২০০১ সালে
ঘুরে এলামঃ আজমীর-দিল্লী-আগ্রা
মোঃ আবু মনসুর
“কেউ ফিরে না খালী হাতে, গেলে খাজার দরবারে”
খাজা গরীবে নেওয়াজ মঈনুদ্দিন চিশতি
(রঃ) এর মাজার আজমীর শরীফ
জিয়ারতের প্রবল ইচ্ছা দীর্ঘদিন ধরে।
যদিওবা আমার মতাে মধ্যবিত্ত ঘরের
লােক বিদেশ ভ্রমণ করাটা অনেকটা
“বামন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়ানাে’র
মত”। তবু যে মনে বড় আশা হযরত খাজা
গরীবে
জেয়ারতের। এই প্রবল মনের টানে গত
এপ্রিল মাসে চুড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নিলাম
আজমীর যাবার। আমার সাথে আজমীর
যাবার সফরসঙ্গী হলাে বন্ধু পারভেজ
রফিক, ইয়াকুব এবং রফিকের সদ্য
বিবাহিত সহধর্মিনী মিসেস লাভলী।
সফরসঙ্গী বন্ধুদের আর্থিক অবস্থা আমার
চাইতে অনেক ভাল। তাই তারা একটি
নির্দিষ্ট তারিখ লক্ষ্য করে প্রস্তুতি নিতে
লাগলাে রওনা হবার। তাদের নির্দিষ্ট
তারিখ আমাকেও জানিয়ে দিল। ২৬
এপ্রিল বেলা দু’টা চল্লিশ মিনিটে তথা
নির্ধারিত সময়ে আমাদের যাত্রা শুরু
হলাে। এসি কোচ; নিয়মতান্ত্রিকভাবে
দরজা বন্ধ। শুধু গ্লাসের ভিতর দিয়ে
বাইরের প্রকৃতি অবলােকন করছি। বেশ
কয়টি পত্রিকা এবং ম্যাগাজিন গাড়ীতে
চড়ার আগেই নিয়ে নিয়েছি। গাড়ী চলছে।
তার আপন গতিতে। কিছুক্ষণ পত্রিকা
ম্যাগাজিনে চোখ বুলাচ্ছি, কিছুক্ষণ
একমনা হয়ে বাইরের প্রকৃতির সাথে
সখ্যতা গড়ার চেষ্টা করছি। এসি কোচের
দরজা বন্ধ করে যখন যাত্রা শুরু হলাে
তখন থেকে কেমন জানি মনে হচ্ছে
আমরা যারা এসি কোচের যাত্রী সবাই
বাইরের জগত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা,
জনবিচ্ছিন্ন জীব। এভাবে ভাবনার রেশ
কাটতেই আমার বন্ধু রফিকের স্ত্রী
লাভলীর সাথে দুষ্টুমীর পালা। লাভলী
অত্যন্ত চঞ্চল এবং মুক্ত মানসিকতার
মেয়ে।মুক্তভাবে লাভলীর সাথে কথা
বলতে পারাটা এতাে লম্বা ভ্ৰমণের
বিনােদন হিসেবে সহায়ক হয়েছে।
এভাবে দীর্ঘ সতের ঘন্টা গাড়ীতে চড়ে
২৭ এপ্রিল সকাল সাতটায় বেনাপােল
পৌছলাম। একটানা গাড়ীতে চড়ে আমরা
সবাই ক্লান্ত। নয়টার সময় বেনাপােল
কাষ্টমস খুলবে। কর্মকর্তারা আসবেন।
দুই ঘন্টার বিশ্রাম পেলাম। এরিমধ্যে
আমরা নাস্তার পর্বটা সেরে নিলাম।
যথারীতি নয়টা বেজে গেলাে। আমরা
কাষ্টমস এর দিকে এগুলাম। কাষ্টমসের
কাজ সারতে হবে। প্রথমে অামরা
জনপ্রতি ৩২০ টাকা করে ভ্রমণ কর
দিলাম। কাষ্টমসে আমাদের পাসর্পোটে
ইমিগ্রেশন সিল করতে হবে। লাইনে
দাঁড়ালাম। লাইনেই চট্টগ্রামের পটিয়া
থানার একভদ্র লােক উনি কলকাতার
মেডিকেলে ডাক্তারী পড়ছেন। তাঁর সাথে
পরিচয় হলাে। তিনি আমাদের যথেষ্ট
সহযােগিতা করেছেন যা ভােলার নয়।
বেনাপােল কাষ্টমস কর্মকর্তাদের
