মুহাম্মদ আবু নাসের ঃ আমাদের সাম্প্রতিক সাহিত্যচর্চা নিয়ে ভাবতে গেলে খেই হারিয়ে ফেলতে হয়। বুঝিনা আমরা কি সাহিত্য সাধনা করছি, নাকি প্রতিযোগিতা করছি, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি, নাকি ঘোড়দৌড় দৌড়াচ্ছি। সাহিত্যে প্রতিযোগিতা থাকে। সেটা নিজের সাথে নিজের। প্রতিনিয়ত নিজেকে অতিক্রম করার প্রতিযোগিতা। সাহিত্যের জন্য যে মগ্নতা, যে নিমজ্জন প্রয়োজন তা কোথায়? সাহিত্য সাধনায় ব্রতী হতে হলে মন মানসে ধারন করতে হয় রবীন্দ্র-নজরুল-জসীম উদ্দীন-জীবনানন্দ-সুকান্তকে। বোধজুড়ে থাকবে বিভূতিভূষন- মানিক আবু রুশদ আল মাহমুদ- শওকত ওসমান-শামসুর রাহমান- সৈয়দ শামসুল হক। যাদের লেখা ঋদ্ধ করে তুলবে। পথের সন্ধান দেবে। তাঁদের লেখা পড়ে, আত্নস্থ করে লেখা আর পড়াকেই ধ্যানজ্ঞান বিবেচনা করতে হবে।
দেড় যুগ ধরে লেখালেখির সাথে আছি। একদিনের জন্যও লেখা ছাড়িনি। জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে লেখা। একটু একটু করে এগিয়েছি। আমরা যারা মফস্বল বা পাড়া গাঁয়ের লেখক এক সময় পত্রিকা অফিস সম্পাদকদের চিনতাম না। ভীরু ভীরু মনে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে এক একটা লেখা পোষ্ট করেছি, বাক্সে ফেলেছি। তারপর অধীর অপেক্ষায় থেকেছি। কখনো ছাপা হয়েছে, কখনো হয়নি। ভেঙ্গে পড়িনি আমরা। তাপসের ন্যায় লেগে থেকেছি। লেখা ছাপা হয়েছে লেখার গুনে। পত্রিকা অফিসে যেতে হয়নি, সম্পাদককে চিনতে হয়নি। লেখকদের জেনেছি তাদের লেখা পড়ে, ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ হয়নি। লেখার দক্ষতা একদিনে হয়নি, তার জন্য সাধনা করতে হয়েছিল। আজকাল চেনাজানা, যাতায়াত লেখা ছাপানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বিষয়। এখন কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া লেখা ব্যক্তি গুনে ছাপা হয়, লেখার গুনে নয়। অবশ্য সব সম্পাদকের ক্ষেত্রে নয়। ভালো মানুষ, ভালো সম্পাদক আগেও ছিলেন, এখনও আছেন। নইলে দুনিয়ার ভারসাম্য থাকত না
এক একটি পত্রিকাকে কেন্দ্রীভূত করে গড়ে উঠেছে একটি করে লেখক বলয়। ওরা যেন ওই পত্রিকারই লেখক। অসংখ্য সাহিত্য সংগঠন রয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন সংগঠন ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবর পাই। সেখানেও একই ব্যাপার, নিজস্ব লোক। সাহিত্য বিষয়ক অসংখ্য পুরষ্কার ঘোষিত হচ্ছে বছর জুড়ে। এক শ্রেণীর লেখক হয়ে পড়ছেন পুরস্কার কেন্দ্রিক। তাদের উদ্দেশ্য পুরস্কার পাওয়ার জন্য লেখা আর যা যা করা দরকার তা করা। ফেসবুক হয়েছে আরেকটা বড় বিড়ম্বনা। যার কল্যাণে সবাই এখন কবি-সাহিত্যিক। ভালো লেখক হওয়ার জন্য বা মহৎ সৃষ্টির প্রেরণাতে যেন লিখছেন না। লিখছেন ফেসবুকে লেখা পোষ্ট দিয়ে বন্ধুদের দেখানোর জন্য। তাদের কাছ থেকে লাইক-কমেন্টস পাওয়ার জন্য। কিছু লেখক মেতেছেন ক্রেস্ট বাণিজ্যে। গলায় একটা উত্তরীয় ঝুলিয়ে ক্রেস্ট হাতে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। ক্রেস্ট বাণিজ্যে সওয়ারি হয়েছে বেশ কিছু সংগঠনও। অন্যের টাকায় ক্রেস্ট বানিয়ে তাকে দেওয়ার পরও হাতে কিছু থাকে। সাথে বাড়তি পাওনা সংগঠন আর নিজের নাম প্রচার।
একজন লেখক ইচ্ছে করলেই যা খুশি লিখতে পারেন না। তার আছে সামাজিক দায়বদ্ধতা। লেখকের লেখা ছাপা হওয়ার আগ পর্যন্ত ওটা তার সম্পত্তি কিন্তু লেখা ছাপা হওয়া মাত্র ওটা জনগণ আর পাঠকের সম্পত্তি। কাজেই লেখককে লিখতে হবে ভেবে। পাঠক-সমাজ-দেশের কথা চিন্তা করে।
লেখক: সম্পাদক: চট্টগ্রাম লেখক- সাংবাদিক ফোরাম।