বেতার শ্রোতা সংগঠন সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশ এর সাবেক প্রধান উপদেষ্টা, একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, বিশ্ববন্ধনের প্রকাশক ও প্রধান উপদেষ্টা, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ৪৫মিনিটে অর্থাৎ ১৭ আগস্ট রাজধানী ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৯ বছর। মৃত্যুকালে তিনি ২ মেয়ে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আগামী শনিবার তার মৃত দেহ শেষকৃত্য সম্পাদনের জন্য গ্রামের বাড়ী চট্টগ্রামের রাউজান আবুরখীলে নেওয়া হবে।
এদিকে ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে বেতারভিত্তিক শ্রোতা সংগঠন সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। শোকবার্তায় ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ বেতারের সাবেক পরিচালক ড. মির শাহ আলম এবং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও রেডিও এক্টিভিস্ট দিদারুল ইকবাল বলেন, ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়ার অকাল প্রয়াণে দেশ, জাতি ও ক্লাবের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তিনি ছিলেন বহুগুণে গুণান্বিত একজন সাংগঠনিক মানুষ। ব্যক্তি জীবনেও ছিলেন অনেক শান্ত, ভদ্র, নম্র, বিনয়ী। তার কাছ থেকে আমাদের আরো অনেক কিছু শেখার ছিলো। এমন একজন ব্যক্তিকে হারিয়ে আমরা বাকরুদ্ধ। আমরা তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়ার মৃত্যুতে আরো শোক জানিয়েছে, ভয়েস অব ইন্দোনেশিয়া ফ্যান ক্লাব অব বাংলাদেশ (ভিওআই-এফসিবি), সিআরআই লিসনার্স ক্লাব অব বাংলাদেশ এবং বিশ্ববন্ধন। সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান তাছলিমা আক্তার লিমা, মহাসচিব ও বিশ্ববন্ধনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক নুর মোহাম্মদ; সিআরআই এর সাবেক বিশেষজ্ঞ ও ক্লাবের উপদেষ্টা আবাম ছালাউদ্দিন; ক্লাবের ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার উপদেষ্টা মো. সিরাজুল ইসলাম, দৈনিক একুশের বাণীর উপ-সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন আশরাফ, সমাজসেবক, সিআইপি আলহাজ্ব আবদুল হালিম, সরকারী, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, চট্টগ্রামের শিক্ষক ও বিশ্ববন্ধনের সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি শামসুদ্দিন শিশির, বিশ্ববন্ধনের সম্পাদক গাজী এম আল হারুনুর রশীদ, দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনজুমান আরা শিল্পী, ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদ হায়দার জীবন,
সমাজসেবক লায়ন ছোটন বড়ুয়া, সংগঠক ডা: আবুল ফজল, প্রচার সম্পাদক মো: ইয়াকুব আলী ও সদস্য লাবীব ইকবাল; সিআরআই লিসনার্স ক্লাব অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউল করিম বেলাল এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব মো: ওসমান গণি; গাজীপুর রেমাশ আন্তর্জাতিক বেতার শ্রোতাসংঘের সভাপতি মো: শহীদুল কায়সার লিমন; ফরিদপুর ওয়ার্ল্ড রেডিও লিসনার্স ক্লাবের সভাপতি এম এম গোলাম সারোয়ার; সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব চট্টগ্রাম শাখার মো: মোসলেহ উদ্দিন খান (জুয়েল), মোবারক হোসেন ভূঁইয়া, মো: শাহীন চৌধুরী,
মোহাম্মদ ইউছুফ ও মো: আজিম ভূঁইয়া; চট্টগ্রাম বাকলিয়া শাখার সভাপতি মো: রহমত উল্লাহ; সিলেট জেলা শাখার সভাপতি মো: চাঁন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মো: জসীম উদ্দীন; সিলেট শাহপরান শাখার সভাপতি মখলিছুর রহমান, সিলেট লাক্কাতুরা চা বাগান শাখার সভাপতি বিক্রম রায় ও সাধারণ সম্পাদক সুনিল দাস; কুমিল্লা শাখার সভাপতি মো: আব্দুল হালিম ও লালমাই শাখার সভাপতি সায়মা মজুমদার;
টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি মো: সোলায়মান হোসেন ও সজিব ভৌমিক; সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মো: আরিফুল ইসলাম; কিশোরগঞ্জ শাখার সভাপতি এম এ ছালাম; রাজশাহী শাখার সভাপতি মো: হারুন-অর-রশিদসহ রাজবাড়ী, সাতক্ষীরা, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় শাখার নেতৃবৃন্দ।
ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া ১৯৪৩ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম রাউজান উপজেলার ১২নং উরকিরচর ইউনিয়নের আবুলখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কৈলাশ চন্দ্র বড়ুয়া ও মাতা মল্লিকা রানী বড়ুয়া। তার দাদা সরৎচন্দ্র বড়ুয়া স্থানীয় মহাজন ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৭৫ সালে কলকাতার সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স থেকে অ্যাসোসিয়েটশীপ ডিপ্লোমা এবং ১৯৮২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক সুনীল কান্তির তত্ত্বাবধানে পদার্থবিদ্যায় গবেষণায় পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিলো “স্টাডিজ অব ইলাস্টিক কন্সট্যান্ট অব মেটালস অ্যান্ড অ্যালয়”। বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া ১৯৭৫ সালের ১ জুলাই কক্সবাজার কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি রাঙ্গুনিয়া ডিগ্রি কলেজ, বরিশাল সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ এবং চট্টগ্রামের সরকারি সিটি কলেজে বিভিন্ন মেয়াদে শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৪ সালের ৮ মার্চ তিনি অধ্যাপক হন। পরে তিনি একই বিভাগে ৩ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১০ সালের ৩০ জুন অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
তিনি বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের বৃহত্তর চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়াকে জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০২০ সালে একুশে পদক (জাতীয় এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার) প্রদান করে। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়ার হাতে ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, পুরস্কারের অর্থ এবং সম্মাননাপত্র তুলে দেন।