চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার প্রাচীন স্হাপনা বখশী হামিদজামে মসজিদ।
মসজিদ টি উপজেলার গুনাগরী চৌমুহনী থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার পশ্চিমে ৪নং বাহারছড়া ইউনিয়নের ইলশা গ্রামে অবস্থিত।
মোগল স্হাপত্য কৌশলে নির্মিত এ মসজিদ টি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট পুরনো ভবন আকারে বেশ প্রশস্ত এবং শক্ত ভিত্তির উপর দন্ডায়মান। এটি নির্মিত হয়েছে ইট,পাথর ও সুরকি ব্যবহার করে।ইসলামী সভ্যতা সাংস্কৃতির বিকাশে তৎকালীন সময়ে এই মসজিদটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মুসলমানদের শিক্ষা ও সাংস্কৃতির ভীত রচনা করে এ মসজিদ টি। মসজিদের প্রধান গেইট প্রবেশ পথে রক্ষিত ফলকে আরবিতে লেখা আছে,
বানাল মসজিদুল মোকারম ফি আহমিদ- মূলক ইসনাদুল মিল্লাতি ওয়াদ্দিনী সুলতানুল মুয়াজ্জমু সুলাইমান, সালিমা ফিহি আনিল ওয়াফাত ওয়াল ব্যায়িনাতী মুবেখান জিসমুর রমজান, খামছান ওয়া সাবয়িন ওয়া তিসআতু মিইআত হিজরী আলাইহিমুস সালাম।
অর্থাৎ এই পবিত্র মসজিদ খানা জাতি ও ধর্মের অন্যতম খুটি। সুলতান সম্রাট সোলাইমান সময়ের আমলে নির্মিত হয়েছে মসজিদ টি। যাকে তৎকালীন যুগে উপাধি দেওয়া হয়েছে দ্বীন ও মিল্লাতের সুলতানুল মুয়াজ্জম তথা মহান সম্রাট হিসাবে।তিনি আজ থেকে ৪৫০ বছরের আগে নির্মান করে এ মসজিদ টি। কেউ কেউ মনে করেন, এটি আল্লাহ নিজেই তার ফেরেসতাদের মাধ্যমে নির্মাণ করেছেন, যা ভূর্গত থেকে উপরে উঠে এসেছে।আবার এলাকায় লোকে মুখে বখশী হামিদ জামে মসজিদ বলে বেশ পরিচিত। স্হানীয় এলাকাবাসী ও সাধারন মুসল্লীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বখশী হামিদের পুরো নাম মুুহাম্মদ আবদুল হামিদ। বখশী তার উপাধী। ১৫৬৮ সালে নির্মিত বখশী হামিদ মসজিদটির প্রতিষ্টাতা তৎকালীন সময়ে কালেষ্টর তথা প্রশাসক ছিলেন। তিনি মসজিদ টি নির্মাণ করার পর এলাকার শিক্ষা সাংস্কৃতির ব্যাপক উন্নতি সাধন করেন। তৎকালীন সময়ে উক্ত এলাকাটি ছিল প্যারাবন রুপে।ইউচুফ ও কুতুব নামে দু- জনই আমির শাহ আব্দুল করিম নামক জনৈক সূফীর সঙ্গে গৌড় পেলে উপযুক্ত বাসস্হানের সন্ধানে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে বাঁশখালীর এই উপকূলিয় জায়গায় অবতরন করেন।তারা তৎকালীন যুগে বাঁশখালীর ইলশা দারগা বাড়ির সামনে পৌছলে শাহ সাহেব ইলা- হা শব্দ উচ্চারন করে তার ছড়ি পুঁতে রাখেন এবং সেখানে বসবাসের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তার সেই নামানুসারে এর নামকরন করা হয় বখশী হামিদ জামে মসজিদ। ধারনা করা হয়, এই উপমহাদেশে ধর্ম প্রচার করতে আসা নবী ও রাসুল(সা:) এর সাহাবী ছিলেন তিনি।সেই থেকে এ এলাকার নাম করন করা হয় ইলশা গ্রাম হিসেবে।
অলি বুর্জুগের আবাদকৃত এ গ্রামে বহু দ্বীনদার – পীর মাশায়েকের আবির্ভাব হয়েছিল।এর মধ্যে শাহ চাঁন মোল্লা অন্যতম,তিনি এ মসজিদ নির্মানের সম- সাময়িক বলে অনেকে মনে করেন।তবে এ মসজিদ টির নামকরন নিয়ে দেশ জুড়ে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে। মসজিদের পূর্ব পার্শ্বে প্রাচীন কালের সান বাঁধানো একটি সু – বিশাল পুকুর রয়েছে,পুকুরে মাছ চাষ করা হয় এবং পানি ব্যবহার করে মুসল্লিরা অজু করে। মসজিদের পশ্চিমে কবরস্হান পূর্বে উত্তরে গড়ে উটেছে সু বিশাল মাদ্রাসা ও এতিমখানা সহ ইসলামী কমপ্লেক্স।এ কমপ্লেক্সের নাম রাখা হয় দারুল কোরআন মুহাম্মদিয়া শাহ আব্দুল হামিদ মাদ্রাসা ও এতিমখানা।প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার ধর্মপ্রান মুসল্লি সমাবেত হয়।বর্তমানে মসজিদ টি খুব সুন্দর করে নতুন সাজে সজ্জিত করে গড়ে পীরে কামেল হযরত মাওলানা আব্দুল মজিদ সাহেব (দা:বা:)। এই ঐতিহাসিক নিদর্শনা মসজিদটি পরিদর্শনে মন্ত্রী,এমপি থেকে শুরু করে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন আসেন ||
সংগ্রহীতায় :-মোঃ আরিফ বিল্লাহ্ চৌধুরী||