ভারতগামী যাত্রীদের উপর এদের ওপেন
সিক্রেট চাঁদার হার রয়েছে।
বহির্ভূতভাবে এরা এ টাকা নিয়ে থাকে।
এই বিড়ম্বনার শিকার আমরাও হলাম।
এভাবে কাষ্টমস সেরে আমরা বেনাপােল
সীমান্ত পার হয়ে ৮০০ রুপি দিয়ে ভাড়া
করলাম একটা টেক্সি।
২৭ এপ্রিল বেলা দুইটার সময় পৌছলাম
কলিকাতার জাকারিয়া স্ট্রীটে। হােটেল
আমানিয়াতে উঠলাম। দুই ঘন্টা বিশ্রামে
খাওয়া দাওয়া সেরে নিলাম। বিকেল
চারটার সময় পিয়ারলি প্যালেস ট্রেনের
টিকেট কাউন্টারে গেলাম। দেখলাম
পরের দিনের টিকেট নেই। ইতােমধ্যে
সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোন ট্রেনে যাবাে।
রাজধানী এক্সপ্রেসে যেতে হলে ১৫০০
রুপি লাগবে। তাই আমরা টাকা কম
খরচের জন্য রাজধানী এক্সপ্রেস বাদ
দিয়েছি। কিন্তু দালাল মারফতে আমরা
২৮ এপ্রিলের “কালকা এক্সপ্রেসের
টিকেট নিলাম ৬০০ রুপি করে। ট্রেন
ছাড়বে সন্ধ্যা সাতটায়। যথারীতি সন্ধ্যা
সাতটায় হাজির হলাম হাওড়া রেল
ষ্টেশনে। হাওড়া রেল ষ্টেশন দেখার মত
একটা জায়গা। অনেকগুলাে প্ল্যাটফর্ম
একটা প্ল্যাটফর্ম মিস হলে ট্রেন মিস হবার
সম্ভাবনা। তবে যাত্রীদের সুবিধার্থে
কম্পিউটারাইজড তালিকা প্রিন্ট রয়েছে।
কত নম্বর ট্রেন কত নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে
ছাড়বে স্পষ্টভাবে কম্পিউটার তালিকা
আছে। সেই সুবাদে আমাদের কোন
অসুবিধা হয়নি। সন্ধ্যা সাতটায় কালকা
এক্সপ্রেসে উঠলাম। শ্রিপিং সিট এ-
সুবিধা আছে ঘুমানাে যাবে। আমরা
কলকাতা থেকে রওনা দিলাম দিল্লী
উদ্দ্যেশ্যে।
২৯ এপ্রিল রাত আটটায় আমরা দিল্লীতে
পৌছলাম। পঞ্চাশ রুপি দিয়ে টেক্সি ভার্া
নিলাম দিল্লি জামে মসজিদ। সেখানে
“হােটেল নাজ” এ উঠলাম।
যেহেতু ১ মে রওনা দেব আজমীর এর
উদ্দ্যেশ্যে একদিন অবসর-বিশ্রাম
পাওয়ার সুবাদে দিল্লী জামে মসজিদে
নামাজ পড়ার সুযােগ পেলাম। দিল্লী
জামে মসজিদ মুসলিম স্থাপত্যের এক
অনন্য নিদর্শন। এ মসজিদের আয়তন
অনেক বড়, তবে মসজিদের ময়দানটা
অনেক বড়। অনেক দামী পাথরে গড়া
সম্রাট আকবর কর্তৃক স্থাপিত এ দিল্লী
জামে মসজিদ। এ মসজিদে হযরত
মুহাম্মদ (সঃ) এর কদম মােবারক এবং
দাড়ি মােবারক রয়েছে। প্রতি ওয়াক্ত
নামাজ শেষে দর্শনার্থীদের পবিত্র কদম
মােবারক এবং দাড়ি মােবারক স্পর্শ
করার সুযােগ থাকে। এই সুবাদে হযরত
মুহাম্মদ (সঃ) এর কদম মােবারক এবং
দাঁড়ি মােবারক চুম্বন করার মহা সুযােগ
পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করলাম।
তবে
দিল্লী জামে মসজিদের বর্তমান চিত্র দেখে
আমার মনে এক প্রশ্নের উদ্রেক হলাে।
ভারতীয় সরকার কি মুসলিম স্থাপত্যের
প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করছেনা?
