করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল বিপুলসংখ্যক মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন। ফলে একা তার মাধ্যমেই প্রচুর লোকের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। অবস্থা আঁচ করতে পেরে সাংসদ এবিএম ফজলে করিম সোমবার (১৮ মে) রাত থেকে স্বেচ্ছা আইসোলেশনে চলে গেছেন।
গতকাল (১৯ মে) মঙ্গলবার চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবের নমুনা পরীক্ষায় রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুলের শরীরে করোনাভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়। গত ২৮ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের জানাজা ও দাফনের দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। এর দু সপ্তাহের মাথায় তিনি নিজেই আক্রান্ত হলেন করোনায়।
জানা গেছে, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুলের মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দেয় ১৬ মে। ওইদিনই তিনি একাধিকবার রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিমের সংস্পর্শে এসেছেন ঘনিষ্ঠভাবে। আবার এর পরেও তিনি ফজলে করিমের সাহচর্যে এসেছেন। করোনাভাইরাসের উপসর্গ প্রকট হয়ে দেখা দিলে চেয়ারম্যান বাবুল ১৮ মে তার নমুনা দেন পরীক্ষার জন্য। এর একদিন পরই ফল এলো পজিটিভ।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, শনিবার (১৬ মে) রাউজানে উপজেলা পরিষদ হলরুমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীর মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাংসদ ফজলে করিম চৌধুরী এবং করোনায় আক্রান্ত উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল পাশাপাশি বসেছিলেন। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, চেয়ারম্যান বাবুল সাংসদ ফজলে করিমের কানের কাছে মুখ নিয়ে একান্তে কথাও বলেছেন।
ওইদিন আবার রাউজানের সাংসদ ফজলে করিম চৌধুরী গিয়েছেন একাধিক জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা তার সঙ্গে ছিলেন। ১৬ মে রাউজান ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মাঠে তিনি স্বহস্তে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। পূর্বগুজরা ইউনিয়নে কিছু পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। এছাড়া একই দিন উরকিরচর ইউনিয়নেও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এর মধ্যেই অবস্থা আঁচ করতে পেরে সোমবার (১৮ মে) রাউজানের সাংসদ চলে যান স্বেচ্ছা আইসোলেশনে।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৯ মে) রাউজান উপজেলা হলরুমে আয়োজিত ত্রাণ উপহার বিতরণের এক অনুষ্ঠানে তিনি সশরীরে উপস্থিত না থেকে বক্তব্য রাখেন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। তবে জনাকীর্ণ ওই অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল। এদিনই রাতে বাবুলের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাতে সাংসদ ফজলে করিমের ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরী ফেসবুকে লিখেছেন— ‘আমার বাবা আইসোলেশনে আছেন। আক্রান্ত চেয়ারম্যান আংকেল কেন বাবার সংস্পর্শে আসলো এসব কথা বলে কেউ দোষারোপ করবেন না। তার ঘরে একজন নবজাতক শিশু (তার নাতি) আছে, শিশুটির জন্য দোয়া করবেন। ‘ত্রাণ মনিটরিং না করলে অব্যবস্থাপনা হবে সুতরাং আমার দায়িত্বের জায়গায় আমাকে যেতেই হবে’— বাবার এই কথাগুলো এখন আমার কানে বাজছে। আপসোস নেই। কারণ যদি করোনা পরীক্ষা করে পজিটিভও আসে, সেটা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হয়েছে।
বাবার মনোবল শক্ত আছে এবং চেয়ারম্যান আংকেলের চিকিৎসা চলছে। আর আমার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার প্রশ্ন আসে না।’
সেখানেই এক ব্যক্তি পরামর্শ দিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব যাদের সংস্পর্শে ছিল তারা যাতে নিজ দায়িত্বে আইসোলেশনে যায়— সে ধরনের কোনো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দিলে ভালো হয়। তারা যদি এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করে তাহলে পুরো রাউজানের অবস্থা খুবই ভয়াবহের দিকে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।’