লেখাঃ সুভাষ চৌধুরী
বাইরে আজ বৃষ্টি হচ্ছে, জেঠামণিরা গল্পও বলছে, জেঠামণি, টিভিতে দেখেছ? ডিসি, এমপিরা সবাই প্রধানমন্ত্রীকে বলছেন, সব ঠিক আছে, ঠিক আছে। সবকিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু তুমি তো দেখছ, কিছুই ঠিক নেই। আমাদের জেলার অবস্থা দেখো, কিছুর কি ঠিক আছে? কোনো প্রস্তুতি কি আছে? ওরা সবাই মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছে কেন? ভুল তথ্য দিচ্ছে কেন? সবকিছু ঠিক আছে ঠিক আছে বলে কেন? কিছু তো ঠিক নাই। ছেলেদের গল্পের পর, এবার আমার কথায় আসি।
তবে আজকের আমার কোনো কথা পৃথিবীর কারো জন্য প্রযোজ্য নই। মানুষকে আর ঘরে রাখা যাচ্ছে না। আগের নিয়মেই চলবে সবকিছু। এরকম কথাবার্তা যখন শুনছি। তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে, সংক্রমণ ও মৃত্যু শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, এ সম্পর্কিত একটি মডেল অবশ্যই তাদের হাতে রয়েছে। কিন্তু জনমনে আতংক ছড়াতে পারে, সেই বিবেচনায় এই মডেলটি বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে আনছেন না। তার কারণও অবশ্য আছে, এমুহূর্তে পূর্বাভাস দেওয়ার মত যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ নানাভাবে সমস্যায় রয়েছে। যেমন, বিভিন্ন সংকটের মধ্য দিয়ে, একদিন রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে কতদিন পর পরীক্ষা করা হচ্ছে? সেই খবর প্রকাশ করা হচ্ছে আরেকদিন। অর্থাৎ মাঝখানের সময়টা কয়দিন সঠিক বলা মুশকিল। তিন, চার, নাহি সপ্তাহ নাহি আরো বেশি। ফলে এর থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা কঠিন। এর পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে আসা অনেক তথ্য উপাত্ত সিস্টেম লসের শিকার হচ্ছে বলে সন্দেহ। তাহলে তো পরিস্থিতিকে আরো বিপজ্জনক করে তুলছে। এমনিতে গাণিতিক হিসাব ও পূর্ব অভিজ্ঞতা আমার সীমিত। নেই বললেই চলে। কথাটা সংক্ষেপ বললাম, বুঝে নেবেন। এবার অভিজ্ঞতা হলে পরেরবার দেখা যাবে অনেকটা সেরকম।
আরো দেখা যাচ্ছে, করোনা ভাইরাসের আসল চরিত্র এখনও বুঝে উঠতে পারেননি পৃথিবীর কোনো দেশের গবেষকরা। কারণ এই ভাইরাস একেক দেশে একেক রকম আচরণ করছে। তারপর এখন রাজনৈতিক ভাইরাসও যুক্ত হয়েছে। ফলে এক দেশের চেতনা অারেক দেশে প্রয়োগ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই ভাইরাস যত বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠছে, তত বেশি শাসক ও স্বার্থপর মানুষের চেহারা মানুষের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে। মুখোশ খুলে যাচ্ছে। এসব মানুষ কীভাবে বছরের পর বছর শুধু নিজেদের স্বার্থ ঠিক রাখতে জনস্বার্থকে অবহেলা করে এসেছেন, এটি এখন দিবালোকের মত পরিস্কার। কাদের ক্ষতি হবে বলে জরুরি পদক্ষেপ নেননি। ক্ষতি হবে জেনেও গোপন রেখেছেন। তারপরও ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প তো ইতিমধ্যে করোনার ব্রিফিং দিতে এসে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। অন্য দেশেও চলছে। ব্যাতিক্রম শুধু জার্মানি আরো দুই একটি দেশ। তাদের দরদী ও দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্ব রয়েছে। আমাদের অবস্থাও ভালো? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন। আর অন্যদের কভিড ১৯ এখন আর স্বাস্থ্য সংকট নেই, এটি এখন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংকটও।
তবে লকডাউন ছাড়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যেসব সামাজিক বিধিনিষেধ রয়েছে, মনে হয়, চলতি বছরের পুরোটা সময়ই সেসব মেনে চলতে হবে। শিগগিরই জীবনযাপন স্বাভাবিক হয়ে উঠবে, এ ধরনের প্রত্যাশা একেবারে অবাস্তব। দীর্ঘ মেয়াদে এ পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার আদর্শ উপায় হবে। যদি ভুল না হয়, রোগটি প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর কোনো প্রতিষেধক ওষুধ বের করা আগামী বছরের আগে সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ বলে মনে হয়। এ রোগটি দেখাও যাচ্ছে না, আবার অদৃশ্যও হচ্ছে না। আমাদের এটা মেনে নিতে হবে যে, আমরা একটি রোগ নিয়ে কাজ করছি ও বাস করছি। হঠাৎ করে করোনা ভাইরাসজনিত মৃত্যু দূর হয়ে যাবে, জনগণের এমন প্রত্যাশা করা উচিত হবে না।
