর প্রবাদ পুরুষ লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি । সংখ্যাটির সাথে ভিঞ্চি যে খুব ভালোভাবেই পরিচিত ছি্লেন তার জোরাল প্রমাণ এটা । লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯) তাঁর বহু শিল্পকর্মে সোনালী অনুপাত ব্যবহার করেছেন । এর মধ্যে ভিট্রুভিয়ান ম্যান, দ্য লাস্ট সাপার ও মোনালিসার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । এছাড়া মাইকেলেঞ্জেলোর ‘দ্য ক্রিয়েশন অফ অ্যাডাম’, রাফায়েলের ‘দ্য স্কুল অফ এথেন্স’, বত্তিচেল্লির ‘দ্য বার্থ অফ ভিনাস’, সালভাদর ডালির ‘দ্য স্যাক্রামেন্ট অফ দি লাস্ট সাপার’- ইত্যাদি বিখ্যাত সব চিত্রকর্মে গোল্ডেন রেশিওর ব্যবহার দেখা যায় ।