দিল্লী জামে মসজিদের সংস্কার কোন
সাধারণ জনগণের ব্যক্তিগত উদ্যোগে
করার ক্ষমতা পুরাে আওতার বাইরে
বিধায় সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা ছাড়া দিল্লী
জামে মসজিদের সংস্কার অসম্ভব বলে
আমার মনে হচ্ছে। দিল্লী জামে মসজিদে
আছর এর নামাজ পড়ে দিল্লীর লাল কেল্লা
দেখতে গেলাম। খুব সুন্দর স্থাপনা।
তৎকালীন
আভিজাত্যের স্থাপনা এ লাল কেল্লা।
সম্রাটদের শােবার ঘর, বাগান, বিচারের
আসন মানে পঞ্চায়েত মহল, এসব
অত্যাধিক আভিজাত্যের চিত্র দেখে মনে
হলাে এ সম্রাটরা রাজ্য শাসনের
পাশাপাশি অনেক শােষণ করেছে সাধারণ
জনগণকে।
১ মে নির্ধারিত রাত নয়টা পনের মিনিটের
আহমেদাবাগ এক্সপ্রেসে আজমীর যাবার
উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলাম। ট্রেনে বসে এক
আনন্দের ভাবনা এসে গেলাে। আজ দীর্ঘ
অনেক বছর যাবত আজমীর যাবার
আশা হৃদয়ে লালিত করেছি- হযরত
খাজা গরীবে নেওয়াজ মঈনুদ্দিন চিশতী(রঃ)
এর রওজা জেয়ারতের স্বপ্ন
অনেকদিনের। গাড়ী ছুটছে তার আপন
ছন্দময় গতিতে গন্তব্যের ঠিকানায়। আর
আমরা অপেক্ষায় কখন পৌছবাে আজমীর
শরীফ। ট্রেনে চড়ে ভাবছি আজ সত্যি
সত্যি আমার স্বপ্নের মহা প্রত্যাশার
জায়গা আজমীর যাচ্ছি।
এই ব্যাকুল আনন্দে কখন যে দীর্ঘ এগার ঘন্টা ট্রেনে
চড়ে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি। পরদিন
সকাল আটটায় আমরা আজমীর শরীফের
ষ্টেশনে নামলাম। টেক্সিতে করে আজমীর
শরীফের খাদেম জুনায়েদ মিয়া চিশতীর
বাসভবনে গিয়ে উঠলাম। আজমীর
শরীফে কোন হােটেলে থাকার চাইতে
জানাশুনা খাদেমদের ঘরে গেলে
খাওয়া জেয়ারতের যাবতীয় সুব্যবস্থা গুলি
খাদেমরাই করে থাকেন।
আমরা খাওয়া
দাওয়া সেরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিশ্রামই যেন ভাল লাগছেনা, এই মন শান্তি পাচ্ছে না
যতক্ষন না যাই হযরত খাজা গরীবে
নেওয়াজের পবিত্র রওজা জেয়ারত
করতে। জুনায়েদ চিশতী বেলা বারটায়
আমাদের রওজা শরীফে নিয়ে গেলেন।
আমরা ফুল এবং চাদর নিয়ে গেলাম
রওজা শরীফে। হযরত খাজা গরীবে
নেওয়াজ (রঃ) এর রওজায় ফুল ও চাদর
দিয়ে জোহরের নামাজ পড়লাম। প্রতিদিন জোহরের নামাজের পর থেকে কাওয়ালী আয়োজন করা হয়। এই কাওয়ালী গানের প্রতি প্রচন্ড দুর্বলতা আছে।
