তিন দিনব্যাপী এই ডায়াবেটিক মেলা ও সেমিনারের ঘোষণা করেন, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর চৌধুরী।
আজ (১০ ফেব্রুয়ারি) শুক্রবার সকাল ১১ ঘটিকার সময় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের একটি হলরুমে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি এই মেলার ঘোষণা দেন। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, সহ-সভাপতি আলহাজ্ব এস এম শওকত হোসেন, সহ-সভাপতি মিসেস আবিদা মোস্তফা, যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার লায়ন জাবেদ আফসার চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ এ এস এম জাফর, সদস্য প্রিন্সিপাল লায়ন মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, ডাঃ মোঃ পারভেজ ইকবাল শরীফ, মোঃ শহীদুল আলম, মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, এডভোকেট জয়শান্ত বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট আকতার হোসেন, ডাঃ নওশাদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের উদ্যোগে ডায়াবেটিক রোগীদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামীকাল ১১ ফেব্রুয়ারী থেকে ১৩ ২০২৩ ইং খুলশীস্থ চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে তিনদিন ব্যাপী ১১তম ডায়াবেটিক মেলা ২০২৩ অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি উক্ত মেলার আঙ্গিকে মেলার ১ম দিন (১১ই ফেব্রুয়ারী সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে,
১. “MANAGEMENT OF CHARCOT ARTHROPATHY” ২. “DIABETES RELATED COMPLICATIONS IN PREGNANCY” ৩. “DIABETES MELLITUS AND KIDNEY DISEASES” 8. “RECOMMENDATION FOR FASTING DURING RAMADAN FOR PEOPLE WITH DIABETES” বিষয়ক সায়েন্টিফিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে একমাত্র চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল ডায়াবেটিস রোগীদের সচেতন করার লক্ষ্যে বিগত ২০১১ সাল থেকে ব্যতিক্রমধর্মী ডায়াবেটিক মেলা শুরু করেন। মহামারী করোনার কারণে ২ বছর পর নব উদ্যমে এবারের ১১তম ডায়াবেটিক মেলায় ৪০টির মতো স্টল দিয়ে মেলাকে সাজানো হয়েছে।
“আসুন, পরিবারকে ডায়াবেটিস মুক্ত রাখি। ডায়াবেটিসের ভয়, সচেতন হয়ে করব জয়”
এই স্লোগানকে সামনে নিয়ে, সচেতনতা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে এই রোগ প্রতিরোধ করার জন্য এই মেলার আয়োজন।
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা অপারাপর রোগগুলোকে ত্বরান্বিত করে থাকে। তাই ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণের জন্য সচেতনতা খুবই প্রয়োজন। সেই সচেতনতার পদক্ষেপ হিসাবে আজকের এই ১১তম ডায়াবেটিক মেলা এবং এই মেলায় সকলের সার্বিক সহযোগিতা অবশ্যই প্রয়োজন।
উল্লেখ্য বর্তমানে বাংলাদেশে ১ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ এবং সারা বিশ্বে ৫৩ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত । বর্তমানে বিশ্বে প্রতি ১০ জনে ১ জন ডায়াবেটিস রোগী। এখনই প্রতিরোধ করা না গেলে ২০৩০ সালের মধ্যে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৮ কোটিতে পৌঁছাবে। এজন্য সম্প্রতি চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালকে ঢাকা বারডেম হাসপাতালের আদলে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে রূপান্তরিত করেছি এবং যাতে স্বল্প খরচে সকল রোগের চিকিৎসা অত্র হাসপাতালের মাধ্যমে প্রদান করা যায়। মেলায় বিভিন্ন ধরণের ডায়াবেটিস সম্পর্কিত খাবার, বই, ডায়াবেটিস মাপার মেশিন, পায়ের চিকিৎসার সরঞ্জাম সহ ইনসুলিন সম্পর্কে ধারণা, ইনসুলিন নেয়ার কৌশল জানা যাবে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল নিরলসভাবে পরিপূর্ণভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদানের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। সময়ের পরিক্রমায় ডায়াবেটিক হাসপাতাল এখন একটি পরিপূর্ণ হাসপাতাল। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি বর্তমান সময়ে একজন ডায়াবেটিক রোগীকেও চট্টগ্রামের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয় না কারণ ডায়াবেটিক হাসপাতালে আউটডোর-ইনডোর বিভাগ, আইসিইউ বিভাগে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
