ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টিকে ২৯টি আসন ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু এর বাইরে আরও প্রায় দেড়শ আসনকে উন্মুক্ত হিসেবে উল্লেখ করে জাতীয় পার্টি সেগুলোতে তাদের লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছে। এই আসনগুলোতে নৌকারও প্রার্থী আছে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, মহাজোট থেকে মাত্র ২৯টি আসন পেয়ে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি বলে এই ব্যবস্থা। পাটির নেতা জেনারেল এরশাদও পর্দার আড়ালে চলে গেছেন। মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে তিনি ছিলেন হাসপাতালে। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের সময়ও জেনারেল এরশাদ এক ধরণের রহস্য সৃষ্টি করে রেখেছিলেন। এবার তার ব্যতিক্রম হয়নি। দলটির নেতাদের অনেকে তার বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছিলে প্রকাশ্যে।
বিশ্লেষকদের মতে, জোটের বাইরে প্রার্থী দেয়ার ক্ষেত্রে দলের ভিতরের চাপ বা মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ সামাল দেয়ার বিষয়টি একটি কারণ হতে পারে বলে ধারণা। তবে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন, তাদের দলে প্রার্থী বেশি হওয়াতেই তারা জোটের বাইরে উন্মুক্ত আসনে প্রার্থী দিয়েছেন। “এখন প্রার্থীরা নির্বাচন করতে চায়। আমরাও চাই, সবাই নির্বাচনমুখী হোক। ভোটের সময় কর্মিরা সবাই আশা করে যে নিজের এলাকা থেকে প্রার্থী হবে। সুতরাং তাদের খুশি রাখাটাও আমাদের দায়িত্ব। জাতীয় পার্টির আরও কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে যে দলটি আওয়ামী লীগের কাছে ৫৪টি আসন চেয়েছিল, কিন্তু তাতে সমঝোতা হয়নি। তাদের দলের নেতা জেনারেল এরশাদের চাওয়া অনুযায়ী আসন না পাওয়াতেই দলটি বাড়তি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু মশিউর রহমান রাঙ্গা তাদের দলের অতিরিক্ত প্রার্থী দেয়ার বিষয়কে মহাজোটের কৌশল বলে দাবি করেছেন।
“নির্বাচনে যদি আমরা দেখি, আমাদের জোটের বাইরে অন্য কেউ জিতে যেতে পারে, তখন কিন্তু আমারা সেখানে এক হয়ে যাব। এছাড়া উন্মুক্ত আসন থাকায় আমাদের এজেন্ট বেশি থাকবে। আমাদের লোকজন বেশি থাকবে। এটা একটা কৌশল হিসেবে আমরা করেছি। আমাদের মহাজোটে কোন মনোমালিন্য নিয়ে আমরা এটা করি নাই। আমরা আলোচনা করেই এটা করেছি। জাতীয় পার্টির অন্যান্য সূত্রগুলো বলছে, তাদের জোটের একটা কৌশল ছিল যে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে মহাজোটের বাইরে থেকে জাতীয় পার্টি সব আসনে নির্বাচন করবে।
শেষপর্যন্ত বিএনপিসহ বিরোধী জোট নির্বাচনে অংশ নেয়ায় মহাজোটের অনেক কৌশল পাল্টাতে হয়েছে। শেষ পর্যায়ে গিয়ে বিএনপি এবং তাদের জোট শরিকরা ভোটযুদ্ধ থেকে সরে যায় কিনা, এখনও সেই সন্দেহ রয়েছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং তাদের মহাজোটে। সে ধরণের পরিস্থিতি হলেও যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন দেখানো যায়, এই বিষয়কে অন্যতম একটি কারণ বলা যেতে পারে। দল দু’টোর কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে এমন ধারণাই পাওয়া যায়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: দীপু মণিও বলেছেন, শরিকদলের অতিরিক্ত প্রার্থী রাখার কারণে তাদের ভোটে তেমন কোন প্রভাব পড়বে না বলে তিনি মনে করেন। আসন বন্টন নিয়ে হয়তো আমরা সবক্ষেত্রে একমত হতে পারিনি।কিন্তু আমাদের নির্বাচনে এর বড় কোন প্রভাব পড়বে না। তিনি আরও বলেছেন, “যারা আমাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে আছেন। যেভাবে তারা এখনও এগুচ্ছেন। যদিও তারা নির্বাচনে এসেছেন, কিন্তু তাদের পুরো যে প্রক্রিয়া, তাতে তারা শেষপর্যন্ত নির্বাচনে কি করবে, সেটিওতো দেখবার বিষয়। কাজেই সবকিছুকে মাথায় রেখেই আমরা নিজস্ব নির্বাচনী কৌশল বা কর্মকান্ড আমরা পরিচালনা করবো, এবং এক্ষেত্রে আমরা যেটা করছি, তা আমাদের আলোচনার ভিত্তিতেই হচ্ছে। কারণ মহাজোটে আমাদের ঐক্য অটুট আছে।”
শুধু জাতীয় পার্টিই নয়, আওয়ামী লীগের আরেক শরিক অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা জোট থেকে তিনটি আসন পাওয়ার পর অতিরিক্ত ২০টি আসনে কুলা প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছে। হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদও কয়েকটি উন্মুক্ত আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তবে মহাজোটের কৌশল যাই থাকুক না কেন আওয়ামী লীগের তৃণমুলের নেতা কর্মিদের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
আসন ভাগাভাগিতে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি
