ফটিকছড়ির ভুজপুর থানাধীন বাগান বাজার এলাকার দুই পল্লি চিকিৎসকসহ তিন নিরীহ যুবককে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগীদের পরিবার। সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভুজপুর থানা পুলিশের ওসি হেলালসহ দুই দারোগার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন ওমর ফারুক।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ২৯ জুলাই রাতে উপজেলার হেয়াকোঁ বাজার থেকে বাড়ী যাওয়ার পথে পল্লি চিকিৎসক (পশু) শাহীন আলম, নরুল আলম, এবং সি.এন.জি অটোরিকশা লাইনম্যান মোঃ সুমনকে আটক করে পুলিশ।
আটকের পর তিন যুবকের পরিবারের কাছে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবী করা হয়। তাদের পরিবার টাকা দিতে অস্বীকার করায় পরে তাদেরকে তিন দিন ধরে থানা হেফাজতে আটকে রেখে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন করে। এসময় পুলিশ তাদেরকে থানা হেফাজতে বৈদ্যুতিক শর্ট দিয়ে হাতের আঙ্গুলের নখে সুঁই ঢুকিয়ে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতনের পর ডাকাত হিসেবে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করে। ওসি হেলালের নির্দেশে এস আই মাহফুজ এবং এস আই আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া তিন দিন ধরে থানা হেফাজতে তিন যুবকের উপর অমানবিক নির্যাতন চালানোর পর অবশেষে তাদেরকে ডাকাতি ও অস্ত্র মানলা দিয়ে কোর্টে চালান।
এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ওসি হেলালসহ তিন পুলিশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী তিন যুবকের পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার সাথে জড়িত তিন পুলিশের বিরুদ্ধে আইনগত বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনসহ গ্রেফতার হওয়া তিন যুবকের মুক্তির দাবী জানানো হয়। এসময় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে আবদুল অদুদ, আবদুল হক, আফিয়া খাতুন, জুলেখা বেগমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তার সুমনের ভাই ওমর ফারুক বলেন উপজেলার বাগান বাজার হেয়াকোঁ এলাকায় পুলিশ প্রশাসন বিভিন্ন অজুহাতে প্রায়ই এলাকার নিরীহ লোকজনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি অব্যাহত রেখেছে।
তাদের কোন ধরনের অপরাধ না থাকার পরেও ওসি হেলালের নির্দেশে তাদেরকে সেখান থেকে ভুজপুর থানায় নিয়ে এস আই মাহফুজ আমার ভাইসহ অপর দুই যুবক বৈদ্যুতিক শর্ট দেয়,আঙ্গুলের নখের নীচে সুঁই দিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে ডাকাত হিসেবে স্বীকারোক্তি নেয়ার চেষ্টা করে। তিন দিন ধরে তাদেরকে ভুজপুর থানায় এভাবে অমানুষিক নির্যাতন শেষে ডাকাত হিসেবে স্বীকারোক্তি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে কোর্টে চালান দেয়।
এর আগে এস.আই মাহফুজুর রহমান ০১৮৬৮-২৭৯৯৪১ মোবাইলে ফোন করে বলেন এ তিনজনকে ছাড়াতে হলে পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হবে। টাকা না দিলে নিরপরাধ এ তিন যুবককে ক্রস ফায়ারে দিয়ে হত্যা করবে বলে হুমকি প্রদান করে।
মামলার এজাহার এবং এফআইআর এ তিন যুবককে হেয়াকোঁ সেলফি রোড এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র মামলা দেয়া হয়। অথচ যে সময় এবং স্থানে ডাকাতির প্রস্তুতির কথা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে সে সময় এ তিনজন হেয়াকোঁ বাজারের প্রাইম ব্যাংকের সামনে রাস্তার উপর গাড়ীর জন্য অপেক্ষমান ছিল। যার সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে সেটা আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। এবং আমরাও তা সংরক্ষন করে রেখেছি। এ ছাড়া পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করার সময় কোন ধরনের অস্ত্র না পাওয়ার পরেও তাদের হেফাজত থেকে অস্ত্র উদ্ধার করেছে মর্মে মামলার এজাহারে উল্লেখ করে।
পুলিশের এ ধরনের আচরণের কারনে ভুক্তভোগি পরিবার গুলো আজ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। পুলিশ নিরীহ সাধারন মানুষকে নিরাপত্তা দেয়ার বদলে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করছে। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষি পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানানো হয়।