আমাদের চলমান সেবা সমূহ :
আউটডোর বিভাগ : ডায়াবেটিস থাইরয়েড ও হরমোন রোগ কিডনী রোগ কিডনী ডায়ালাইসিস বিভাগ হৃদরোগ •মেডিসিন বিভাগ •স্ট্রোক ও নিউরো কেয়ার বিভাগ ও ফিজিক্যাল মেডিসিন •প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ •চক্ষু •চক্ষু সাজারী ও দন্ত •চর্ম, যৌন ও এলার্জি •ফুট (পা) কেয়ার •খাদ্য ও পুষ্টি •জেনারেল ও অর্থোপেডিক সার্জারী অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার •সমাজকল্যাণ অত্যাধুনিক ডায়াগনষ্টিক ল্যাব •ফ্রি শিশু ডায়াবেটিক ক্লিনিক শিশু রোগ •ভ্যাকসিনেশন এক্সরে ও ইসিজি ইকোকার্ডিওগ্রাফী আল্ট্রাসনোগ্রাম তথ্য ও শিক্ষা কার্যক্রম রোগীসংযোগ •ফিজিওথেরাপী ফার্মেসী বিভাগ •সার্বক্ষণিক এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস •জীবন সদস্যদের বিশেষ সেবা বিভাগ •ফ্রাইডে সার্ভিস (৭.৩০-১২.০০ পর্যন্ত খোলা) সহ রোগী সেবা চলমান
আছে সাশ্রয়ী মূল্যে এক্সিকিউটিভ চেক আপ। উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত সেবাসমূহ ডায়াবেটিক ও নন-ডায়াবেটিক সকলেই, অতি স্বল্প মূল্যে বিশেষজ্ঞ কনসালট্যান্টদের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা নিতে পারে।
ইনডোর বিভাগ ঃ ২০০টি বেড, ৩৫টি ভিআইপি কেবিনসহ অভিজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, মেট্রন সহ সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের মাধ্যমে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।আছে অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার যেখানে নরমাল ডেলিভারী, সিজারিয়ান অপারেশন, জরায়ু অপারেশন সমূহ অভি ইনোকোলজি দ্বারা সম্পন্ন করা হয়।
ডায়াবেটিক ও নন-জায়াবেটিক রোগীদের চোখের ছানি অপারেশন সহ জটিল চোখের অপারেশনর অভিজ্ঞ চক্ষু সার্জনের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। ডায়াবেটিসের কারণে চোখে যে অটিলতা হয় (ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথী) তা নিরূপনে অত্যাধুনিক যন্ত্র সংযোজন করা হয়েছে।
• ডায়াবেটিক রোগীর পায়ের জটিল অপারেশন এবং জেনারেল ও অর্থোপেডিক সার্জারীো অভিজ্ঞ সার্জন দ্বারা করা হয়। এছাড়াও জেনারেল সার্জনের মাধ্যমে হার্নিয়া, পাইলস, গলব্লাডার সহ অন্যান্য অপারেশন অত্যন্ত যত্নের সাথে করা হয়।
এছাড়া ইনডোর বিভাগে অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদ দ্বারা প্রত্যেক ভায়াবেটিক রোগীর জন্য ৫ বেলা ব্যালেন্স ডায়েট তথা সুষম খাবার সরবরাহ করা হয়। যা ভায়াবেটিক রোগীর রোগ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে। যারা অতিরিক্ত ওজনাধিক্যে ভুগছেন এবং কম সময়ের মধ্যে ওজন কমাতে চান তাদের জন্য আছে আলাদা ডায়েটের ব্যবস্থা। চাকুরীজীবিদের কথা বিবেচনায় এনে “ওয়ান ডে সার্ভিস” চলমান। পাশাপাশি “শুক্রবার খোলা” সার্ভিস চালু আছে খুলশী, ইপিজেড, এনায়েত বাজার শাখায়। এক কথায় সপ্তাহের প্রতিদিন চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া ডায়াবেটিক রোগীদের দোরগোড়ায পর্যন্ত সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ১) এনায়েত বাজার শাখা, ২)ইপিজেড শাখা, ৩) অক্সিজেন শাখা এবং ৪) বহদ্দারহাট শাখা চালু আছে।
উল্লেখ্য যে, একমাত্র ভায়াবেটিক হাসপাতালেই সিসিইউ / আইসিইউ / এইচডিইউ বিভাগে স্বল্প খরচে সার্বক্ষণিক সেবা দেয়া হয়।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা দ্রুততম সময়ে নার্সিং ইনষ্টিটিউট, ৫০০ বেডের ডায়াবেটিক মেডিকেল কলেজ এবং জেলা উপজেলায় সাব-সেন্টার প্রতিষ্ঠা ।
সকল ধরণের সংকীর্ণতার উর্ধ্বে এসে আন্তরিকতার সাথে আমর আমাদের মানবসেবার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রথম দিন, আগামীকাল সকাল ১১ টায় ১১ তম ডায়াবেটিক মেলা ও সাইন্টিফিক সেমিনারের শুভ উদ্বোধন।
মেলার ২য় দিন ১২ ফেব্রুয়ারী বিকাল ৪টায় চিত্রাংকন প্রতিযোগীতা, সাংস্কৃতিক ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
৩য় দিন সমাপনী অনুষ্ঠান দুপুর ১২ ঘটিকায় হাসপাতাল প্রাঙ্গন।