জীবনে আমার অনেক বড় স্বপ্ন ছিল খাজা
গরীবে নেওয়াজ (রঃ) এর দরবার শরীফে
কাওয়ালী গান শুনার। আল্লাহ্ আমার
সেই আশাপূর্ণ করেছে, আল্লাহর দরবারে
হাজার শুকরিয়া।
আমরা ৩ এপ্রিল আনা
সাগরে গেলাম। জলরাশি খুব পরিস্কার
খাজা গরীবে নেওয়াজ (রঃ)-কে যখন পৃথিরাজ এবং এর সৈন্যরা আনা সাগরের
পানি ব্যবহার করতে দিচ্ছিলনা, খাজা
গরীবে নেওয়াজ একটু রাগান্বিত হয়ে
এক মুরিদকে পাঠালেন আনা সাগরের
এক বদনা পানি আনতে। ঐ মুরিদ এক
বদনা পানি আনার সাথে সাথেই আনা
সাগর শুকিয়ে যায়। পরবর্তীতে এরা
আবার খাজা গরীবে নেওয়াজের নিকট
ক্ষমা প্রার্থনা
করলে তিনি ক্ষমা করে দেন।বদনার পানি আনা সাগরে ঢেলে
দিলে সাগর আবার পানিতে ভরপুর হয়ে
যায়। আছরের নামাজ পড়ে আবার বসে
গেলাম কাওয়ালীর আসরে।
আর আমাদের দেশীয়
কাওয়ালীর সাথে আজমীর শরীফের
কাওয়ালীর রয়েছে অনেক পার্থক্য।
আমরা ৪ এপ্রিল তারাগড় পাহাড়ে হযরত
মিরা সৈয়দ হােসেন দুলার মাজার
জেয়ারত করতে যাই।
পাহাড়ে যাবার সময় জীপ যােগে যাই।
এত উঁচু পাহাড়। জানতে পারলাম
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী
তারাগড় পাহাড়ে পানি এবং বিদ্যুৎ
সংযােগ করে দিয়েছেন। জেয়ারিত শেষে
আসার সময় হেঁটে হেঁটে আসি। নামার
সময় দেখি, হযরত খাজা গরিবে
নেওয়াজকে পৃথিরাজের যাদুকর যে বিরাট
পাথরটি নিক্ষেপ করেছিলাে, সেই পাথরটি
খাজা গরীবে নেওয়াজের কেরামতিতে
আটকে গিয়েছিলাে, সেই পাথরে খাজা
গরীবে নেওয়াজের আঙ্গুলের এবং ঘােড়ার
পায়ের ছাপ স্পষ্ট রয়েছে।
পরদিন আজমীর শরীফ থেকে চলে
আসার সিদ্ধান্ত নিই। জনাব জুনায়েদ
চিশতী সাহেবকে জানিয়ে দিলাম। আমরা
আছরের ওয়াক্তে হযরত খাজা গরীবে
নেওয়াজ শেখ সৈয়দ মইনুদ্দিন চিশতী
(রঃ) এর মাজার শেষবারের মত বিদায়ী
জেয়ারত করে নিই। খাদেমের ঘরে
আসি। এসে কাপড় চোপড় ভালভাবে
গুছিয়ে নিই। মাগরিব ওয়াক্তল ভাত খেয়ে
জুনায়েদ চিশতী থেকে বিদায় গ্রহণ করি।
চার/পাঁচদিন জুনায়েদ চিশতী ছাহেবের
যে আতিথেয়তা আমরা পেয়েছি আমি
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে, আমার ভাষায় আমি প্রকাশ করতে পারবােনা। আমি জুনায়েদ
সাহেবের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
