সুভাষ চৌধুরী
মধ্যবিত্তরা চার্লি চ্যাপলিনের মতো
বৃষ্টিতে কাঁদে
যাতে কেউ না বুঝতে পারে
কারণ, হাসলে হাসে কেন?
কাঁদলে কাঁদে কেন?
কথা বললে কথা বলি কেন?
না বললে না বলি কেন?
আসলে মধ্যবিত্ত মানে
দোষের কোনো শেষ নেই
কষ্ট দিয়ে বলে, কষ্ট পেয়েছ?
এখন দৈব- দুর্বিপাকে পরে
অসহায়ত্ব আরো চরমে পৌছেছে
সুখ- দুঃখ, শখ আহ্লাদ
সবকিছু উপরে তুলে রেখে
হাসিমুখে সবার সামনে দাঁড়াতে হয়
মধ্যবিত্তের দুঃখ থাকতে নেই
কষ্ট থাকতে নেই
প্রেম- ভালোবাসা
পরিবার -পরিজন কিচ্ছু থাকতে নেই
মধ্যবিত্তের সন্তানরা খিদেয় কাঁদে না
তাদের জন্য আহারের প্রয়োজন পড়ে না
মধ্যবিত্তরা অদ্ভুত জীব
তাদের কাজ শুধু দেওয়া
তারপর একটা সময় হারিয়ে যাওয়া
মধ্যবিত্তরা অপেক্ষায় থাকে
কোনো একদিন হয়তো মূল্যায়ন হবে
আসলে মূল্যায়ন হয় না
কিন্তু এখন যে বড় দুঃসময় চলছে
মূল্যায়ন দূরে থাক
বাঁচবার উপকরণ চাই
এই যে মানুষ থেকে মানুষের দূরত্ব
এই দূরত্বই কাল হয়ে দাঁড়াল
এই মহামারির মৃত্যুর রণহুংকার
আসলে কোথায় গিয়ে থামবে
তার কোনো নির্ধারিত সময়ও নেই
মধ্যবিত্তের কথা কেউ লিখছে না
কেউ বলছে না
বললেও কেউ শুনছে না
হাত ধুচ্ছেন ঘন ঘন
এই বুঝি কেউ এল
টাক টাক শব্দ হচ্ছে
এ বুঝি দিয়ে গেল
না তো কেউ তো এলো না
হৃদয়ে কারো এখনো আলো জ্বলেনি
না সরকার না বেসরকার
এ এক ঘোর অমানিশা
বিষাদের রাত্রি, দহনের কাল
অন্য সবার মত
মধ্যবিত্তেরও একটা ঘর আছে
ঘরে বাবা, মা, ভাই, বোন
স্ত্রী, সন্তান সবই আছে
সৌভাগ্যবান হলে
বৃদ্ধ ঠাকুরদা- ঠাকুরমাও আছে
আজ ভালোবাসার সমস্ত মুখ গুলো
তাকিয়ে আছে
কিন্তু কর্মক্ষেত্র আজ অসহনীয়
অসহায়তার মধ্যে বিষন্ন জীবনযাপন
কাজকর্ম নেই তো, আয় রোজগার নেই
যে টুকটাক সাহায্য সহযোগিতা করতাম
সেটাও আজ বদ্ধ
সামাজিক মর্যদাও নেই
এই কথা কি পেট মানবে?
মানবে না
পেটে খাবার চাই
খাবারের জন্য দরকার টাকা
সেই টাকা কোথায় থেকে আসবে
মধ্যবিত্তরা কেউ জানে না
আমরা এক অসহায় অদ্ভুত জীব
প্রশাসন বলছে
ফোন করলে চলে আসবে খাবার
এমনিতে আসবে না?
আসলে আমরা সবাই অভিনয় শিল্পী
নাট্যকার, প্রযোজক, পরিচালক
আমরা নেপথ্য কুশীলব
এভাবে আলো ছাড়া
এত অন্ধকারে কি বাঁচা যায়?
সেই আলোর খোঁজে তাকিয়ে
অজস্র চোখ আজ নিদ্রাহীন
রাত্রি বেলা পশুপাখির ডাক শুনি
তারা মানুষকে কিছু বলছে
মানুষ ছাড়া
প্রকৃতিতে আরোও সন্তান আছে
আজ সবকিছু ঠিক থাকত
দয়ামায়াহীন নিষ্ঠুর এই পাষাণ
চীনা ভাইরাস করোনা যদি না আসত
ছত্রে ছত্রে শব্দে শব্দে হিংস্র মরণবীজ
মনকে প্রবোধ দিই, থামো
অপেক্ষা করো মৃত্যুহীন দিনের জন্য
এ এক মহৎ মরণের মাহাত্ম্যকীর্তন
প্রতিদিন কতবার মরছি
টিভিতে যখন বলে
এতজন সনাক্ত এতজনের মৃত্যু
তাহলে আক্রান্তের সংখ্যা কত?
তখন একবার মরি
ঘরে বাইরে অফিস আদালতে
এই ভাইরাস নিয়ে বাস করতে হবে
তখন একবার মরি
ত্রান বলো আর উপহার বলো
অবরুদ্ধ মধ্যবিত্তরা তো কিছুই পাচ্ছে না
তখন একবার মরি
মেয়ে যখন বলে
বাবা, ঘরে খাবার নেই
বুক কেঁপে উঠে
তখন একবার মরি
যখন গর্ভজাত সন্তানরা
সংক্রমিত হবার আতঙ্কে মা- বাবাকে
রাস্তায় ফেলে চলে আসে
তখন আরও একবার মরি
এভাবে চলছে মরণ মরণ খেলা
আসলে পরলোকগমন কাকে বলে
শেষ করে দেওয়ার জন্য
একটি মহামারিই যথেষ্ট
আজ সমস্ত ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত
তুমি মধ্যবিত্ত
তোমার সমস্ত সময় ও যৌবন
খেয়ে নিয়েছে যে, সে-ও মধ্যবিত্ত
পৃথিবী ভুলে গেছে তোমার অবদান
তোমার নাম মধ্যবিত্ত
আজ আমি অদ্ভুত এক
অসহনীয় অসহায়ের মত
সীমাহীন সীমানাহীন এক ঈশ্বরকে খুঁজছি
আমার প্রার্থনা শুনে
সে-ও মহাবিরক্ত হয়ে বলে উঠে
দেখো তোমার মাথার ওপরে
নীলকন্ঠের আকাশগঙ্গা দিয়েছি
পায়ের নিচে মায়ের মত মাটি দিয়েছি
বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার জন্য
উন্মুক্ত বাতাস, অক্সিজেন দিয়েছি
নদী, পাহাড়, অরণ্য দিয়েছি
তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তে
স্বাধীনতা দিয়েছি
আরো দিয়েছি স্বাধীন চিন্তা
ইচ্ছে, স্বপ্ন, প্রেম, ভালোবাসা
সব কিছুই তো দিয়েছি
আর কি চাই তোর হতভাগা মধ্যবিত্ত
বসে বসে কবিতা লেখ, আর গান শুন
নয়তো ধান কাটতে চল।