পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।
গতকাল ২৮মে শনিবার বেলা একটায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ফজলে শামস পরশ বলেন, একটি পক্ষ বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র বানাতে চায়, অন্য পক্ষ শ্রীলঙ্কা। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার যত দিন থাকবে, ততদিন তাদের এ স্বপ্নের বাস্তবায়ন হবে না। তিনি বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে দেশপ্রেমিক, কর্মিবান্ধব, জনদরদি নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে। সেখানে তিনি যোগ্য নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার জন্য কাউন্সিলরদের আহ্বান জানান। তবে সম্মেলনে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের ৩০ প্রার্থী একমত হতে পারেননি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩০ প্রার্থী নিজেদের প্রার্থিতা নিয়ে অনড় ছিলেন । পরে কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়। সম্মেলনে ফজলে শামস পরশ আরো বলেন, আমাদের লক্ষ্য ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিণত করতে হবে।
সম্মেলন উপলক্ষে সকাল থেকে বৃষ্টি মাথায় যুবলীগের নেতা কর্মীরা মিছিল নিয়ে মাঠে ভিড় করেন । দলীয় নেতা -কর্মী, যাঁরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত , তাঁদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জানিয়ে শেখ ফজলে শামস বলেন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ছাড় দেওয়া হয়নি। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। একে একে দুই শীর্ষ পদপ্রত্যাশী সব প্রার্থীকে নাম ধরে ডাকলেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ফজলে শামস পরশ। নাম, ঠিকানা, বয়স, পেশাসহ নানা প্রশ্নের মুখে প্রার্থীরা। যেন ছোটখাটো একটা সাক্ষাৎকার। নাম পরিচয় সবই তিনি টুকে নিলেন।
তিনি এরপর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনার মাধ্যমে নাম প্রত্যাহারের জন্য প্রার্থীদের ১০ মিনিট করে সময় দিলেন। সভাপতি পদে দুজন নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিলেও আটজন দৌঁড়ে থাকবেন সিদ্ধান্ত দিলেন। সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ২২ জনই অনড় থাকলেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। দ্বিতীয় অধিবেশনে যুবলীগ চেয়ারম্যান প্রায় ৩৫০ জন কাউন্সিলরের কাছে সভাপতি পদে প্রার্থীদের নাম প্রস্তাবের অনুরোধ জানান। পরে একে একে ১০ জনের নাম প্রস্তাব ও সমর্থন করেন কাউন্সিলররা । বেশির ভাগ নামই আগে জমা দেওয়া জীবনবৃত্তান্ত অনুযায়ী প্রস্তাব করা হয় । তবে জীবনবৃত্তান্ত জমা না দিলেও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সদ্য বিদায়ী সভাপতি আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরীর নাম প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করেন তাঁর দুই অনুসারী । সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো . মইনুল হোসেন খান নিখিল, সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরী।
মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন , ‘একটা শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে পরশ – নিখিল যুবলীগের দায়িত্বে এসেছে । তাদের দিয়ে ক্যাসিনো ও কমিটি বাণিজ্য হবে না। আমাদের হাত দিয়ে সন্ত্রাসী, মাদকসেবী ও চাঁদাবাজদের নাম আসবে না। সৎ ও পরিচ্ছন্ন নেতা – কর্মীদের দিয়ে যুবলীগের কমিটি হবে। সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক। আমার ওপর আপনাদের আস্থা আছে? সমস্বরে হলভর্তি কাউন্সিলর ও প্রার্থীরা চিৎকার করে সমর্থন দিলেন। ফিরতি কথায় যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির পুত্র ফজলে শামস বললেন, ‘ তাহলে শিগগিরই আমরা আপনাদের জানিয়ে দেব , কে সভাপতি , কে সাধারণ সম্পাদক। সাক্ষাৎকার পর্ব শেষে টিপুর সমর্থনে দুই সভাপতি প্রার্থী তৌহিদুল ইসলাম ও মনসুর আলম নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু তারপরও আটজন সভাপতি প্রার্থী প্রতিযোগিতায় থেকে যান।
দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে পটিয়ার একটি কমিউনিটি সেন্টারে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে দুপুরের দিকে পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধন করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ফজলে শামস। দুই পদসহ কমিটি পরে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সম্মেলন শেষ করা হয় । এতে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী , আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম , দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান , সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী , যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ ফজলে নাঈম ও বদিউল আলম , সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান , সহসম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনা করেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের পার্থ সারথি চৌধুরী।