পরদিন রাত
আটটায় আমরা বাস যােগে রওনা হই
দিল্লীর উদ্দ্যেশ্যে। বাস যােগে আসার
পথে চোখে পড়ে জয়পুর পিংক সিটি।
জয়পুর একটি চমৎকার জায়গা,
জয়পুরেই নাকি ভারতীয় ছায়াছবির
বেশীরভাগ শুুটিং হয়। দীর্ঘ নয় ঘন্টা
গাড়ীতে চড়ে সকাল পাঁচটায় গিয়ে পৌছি
দিল্লী। বাস থেকে নেমে টেক্সিতে করে
আবার জামে মসজিদ সংলগ্ন ” হােটেল
নাজ” এ উঠলাম। বিশ্রাম করলাম দুচার
ঘন্টা।
বিকেল চারটায় একটা টেক্সী ভাড়া
নিয়ে হযরত নেজাম উদ্দীন আউলীয়া
(রঃ), হযরত বখতিয়ার উদ্দীন কাকী
(রঃ), হযরত মুটকা শাহ (রঃ) এর
মাজার জেয়ারত করেছি। রাত্রে হােটেলে
এসে ম্যানেজার মারফতে আগ্রা যাবার
জন্য ট্যুরিষ্টবাসের টিকেট বুকিং দিলাম।
আগ্রা যাবার সিদ্ধান্তে সবাই একমত হতে পারলাম না। বন্ধু পারভেজ এবং ইয়াকুব
আগ্রা যাবার পক্ষপাতী নয় কেননা এরা
আগেও আগ্রার তাজমহল দেখেছে। আগ্রা
যাবার জন্য একমত হলাম আমি,
আলীদা, রফিক, লাভলী।
৭ মে সকাল ছয়টায় ট্যুরিষ্ট বাসে উঠে বসলাম
গাড়ীর ভিতর অডিও সেট
চলছে, গানগুলাে খুব ভাল লাগলো গাড়ী
চলাকালীন সময়। বেলা বারটায় গিয়ে
পৌছলাম আগ্রা পাের্ট এ। আমাদের সময়
দিলেন পঞ্চাশ মিনিট। এই অল্প সময়ের সবকিছু দেখতে হবে।
প্রতিযােগীতামূলক আমরা আগ্রা পাের্টের
গেইটে গেলাম। পাঁচ রুপি দিয়ে টিকেট
কেটে ভিতরে ঢুকে গেলাম। আগ্রা
পাের্টটি যমুনা নদীর তীর ঘেষেই
অবস্থিত।
আগ্রা পাের্ট তৎকালীন সম্রাটদের বাসভবন। প্রাচীন ঐতিহ্যে
নির্মিত উন্নতমানের পাথরে গড়া এ আগ্রা।
এখানে রয়েছে পঞ্চায়েত খানা,
সম্রাট আকবর, বাবর, হুমায়ুন এবং
বাদশা শাহজাহানের বাসভবন।
যমুনা
নদীর এক তীরে আগ্রা পোর্ট অপরতীরে সপ্তম আশ্চার্য্যের এক আশ্চার্য্য, প্রেমের
অপূর্ব নিদর্শন “তাজমহল”। ভারতীয়
সরকার আগ্রা পাের্ট থেকে কোটি কোটি
টাকা রাজস্ব পাওয়া সত্ত্বেও অবহেলায়।
প্রায় সৌন্দর্য বিলীন হবার পথেই। এ
আলীশান আগ্রা পাের্ট দেখে মনে প্রশ্নের
উদয় হলাে যে, এসব শাসকরা জনগণকে
শােষণ করে নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ
করার বর্হিপ্রকাশ আগ্রা পাের্ট। পঞ্চাশ
মিনিটের অল্প সময়ে পুরােপুরি দেখা সম্ভব
হয়নি। তবে আগ্রা পাের্টের একটি
