মুহাম্মদ আবু নাসের.. .. ..
সংযম ও ত্যাগের মাস হিসেবে পবিত্র রমজান মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত মর্যাদার। এবারের রমজান মাসে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের ছোঁয়াও রয়েছে। এখন আম-কাঁঠালের মৌসুম। বাংলা দেশের কয়েকটি অঞ্চলে রমজান মাসে মেয়েদের শ্বশুরবাড়িতে ইফতারি দেয়ার প্রচলন রয়েছে। আবার জ্যৈষ্ঠমাসে মেয়েদের বাড়িতে আম কাঁঠালসহ নানা ফল উপটৌকন দেয়ার চলও আছে। এ নিয়ে চলে বিরাট প্রতিযোগিতা। অনেক মেয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে চাপ দেওয়া হয়। তাদের দাবি অনুযায়ী দিতে না পারলে অনেক কটু কথা শুনতে হয় মেয়েকে। অনেকের সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও মেয়েদের সুখের জন্য শ্বশুর বাড়ির দাবি পূরণ করা হয়। রমজানে শ্বশুর বাড়ি থেকে ইফতারি এবং আম-কাঁঠালকে ‘ না ‘ বলার সামাজিক উদ্যোগ নেয়া আমার-আপনার-সকলের ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব। অনেকের শ্বশুর বাড়ির লোকজন হয়তো বেশি ধনী। তাদের জন্য এসব মামুলি ব্যাপার। কিন্তু এই কুসংস্কার আমাদের এমন বর্বর বানিয়েছে যে, অনেক পরিবারকে মেয়ের বাড়িতে ইফতারি /আম-কাঁঠাল পাঠানোর জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিতে হয়।কাতর হয়ে বলতে হয়, মেয়ের বাড়িতে ইফতারি/ আম-কাঁঠাল না পাঠালে মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকতে পারবে না, শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার সইতে হবে মেয়েটিকে।
ইফতারির ক্ষেএে আরেরকটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা হচ্ছে – ইফতারি কি দিয়ে নিয়ে যাবেন। মাইক্রো ভাড়া করবেন নাকি পিকআপ! যত বড় পরিবহন ব্যবহার করা যাবে, বিয়াই বাড়ির এলাকায় তাদের মুখ আরো বেশি উজ্জল হবে। এসব অসুস্থ মানসিকতা ছাড়া আর কিছু নয়।
যেহেতু অনেকাংশে ছেলে পক্ষের চাহিদাই মেয়ে পক্ষকে এসব করতে বাধ্য করে, তাই এসব বন্ধের প্রয়াস ছেলে পক্ষকেই আগে নিতে হবে। জানাতে হবে- ইফতারি কিংবা আাম- কাঁঠালের এই রেওয়াজ একটি কুসংস্কার ও সামাজিক অনাচার। এটি জুলুমবান্ধব সংস্কৃতি।
সামাজিক প্রথার নামে এই জোরপূর্বক ইফতার ও গ্রীষ্মের আম- কাঁঠাল আদান প্রদান বন্ধ হোক। একজন দরিদ্র বাবা কষ্ট করে তার মেয়েকে বড় করল। আবার বিয়ের জন্য মোটা অংকের টাকার বায়না মিটিয়ে, আসবাবপত্র দিয়ে ও অনেক অতিথিকে রসালো খাবার পরিবেশন করে কন্যাকে পাত্রস্থ করতে হয়। আবার এই গরিব বাবাকে ধার – দেনা করে রমজান মাসে বর পক্ষের চাহিদা মাফিক ইফতার সামগ্রী দিতে হয়। ইফতারের রেশ কাটতে না কাটতেই আবার আাম-কাঁঠাল দেয়ার পালা। কিন্তু সুদের বিনিময়ে টাকা এনে, আবার চাহিদামত আম- কাঁঠাল দিতে হয় আর সারা বছর ধরে সুদের ঘানি টানতে টানতে বেচারার প্রাণ ওষ্ঠাগত। কি নির্মম-অমানবিক এই কুপ্রথা,
এই কুসংস্কার দূর করা সামাজিক দায়িত্ব।