শেষ করছি গৃহবন্দী মানুষের জন্য শুভকামনা করে। যদি ভালোবাসো কাছে এসো, একথা আরো কিছু দিন বলতে পারবেন না। ভালোই যদি বাসো, তবে আরো কিছু দিন দূরেই থাকো।
এবার একটি ভিন্ন ফেইসবুক পোস্ট।
এটা পেয়েছি গতকালের আজাদী পত্রিকায়-
এতদিন যা বুঝলাম। করোনা বেশি ভালো না। তবে তুলনামূলকভাবে খুব যে বেশি খারাপ তা-ও না। যেমনঃ ১. সুগার এবং প্রেসারের মতো জীবন ভর রোগ নই। ২. কিডনি বা ক্যান্সারের মতো কিছু নয়, যাতে ঘটিবাটি বিক্রি করে চিকিৎসা করাতে হবে। ৩. স্ট্রোক নই যে বাকি জীবন মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে হবে। ৪. পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের অমুক জায়গায় যাও সমুক জায়গায় যাও ফ্রী উপদেশ বিড়ম্বনা নেই, অযাচিত পরামর্শ নেই। ৬. সরকারি ডাক্তার ও সরকারি হাসপাতালে কোনো খরচাপাতি নেই। ৭. মৃত্যু পরবর্তী ঝামেলা নেই, লোক খাওয়ানোর খরচ নেই, কেউ আসবে না। ৮. সবচাইতে সেরা যা, তা করোনা নিজেই বলছে, এসো, লড়ো, বাঁচো, মাত্র ১৪ দিনের খেলা। ৯. তবে আশার কথা এই, বেশিরভাগ খেলাতে করোনা হেরে যাচ্ছে, প্রায় ৯৪%। তাহলে ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন, যদি সময় হয় গল্প পড়ুন।
গল্পটি নিয়েছি সিনিয়র বিধুভূষণ দাশের পোস্ট থেকে-
হিটলার তখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। একদিন ছদ্মবেশে বার্লিনের বিখ্যাত সিনেমা হলে গেলেন এটা দেখার জন্য , তার জীবনী নিয়ে নির্মিত ছবি সিনেমার পর্দায় ফুটে ওঠার পর দেশের জনগণ কি রকম প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে থাকেন।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, দেশের সকল সিনেমা হলে সে সময় সিনেমা শুরুর আগে, ইন্টারভ্যালে এবং সিনেমা শেষ হলে, পর্দায় হিটলারের ছবি ভেসে উঠতো। এবং সকলে উঠে দাঁড়িয়ে, হিটলারের প্রতি সম্মান জানাতো, এটা বাধ্যতামূলক ছিলো।
ফিল্ম শুরু হওয়ার আগে, পর্দায় হিটলারের ছবি ফুটে উঠলো। সকলে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে লাগলো। হিটলার বসে রয়েছেন, কারণ তিনি নিজেই তো হিটলার, নিজেই নিজেকে সম্মান জানাতে যাবেন কেন?
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অপরিচিত যুবক হিটলারের হাত ধরে টেনে তুলে বললেন- দাঁড়িয়ে যাও ভাই, নইলে, হারামজাদা হিটলার আর তার পোষা কুত্তারা জানতে পারলে তুমি ভীষণ বিপদে পড়ে যাবে।
এবার মহাভারতের কাহিনি,
হরিশংকর জলদাস এর লেখা থেকে নিয়েছি-
পঞ্চপাণ্ডব চৌদ্দ বছরের বনবাসে তখন। অজ্ঞাতবাস। দুর্যোধনদের হাতে ধরা পড়লে আরও চৌদ্দ বছর। বনে–বনান্তরে ঘুরে ফিরছেন যুধিষ্ঠিররা। তীব্র এক দুপুর। পথক্লান্তিতে ভাইয়েরা তৃষ্ণার্ত। অদূরের সরোবর থেকে জল আনবার দায়িত্ব পড়ল নকুলের ওপর। সময় বয়ে যায়, জল নিয়ে নকুল আর ফেরেন না। এরপর নকুলের সন্ধানে সহদেবকে পাঠালেন যুধিষ্ঠির। সহদেবেরও একই অবস্থা, ফিরে আসেন না। এরপর গেলেন অর্জুন, ভীম। বহুক্ষণ পর চিন্তিত যুধিষ্ঠির পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলেন সরোবরের দিকে। তৃষ্ণার্ত যুধিষ্ঠির আঁজলা ভরে জল খেতে উদ্যত হলে পেছন থেকে বকরূপী ধর্ম বললেন, ‘আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জল খেয়ো না যুধিষ্ঠির। যদি খাও, তোমার ভাইদের মতন অবস্থা হবে তোমার। ওই দেখো, তোমার ভাইদের কী দশা হয়েছে।’
যুধিষ্ঠির ঘাড় ফিরিয়ে দেখলেন, অর্জুনাদি ভাইদের মৃতদেহ জলে ভাসছে। যুধিষ্ঠির বুঝলেন, প্রশ্নকর্তা নিতান্ত বক নন, বকরূপী অন্য কেউ। যুধিষ্ঠির বকের প্রশ্নের উত্তর দিতে সম্মত হলেন। বক জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিমাশ্চর্যম্!’ অর্থাৎ এই পৃথিবীতে সবচেয়ে আশ্চর্যের কী?
যুধিষ্ঠির বললেন, ‘আমাদের চারপাশে, এমনকি নিজ আলয়ে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। দেখছি আমরা। দেখছি আর ভাবছি, যদু–মধু–রাম–শ্যাম মারা গেলেও আমি মারা যাব না। আমি অনন্তকাল বেঁচে থাকব। মানুষের এই যে মূর্খামি, এটাই সবচেয়ে আশ্চর্যের।