জায়গায় আমি বেশ কিছুক্ষণ সময়
কাটিয়েছি। জায়গাটা হলো
শাহজাহান যে জায়গায় বসে জীবনের
অন্ধত্ব সময়ে শ্বেত পাথরে গড়া তাজমহলের রশ্মি দেখার বা অনুভব করতেন।
আমাদেরকে দেয়া পঞ্চাশ
মিনিট শেষ হওয়াতে আমরা আবার
গাড়ীতে উঠে গেলাম তাজমহল যাবার
উদ্দ্যেশ্যে। অল্প কিছুক্ষণ পরেই আমরা
তাজমহল-এ পৌছে গেলাম। গাড়ী
গিয়ে থামলাে তাজমহলের গেটের
সামনে।
টিকেট নিতে গিয়ে একটু বেকায়দায় পড়ে গেলাম।কাউন্টারের টিকেটের মূল্য এবং বৈষম্য
দেখে। কাউন্টারের বাইরে টিকেটের মূল্য
নির্ধারণ করে তালিকা দিয়েছে। ভারতীয়
নাগরিকের জন্য বিশ রুপি, আর বিদেশী
নাগরিকের জন্য বিশ ডলার অথবা নয়শত
ষাট রুপি। এ রকম বৈষম্যমূলক
টিকেটের মূল্য দেখে বিস্মিত হলাম।
আমরা যেহেতু বিদেশী নাগরিক তাই
আমাদের টিকেটের মূল্য হবে বিশ
ডলার। আর বিশ ডলার দিয়ে তাজমহল
দেখার সামর্থ আমাদের নেই। আমার
যেহেতু হিন্দি ভাষা জানা আছে, আমি
সাহস করে ভারতীয় লাইনে দাঁড়িয়ে
ছয়টি টিকেট নিলাম। নিয়ে গেটে
গেলাম। আমাকে জিজ্ঞেস করা হলাে-
“আপ কাহাছে আয়াহে”আমি জবাব দিলাম
ক্যালকাটাছে। আমাকে যাবার অনুমতি
দিলাে। আমি সামনের দিকে এগিয়ে
গেলাম। আমার পিছনে তিনবন্ধুর কাছ
থেকে কিছুই জিজ্ঞেস না করাতে এরাও
ভিতরে ঢুকে গেলাে। আমরা তাজমহলের
কাছাকাছি চলে গেলাম।
প্রেমের অপূর্ব নিদর্শন তাজমহল।
একজন মানুষ
তার প্রিয়কে কতটুকু ভালােবাসলে এরকম নির্দশন করতে পারে তার প্রমান তাজমহল।
বাদশা শাহজাহান
প্রিয়তমা মমতাজকে কত্তোবেশী ভালবাসতেন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তাজমহল।
তাজমহলটি দেখলে মনে হবে
চিরনতুন, যেন গতকালই নির্মিত হয়েছে।
কিছুদুর যেতেই ভারতীয় এক দালাল
আমাদেরকে চিনে ফেলে এবং আটকে
দিয়ে বিশ ডলার দাবী করে। বিশ ডলার
দিয়ে যেহেতু টিকেট নিতে আমরা অপারগ মরা তাজমহল মনানন্দে
দেখার সুযােগ না পেয়ে এক নীরব যন্ত্রণা
বুকে চেপে আবার গাড়ীতে উঠে বসলাম।
দিল্লীর উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলাম।
আসার
পথে ট্যুরিষ্ট বাস আমাদের নিয়ে গেলাে
হিন্দুদের তীর্থস্থান “বৃন্দাবনে”। বৃন্দাবন
জায়গাটি অনেক বড়। পাঁচ হাজার মন্দির
আছে বৃন্দাবনে। “ছয়মাস ঘুরে বৃন্দাবনের
