আনারসের রসে ভরপুর বখতপুর বাসী, নৌকার পরাজয়।
মাসুদুল ইসলাম, দীর্ঘ ১৪/১৫ মাস আইনী লড়াই শেষ করে শেষ হাসি হাসলেন ফারুক উল আজম বি এস সি। নৌকা নিয়ে পরাজয়ের স্বাদ গ্রহণ করলেন হেভী ওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাবেক উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান সোলাইমান বি কম।
দীর্ঘ দিন নীরবে সরবে আইনী লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন ফারুক উল আজম। সাধারণ জনগন বখতপুরের নির্বাচনের আশা ছেড়ে স্বাভাবিক ভাবেই দিন যাপন করে যাচ্ছে। হঠাৎ করে হাই কোর্ট থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক উল আজম নির্বাচনের ফাইনাল ডিগ্রী নিয়ে আসেন। এর আগেও তিনি দুই বার ডিগ্রী নিয়ে আসেন কিন্তু সোলাইমান বি কম তার এগেস্টে আবারো কোর্টে আপিল করে পিছিয়ে দেন নির্বাচন কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফারুকই তার পক্ষে রায় নিয়ে বখতপুরের নির্বাচনের নিশ্চয়তা ফিরিয়ে দেন। ৫ দিনের প্রচরনার আলটিমেট সময়ে উভয় প্রার্থী কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েন। সকাল থেকে প্রচরণা ও সন্ধ্যা থেকে উঠোন বৈঠক ও কর্মী সমাবেশ চালিয়ে যান। উভয় সমাবেশে চলে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। সোলাইমান বি কম আওয়ামী লীগের নৌকা প্রার্থী হিসেবে উপজেলা জেলা পর্যায়ে হেভী ওয়েট প্রার্থী গণ বি.কম. সাহেবের পক্ষে প্রচরণায় নেমে পড়েন। পক্ষান্তরে ফারুক উল আজম সাধারণ জনগন সাথে নিয়ে নির্বাচনী যুদ্ধ চালিয়ে যান।
চলতে থাকে নানা জল্পনা কল্পনা। সাধারণ জনগন দেখতে থাকে শেষ হাসিটা কার হয়। সোলাইমান বলয়ের শক্ত প্রচরণায় ফারুক বলয় কিছুটা স্নায়ু চাপে থাকলেও তারা নীরব কৌশল অবলম্বন করেন। ফারুক বলয়ে দেখা যায় বৃদ্ধ যুবক যুবতী সহ সাধারণ জনগনের একটি নীরব সমর্থন। তাদের মধ্যে একটি আশা ছিল মানুষ যদি সুষ্ঠু ভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তাহলে ফারুক উল আজম ( আনারস) হয়ত বিশাল ভোটে জিততে পারে। সবাই ফারুক উল আজমের সাহসের তারিফ করে বলেন ফারুক শেষ পর্যন্ত লড়াই করে নির্বাচন পর্যন্ত নিয়ে এসেছে তার জন্যই সেই অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ফারুক উল আজম তার এডভোকেট ছোট ভাই শেষ পর্যন্ত তার সাথে লড়াই ও সাথে থেকে সাহস জোগানোর জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
খুব অল্প সময়ের মধ্যে উভয় প্রার্থী কোনো সাংঘর্ষিক ছাড়াই চমৎকার একটি নির্বাচনী প্রচরণা শেষ করেন। প্রচরণায় উভয় প্রার্থী একে আরেকের প্রার্থীর দোষ ত্রুটির ফুলঝুরি ছড়ালেও তার মধ্যেও অনেক রসালো রসালো কথা জনগণ উপভোগ করেন। শেষমেষ গত ২০ মার্চ গ্রাম পর্যায়ে ডিজিটাল বাংলার স্লোগান “গ্রাম হবে শহর ” এই কথার রেশ ধরে আধুনিক ই ভি এম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। তার ২ দিন আগে প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের ই ভি এম পদ্ধতি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০ তারিখ কোনো ঝামেলায় ছাড়াই বখতপুরের সেই কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন শেষ হয়। নির্বাচনে প্রশাসনের তৎপরতা ছিল চোখে পরার মত। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের মধ্যে বেশি ভোটার ছিল মহিলা ভোটার। শতকরা ৩৪ % ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। তথ্য মতে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক উল আজম আনারস মার্কা ভোট পায় সর্বমোট ১ হাজার ৫৭ ও পক্ষান্তরে হেভী ওয়েট প্রার্থী সোলাইমান বি কম নৌকা প্রতিক নিয়ে ১ হাজার ৭৪ ভোট পায়। ভোটার উপস্থিতি কম নিয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, যেহেতু শুধু চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ভোট গ্রহণ হচ্ছে কিন্তু মেম্বারদের ভোট নেই তাই উপস্থিতি একটু কম। মেম্বারী নির্বাচন সহ থাকলে প্রতিটি মেম্বার পদপ্রার্থীরা ভোটার নিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা চালায় সেহেতু ভোটার সংখ্যা বেশ থাকে। আরও একটি ব্যপার হচ্ছে, ই ভি এম পদ্ধতি হওয়ায় ভোটার দ্রুত ভোট দিয়ে কেন্দ্র ত্যাগ করতেছেন তাই লাইনে ভোটার সংখ্যা কম দেখায়। সর্বোপরি নির্বাচনী কর্মকর্তা, অতিরিক্ত প্রশাসন, নির্বাচনী কর্মকর্তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন সুন্দর একটি নির্বাচন আমরা দিতে পেরেছি এবং বখতপুর বাসী আমাদের আন্তরিক ভাবে সাহায্য করেন। গোলদার বাড়ি দায়িত্বে থাকা একজন এস আই জানান, আজকে আমাদের একটি হুইসিল ও মারতে হয়নি এবং সবাই আমাদের আন্তরিক ভাবে সহযোগিতা দেখান। ভোট গণনা শুরু হতে ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে ফলাফল আসতে থাকে,সেই সাথে সাথে বখতপুরের চেয়ারম্যানের চেয়ার পরিবর্তন হওয়ার আভাস পেতে থাকে জনগণ। সন্ধ্যার আগেই নিশ্চিত হয়ে যায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক উল আজমের বিজয়। বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দে মেতে ওঠে ফারুক সমর্থন গোষ্ঠী। তার ঘরের সামনে চলতে থাকে ঢোল বাধ্য বাজনা সহ পে পু বাঁশির শব্দ। ফলাফল ঘোষণা শুনে অশ্রু সিক্ত নয়নে ফারুক উল আজম ছুটে চলেন তার বাড়ি তালুকদার বাড়ির ঘরে তার বৃদ্ধ মাকে সালাম করতে। মা কে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান ফারুক উল আজম। তারপর ছুটে যান উপজেলা কেন্দ্রে, সেখান থেকে ফাইনাল ফলাফল নিয়ে তিনি আবার বাসায় ফিরে আসেন। গভীর রাত পর্যন্ত চলতে থাকে আনন্দ মিছিল। দলে দলে জনগণ ফুল হাতে ছুটে আসেন তার বাস ভবনে। সর্বশেষ তিনি, এই প্রতিবেদক কে বলেন, আমি আগামী দিন গুলোতে সোলাইমান বি কম সাহেব সহ বখতপুরের সকল জনগণকে সাথে নিয়ে বখতপুরের উন্নয়নে কাজ করে যাবো ইনশাআল্লাহ। দেখা যাক নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান ফারুক উল আজম তার দেওয়া ওয়াদা ও জনগণকে কতটুকু সন্তুষ্ট রাখতে পারে?