মাত্র ধুই তিন বছরের মধ্যে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সহায়তা শুধু নগদ নয়, অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি-বৈভবে চোখ কপালে উঠেছে ইডি আধিকারিকদের।
রাজারহাট-নিউটাউনে ছ’টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। হরিদেবপুরের আবাসনে আরও তিনটি এবং বেলঘরিয়ায় দু’টি। অর্থাৎ, শহরেই তাঁর ফ্ল্যাটের সংখ্যা ১১। এছাড়া শান্তিনিকেতনে রয়েছে তিনটি বাড়ি। এক একটির দাম কমপক্ষে ৮০-৯০ লক্ষ টাকা। সঙ্গে প্রায় কোটি টাকার ইন্টিরিয়র ডেকরেশন।
ঘটনাচক্রে এই সব সম্পত্তিই তাঁর হাতে এসেছে মাত্র দু’-তিন বছরের মধ্যে। সৌজন্যে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এমনই দাবি কেন্দ্রীয় সংস্থার।
বিগত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই খবরের শিরোনামে পার্থবাবুর ঘনিষ্ঠ এই অভিনেত্রী। বাংলা-ওড়িয়া সিনেমা থেকে টিভি ধারাবাহিক, বিজ্ঞাপনে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। ইডির দাবি, শুধু ফ্ল্যাট-বাড়ি নয়, বছরে দু’বার বিদেশ ভ্রমণ ছিল অর্পিতার রুটিন। তাঁর হরিদেবপুরের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে রয়েছে ১৫টি ভিন্ন প্রজাতির বিদেশি কুকুর। নিত্যনতুন বিলাসবহুল হোটেল থাকা ও আর বিদেশি গাড়ি চড়াকেও অভ্যাসে পরিণত করেছিলেন তিনি। ইডি জেনেছে, এই সব কিছুতেই অভিনেত্রীকে টাকা জুগিয়েছেন পার্থ। কিন্তু কেন?
সূত্রের খবর, এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে ইডি আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, অভিনেত্রীর সঙ্গে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর আলাপ মাত্র বছর দুয়েক আগে। এসএসসি দুর্নীতি মামলায় ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা জমি-বাড়ি ইত্যাদি সম্পত্তিতে লাগানোর ক্ষেত্রে অর্পিতা ছিলেন পার্থবাবুর হাতের তাস। তদন্তকারীদের দাবি, অভিনেত্রীর নামে ফ্ল্যাট এবং বাড়িগুলি কিনেছিলেন মন্ত্রীই। এর মধ্যে হরিদেবপুরের বিলাসবহুল আবাসনের ফ্ল্যাটগুলি ছিল তিন থেকে চার হাজার বর্গফুটের। বিদেশ থেকে এসেছিল ঘরের আলো, মার্বেল ও বিভিন্ন সামগ্রী। পুরো টাকাটাই মন্ত্রীর।
ইডির আরও অভিযোগ, অতিরিক্ত বিশ্বাসভাজন হয়ে ওঠার পরই মন্ত্রী তাঁর এক ঘনিষ্ঠের মাধ্যমে দুর্নীতির টাকা তাঁর কাছে ‘পার্ক’ করতেন। সম্পত্তি আর টাকার লোভে অর্পিতা মাঝেমধ্যে মন্ত্রীকে ব্ল্যাকমেলও করতেন। তার সুবাদে তিনি হাতিয়েছেন বেশ কিছু জমি ও ফ্ল্যাট। সেগুলির নথি যাচাইয়ের কাজ চলছে। অভিনেত্রীর হাল ফ্যাশনের গয়না পরার শখ ছিল। তাঁর ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া প্রায় ৮০ লক্ষ টাকার সোনা
ও হীরের গয়নাগুলি একেবারে ‘লেটেস্ট ডিজাইনে’র। ইডির দাবি, নগদকে অলঙ্কারে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব ছিল অর্পিতার। সেই কারণে পরিচিতদের কোম্পানি থেকে গয়না কেনা হয়। তদন্তে প্রকাশ, সেই সংস্থাগুলিও কালো টাকা সাদা করার জন্য খোলা হয়েছিল। একাধিক কোম্পানির ডিরেক্টরও ছিলেন অভিনেত্রী। তাঁর বিদেশ যাত্রাও এখন তদন্তকারীদের নজরে। গত দু’বছরে তিনি বেশ কয়েকবার থাইল্যান্ড, দুবাই, মালদ্বীপ সহ বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন। সেখান থেকেই কালো টাকার বিনিময়ে বিদেশি মুদ্রা আমদানি করা হয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা চলছে।
সব মিলিয়ে তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে হরিদেবপুরের আবাসনটি। সেখানে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা এক কর্মী জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যেই আসতেন পার্থবাবু। লিফটে সোজা উঠে যেতেন দোতলার ফ্ল্যাটে। কারণ, সেখানেই থাকতেন অর্পিতা।