সব মন্দির দেখা সম্ভব হবেনা” বলে
দর্শনার্থীদের মন্তব্য। বৃন্দাবনে দুই হাজার
বিধবা নারী আছে এরা উপাসনায়রত। এ
বিধবা নারীদের যাবতীয় খরচাদি বহন
করে বৃন্দাবনের পরিচালনা পরিষদ।
বৃন্দাবনের আয়তন নয়শত একর। এই
নয় শত একর জায়গা দান করেছেন
কলকাতার “সিদ্ধিসেট” নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি।
বৃন্দাবন থেকে রওনা
হলাম হিন্দুদের আর এক তীর্থস্থান
এ “মথুরা”। মথুরাতেও অনেক বড় বড় মন্দির
আছে। এসব জায়গায় হিন্দুরা পূজা
করে। মথুরা এবং বৃন্দাবন ঘুরে বুঝতে
পারলাম এখানকার মানুষ কত অভাবী।
৮ মে ৫টা ১৫ মিনিটে রাজধানী
এক্সপ্রেসে করে নিউ দিল্লী থেকে রওনা
হলাম কলকাতার উদ্দ্যেশ্যে। রাজধানী
এক্সপ্রেস ট্রেনটি সম্পূর্ণ শীতাতপ
নিয়ন্ত্রিত, খাওয়া দাওয়া সব ফ্রি। স্লিপিং
সিট, ঘুমানাের জন্য জনপ্রতি একটি
বালিশ, একটি বেডসিট, একটি কম্বল।
এক মনােরম ভদ্র পরিবেশ বিরাজমান এ
রাজধানী এক্সপ্রেস। যদিও টিকেটের দাম
একটু বেশী তারপরেও
ট্রেন।
সতের ঘন্টায় আমাদের পৌছে দিল
কলিকাতার “হাওড়া
“স্টেশনে। দীর্ঘ সতের
ঘন্টা যে ট্রেনে চড়েছি শরীরে বিন্দুমাত্র
ক্লান্তির রেশও লাগেনি। সব মিলিয়ে
রাজধানী এক্সপ্রেসের তুলনাই হয়না।
আবারাে কলকাতার জাকারিয়া স্ট্রীটে
“হােটেল আমানিয়াতে” উঠলাম। আসার
সময় ১১ মে তারিখের শ্যামলী চেয়ার কোচের টিকেট নিলাম। শ্যামলী কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত। আমরা
যেহেতু পরের সকালে রওনা দেব
একদিন সময় মেলাতে আমরা কলকাতা
চিড়িয়াখানা, পাতালপুরী রেলষ্টেশন
টমটম গাড়ী এবং বিভিন্ন শপিং মার্কে
ঘুরেছি।
লন্ডন প্রবাসী আলী দাও সাথে ছিলেন।
আলী দা কলিকাতা থেকে ঢাকা আসবেন,
ঢাকা থেকে লন্ডন চলে যাবেন। তার
ফ্লাইটের তারিখ ১৪ মে। তার আরো
তিনদিন কলকাতায় থাকতে হবে। আলী
দা খুব ভালাে এবং মজার মানুষ।দিল্লি
থেকে কলকাতা আসার সময় রাজধানী
এক্সপ্রেসের সতের ঘন্টার
ভ্ৰমণে দেড়শতের উপর আমাদেরকে গান
শুনিয়েছে। গলাটা খুব সুন্দর। ভাটিয়ালী
আঞ্চলিক, রবীন্দ্র, এবং আধুনিক গানে
সমান দখল রয়েছে তার। আমরা যেহেতু
পরের দিন চলে আসবাে আলীদাকে
ফেলে তার মনটা খুব খারাপ। তার
জন্য আমাদের মনটাও খারাপ।…..
এখনাে ……।