দীর্ঘ দশ বছর পর জনসভায় যোগ দিতে আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে পুরো চট্টগ্রামে সাজ সাজ রব। নগরজুড়ে চলছে প্রচার-প্রচারণার কাজও। নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে চলছে জনসভার আয়োজন। নৌকার আদলে প্রস্তুত হচ্ছে মঞ্চ। যেখানে প্রায় ২শ অতিথি একসঙ্গে বসতে পারবেন। সেই মঞ্চ তৈরির কাজও প্রায় শেষের দিকে। অন্যদিকে মঞ্চের সামনে বীর মুক্তিযোদ্ধা, ভিআইপি ও নারীদের বসার জন্য পৃথক প্যান্ডেলের কাজও চলছে। ইতোমধ্যে পুরো আয়োজনের ১০০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
এদিকে সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৮ মার্চ পলোগ্রাউন্ড মাঠে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ বছর ৯ মাস পর একই মাঠে আবার ভাষণ দেবেন তিনি। এ উপলক্ষে শুধু পলোগ্রাউন্ড মাঠ নয়, নগরের টাইগারপাস, লালখানবাজার, কাজীর দেউড়ি, নিউমার্কট এলাকা তোরণে ছেয়ে গেছে। একই সঙ্গে চলছে সড়ক মেরামত, রাস্তার দুপাশে সৌন্দর্য্যবর্ধন ও পরিচ্ছন্নতার কাজ।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠ সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পলোগ্রাউন্ড মাঠের প্রবেশমুখ থেকে ভেতরের রাস্তার কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে। সারা মাঠে চলছে বাঁশ দিয়ে বেস্টনী তৈরির কাজ। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভেতরে বসানো হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ স্ক্যানিং মেশিন। একই সঙ্গে মাঠের চারপাশে বসানো হচ্ছে ৩৫টি ভ্রাম্যমাণ টয়লেট। ইতোমধ্যে পলোগ্রাউন্ড মাঠের চারপাশের প্রাচীরের সংস্কার ও রংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে পুরো মাঠ। মাঠের আশেপাশে এলইডি লাইটিং এর ব্যবস্থা করা হলেও ভেতরে এখনো মাইক বসানো ও সাউন্ড সিস্টেমের কাজ বাকি। গত ১৫ নভেম্বর থেকে পলোগ্রাউন্ড মাঠে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তা এখনও চলমান। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি সার্বক্ষণিক।
‘চল চল পলোগ্রাউন্ড চল’, ‘দলে দলে যোগ দিন সফল করুন’, ‘শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম, এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’, ‘নেত্রী তুমি জনতার, উন্নয়ন রুখে সাধ্য কার’, ‘পলোগ্রাউন্ড ময়দানে গণতন্ত্রের মানসকণ্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা’, ‘চট্টলবীরের চট্টলায় প্রিয় নেত্রী আপনাকে স্বাগতম’সহ নানা স্লোগানে ভরপুর ব্যানারে ছেয়ে গেছে পলোগ্রাউন্ড।
পলোগ্রাউন্ড মাঠের আশেপাশে পোস্তার পাড় উচ্চ বিদ্যালয়, আসমা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়, রেলওয়ে বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে পরীক্ষা চলছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ হবার কথা রয়েছে। তবে আগামী ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকবে বলে জানা গেছে।
মঞ্চ তৈরির কাজে নিয়োজিত সাহাবউদ্দিন ডেকোরেটার্সের স্বত্বাধিকারী হাজী মো. সাহাবউদ্দিন বলেন, আমার খুব ভালো লাগছে। প্রধানমন্ত্রী সবশেষ ২০১২ সালে এই পলোগ্রাউন্ড মাঠে জনসভা করেছিলেন। তখনও আমি জনসভার মঞ্চ তৈরি করেছিলাম। এবারো দায়িত্ব পেয়েছি। আমি বার বার মাঠে এসে সবকিছু তদারকি করছি। পুরো মাঠে আমার ডেকোরেশনের ১শ লোক কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভার মঞ্চটি হবে নৌকার আদলে। মঞ্চটির দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১৬০ ফুট। মঞ্চের উচ্চতা হবে সাত ফুট। এর মাঝখানে ৪০ থেকে ৮০ ফুটের মধ্যে দুইশ অতিথি বসবেন। মঞ্চের সামনে বীর মুক্তিযোদ্ধা, ভিআইপি ও নারীদের বসার জন্য পৃথক প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছে। পলোগ্রাউন্ড ও আশপাশ এলাকায় বসছে বিখ্যাত মাইক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কলরেডির ৩শ মাইক। মঞ্চের মাঝখানে ৮০ ফুটের এলইডি লাগানো হবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। নেতাকর্মীরা দিন-রাত প্রচারের কাজ সামলাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় নেতাকর্মীরা মাঠ পরিদর্শনেও আসছেন।
জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, আমাদের নেত্রী আসবেন। এটা আমাদের জন্য পরম আনন্দের। দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশ হচ্ছে পলোগ্রাউন্ডে। এখানে ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তাই নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও উজ্জীবিত। আমরা মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সবাই মিলে এই আয়োজন করছি। আমাদের যাবতীয় প্রচারের কাজ চলমান। সারাদিন ট্রাকে করে প্রচারণা ও লিফলেট বিতরণ করছেন নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি পলোগ্রাউন্ড মাঠে মঞ্চ থেকে শুরু করে সব কাজই প্রায় শেষের দিকে। মাইক বসানোর কাজও শেষ। এই সমাবেশে লাখ লাখ মানুষ ও নেতাকর্মীদের সমাগম হবে। তাই আমরা নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ে সভা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, আগামী ৪ ডিসেম্বর পলোগ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে ঘিরে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। এরমধ্যে পলোগ্রাউন্ড মাঠসহ পুরো চট্টগ্রাম মহানগরে আমাদের ৬ হাজার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। নিরাপত্তার বিষয়টি আরো জোরদার করতে বাইরে আরো দেড় হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এটা চট্টগ্রামের জন্য বড় উৎসব। নিরাপত্তার জন্য আমাদের আয়োজন ভাল। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) পুরো আয়োজনটাই তদারকি করছে। তাদের পরামর্শ মোতাবেক পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা, ড্রোন থাকবে। মোটকথা, পুরো শহর জুড়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা থাকবে।