চট্টগ্রাম অফিসঃদুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চট্টগ্রামের আলোচিত সমালোচিত বিতর্কিত কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন শেষ পর্যন্ত নিজেই অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে চাকুরিচ্যুত হলেন। বিদায়কালে তাকে বিধি মোতাবেক মাত্র ৯০ দিনের বেতন নিয়েই সরকারি চাকরি থেকে ঘরে ফিরতে হচ্ছে। বুধবার দুদক প্রধান কার্যালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন (স্মারক নম্বর-০৪.০১.০০০০.১০৪.১৫.২৯৫১৭-৭৪৯০) মূলে চাকরি থেকে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের আদেশ দেওয়া হয়। বুধবার দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের চাকুরিচ্যুতির খবরটিই বৃহত্তর চট্টগ্রামের ছড়িয়ে পড়ে। দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুলাহর স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৫৪(২)- তে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে মো. শরীফ উদ্দিন, উপ-সহকারী পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, পটুয়াখালীকে চাকরি হতে অপসারণ করা হলো। তিনি বিধি মোতাবেক ৯০ দিনের বেতন এবং প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা (যদি থাকে) পাবেন। কমিশনের অনুমোদনক্রমে জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো এবং ১৬-০২ ২০২২ খ্রিস্টাব্দ অপরাহ্ণ থেকে কার্যকর গণ্য হবে। এর আগে তিনি দুদক চট্টগ্রাম, সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। চট্টগ্রামে কর্মরত থাকাকালীন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে দুদকের মামলা তদন্তের নামে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। এমনকি মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনের মাননীয় বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ গত বছরের ২৬ জুন বলেন যে, আদালতের অনুমতি ব্যতীত দুদক কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন কর্তৃক ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছেন অবৈধভাবে। বিচারপতিদ্বয়ের বেঞ্চ এমনও বলেন যে, দুদক কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিনের এমন তদন্ত উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ক্ষমতার অপব্যবহার।
জানা গেছে, দুদকের এই বিতর্কিত কর্মকর্তা ভূমি অধিগ্রহণের দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকার বিরোধী বলয়ের প্ররোচনায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা, মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ জালিয়াতিপূর্বক বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানে অনীহা প্রদর্শন, নিজ হেফাজতে থাকা তদন্ত প্রতিবেদন ফাঁসসহ নানা অভিযোগে নিজেই ফেঁসে গেলেন। দুদক, সজেকা, চট্টগ্রাম ২ (কক্সবাজার) এর মামলা নম্বর-০১ তারিখ ১০/০৩/২০২০ এর বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন কক্সবাজার জেলার ভূমি অধিগ্রহণে অনিয়মের তদন্তকার্য শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে, মামলার বিষয় মানি লন্ডারিং হলেও এবং এজাহারে শুধুমাত্র ৩ জনের নাম থাকলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি উচ্চপদস্থ প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা, বর্তমানে বিদেশি মিশনে কর্মরত সাংবাদিক নেতা, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অনেককে ফাঁসাতে চেয়েছিলেন। তবে এ প্রচেষ্টায় তিনি সফল হতে না পেরে বরং নিজেই অসদাচরণ, আইনের ব্যত্যয় ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে গেলেন। সচেতন মহলের দাবি, সরকারের দায়িত্বশীল এসব কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদদের বিতর্কিত করার মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত দুদক সোর্স পরিচয়দানকারী ব্যক্তিদেরও খুঁজে বের করা দরকার। এই কর্মকর্তা চাকুরিচ্যুত হওয়ার খবরে আতঙ্ক বিরাজ করছে কক্সবাজারের দুদক দালাল হিসেবে চিহ্নিত শরীফ উদ্দিনের সহযোগীদের মধ্যে। যারা ইতিমধ্যে দুদক কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীসহ পেশাজীবীদের নানাভাবে হয়রানি ও জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। দুদক কর্মকর্তা শরীফের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তাকে গত বছরের ১৬ জুন চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালী বদলি করা হয়। তিনি তাকে বদলি করার বিষয়টি নিয়েও নানাভাবে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন কারার মানসে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করেন। কিছু গণমাধ্যমকে বিভ্রান্ত করে শরীফের সোর্সরা সমাজের নেতৃস্থানীয় বিশেষ করে সরকারি দল এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষাবলম্বী ব্যক্তিদের দুর্নীতিবাজ বানাতেও উঠেপড়ে লেগে যায়। এমনকি তিনি গেল বছরের ৩০ জুন চকরিয়ার কথিত মানবাধিকার কর্মী শহিদুল হক লিটনকে দিয়ে তার বদলি ঠেকাতে হাইকোর্টে রিট (নম্বর-১৩০/২০২১) দায়ের করেন। সেই রিট নিয়ে তাকে দুই সপ্তাহের জন্য বদলি স্থগিত করা হয়েছে মর্মে মিথ্যা সংবাদও প্রকাশ করেন। একই বছরের ২৬ আগস্ট মহামান্য হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে দুদক কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন চট্টগ্রাম ছাড়তে চান না কেন মর্মে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমনকি দুদক কর্মকর্তা শরীফের বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদকের প্রধান কার্যালয়কে মহামান্য আদালত নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই নির্দেশের প্রেক্ষিতে দুদক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যাপক তদন্ত করেন। সেই তদন্তের পরই বিতর্কিত দুদক কর্মকর্তা মো শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য কক্সবাজার ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারের ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা ঘুষের টাকা উদ্ধার করে উক্ত টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগাওে জমা না দেয়া এবং সাবেক মন্ত্রীর পুত্রকে চট্টগ্রাম কর্ণফুলী গ্যাসের কয়েকটি আবাসিক সংযোগ দেয়ার বিয়ষটিকে অবৈধ দাবি করে নিরাপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করার মত অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীতে এ দুদক কর্মকর্তার একাধিক বিলাসবহুল ফ্ল্যাট বাড়িও তথ্যও রয়েছে।
এব্যাপারে ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিক জহিরুল আলম জানান কক্সবাজারে তিনি নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছেন। তার সততা সম্পর্কে আমরা অবগত। তাকে চাকুরিচ্যুতির করা এটা একটা ষড়যন্ত্র পারে এ ব্যাপারে তদন্ত হওয়া দরকার।
চট্টগ্রামের বিতকির্ত সেই দুদক কর্মকর্তা দুর্নীতির অভিযোগে চাকুরিচ্যুত
