সারা বিশ্বের ন্যায় দেশেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই মুহূর্তে গৃহবন্দি সব সাধারণ মানুষ। সমাজের বিত্তবানদের বিলাসী জীবন আর নিম্ন আয়ের মানুষের মোটামুটি জীবন চললেও এই মুহর্তে চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন মধ্যবিত্তেরা।
বর্তমানে মানবিকতা বা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে অনেকেই নিম্ন আয়ের মানুষের হাতে খাবার এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্য তুলে দিচ্ছেন। সরকারও সাথে গরিব এবং নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে বরাবরের মতো মধ্যবিত্তের পাশে নেই কেউ। ঘরে খাবার না থাকলেও মধ্যবিত্তরা চক্ষু লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না। সারাদেশের লাখ লাখ মধ্যবিত্তে অবস্থাও প্রায় একই।
মধ্যবিত্ত কোন ব্যবসায়ী বা চাকুরিজীবি কখনোই এমন গভীর সংকটে পড়েননি। করোনা পরিস্থিতির কারণে কঠিন অনিশ্চয়তায় পড়ে অন্ধকার দেখছেন চোখেমুখে। কীভাবে ঘর ভাড়া দেবেন, কীভাবে সংসার চালাবেন, সেই চিন্তায় ঘুম আসে না তাদের। মাঝেমধ্যে গভীর রাতে দুশ্চিন্তায় ঘুম থেকে আঁতকে ওঠেন অনেক মধ্যবিত্ত। কিন্তু কাউকে এমন কষ্টের কথা বলতেও পারছেন না। কঠিন অনিশ্চয়তায় চোখেমুখে অন্ধকারের মধ্যে অনেকটা আক্ষেপে করোনা পরিস্থিতিতে দিন কাটছে তারা। গরিবরা ত্রাণ পায় আর মধ্যবিত্তরা না খেয়ে চোখের পানি লুকায়, কাউকে প্রকাশ করতে পারে না।
এলাকায় কথা হয় কিছু মধ্যবিত্ত ব্যক্তির সঙ্গে। বর্তমান অবস্থার চিন্তায় তাদের মাথায় হাত। কী করবেন, কী করা উচিত, ভেবে উঠতে পারছেন না তারা। মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকদের সাথে কথা বলতে তারা আবেগাপ্লুত হয়ে যান। তারা বলেন এটা কোনো জীবন হলো। সংসার চালাতে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। চক্ষুলজ্জায় কষ্টগুলো প্রকাশ করা যায় না। ওই যে আমরা মধ্যবিত্ত। আমাদের কোনো কষ্ট নেই। আছে শুধু সুখ। কিন্তু এর আড়ালে আমরা যে কত কষ্টে জীবনযাপন করি, তা বোঝানো যায় না, কেউ বোঝারও চেষ্টা করে না।
করোনার ঘটনায় এলাকাতে লকডাউন হয়ে আছি সপ্তাহ ধরে, ফলে ঘরবন্দি সব মানুষ। নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে হয়তো কেউ না কেউ খাবার বিতরণ করেন। কিন্তু মধ্যবিত্তরা আছেন বড় বিপদে। উক্ত এলাকায় বসবাস করা একজন মধ্যবিত্ত বলেন, ‘নিম্নবিত্তের লোকজন তো সরকারি ত্রাণ পাচ্ছে, বেসরকারি সহায়তা পাচ্ছে, কিন্তু মধ্যবিত্তের কী হবে? আর ঘরে খাবার শেষ হয়ে আসছে। এখন অল্প অল্প করে খাচ্ছেন। ছেলেমেয়েদের মুখের দিকে তাকালে বুকটা ফেটে যায়। কারণ তারা কখনোই খাবারের কষ্ট করেনি। খাবার টেবিলে বসলে কান্না আসে।
যারা দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভর করেন, তারা পড়েছেন বেশি বিপদে। যেমন একজন নবীন আইনজীবী, তিনি ভাড়া বাড়িতে থাকেন, করোনাভাইরাসের কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তার উপার্জন আপাতত বন্ধ। মাস শেষে তার নির্ধারিত বেতন নেই। তার ভরসা প্রতিদিনের কাজের ওপর, মামলার ওপর। আর বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরো বাড়িভাড়া দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয় তার পক্ষে। মধ্যবিত্তদের দুর্দশার কথা কেউ কেউ ফেসবুকেও তুল ধরছেন। একজন লিখেছেন, ‘সবাই গরিব নিয়ে ব্যস্ত, আপনার পাশের মিডেল ক্লাস ফ্যামিলিটারও খবর নিয়েন, বাসায় বাজার সদায় আছে, নাকি মুখ চেপে না খেয়ে দিন পার করছে?’