কথায় আছে সময়ের এক ঘা; অসময়ে বারবার। অসময়ে বারবার ঘা দিয়েও ফলাফল ইতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই সময় থাকতে কাজের প্রতি মনোযোগী হওয়া সবার জন্য মঙ্গল। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ব্যাংক খাতের সংকট আরো বাড়তে পারে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব। আমাদের ব্যাংক খাত দীর্ঘদিন ধরে নানামুখী সমস্যা মোকাবিলা করছে। এ কথা সবারই জানা থাকলেও সমাধানের জন্য তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। আমানত কমে গেলেও ব্যাংকসমূহে বাড়ছে ঋণপ্রবাহ। ফলে কোনো কোনো ব্যাংকে অর্থ সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে সরকার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে মোটা দাগে অর্থঋণ গ্রহণ করছে। বিশ্লেষকদের মতে, এতে ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা আরো কমতে পারে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ থেকে সরকার নতুনভাবে ঋণ নিয়েছে ৩ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। অথচ গত অর্থবছরে একই সময়ে ব্যাংক থেকে সরকার কোনো ঋণ গ্রহণ করেনি। বিপরীতে আগের নেওয়া ঋণের ৫ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। আমাদের জানা মতে, অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হচ্ছে ব্যাংক। এ খাতে সংকট তৈরি হলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। এ কথাও সত্য, ব্যাংক খাতের সময় এখন ভালো নয়। নাজুক বললেও বেশি বলা হবে না। দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনা ব্যাংক খাতকে আজ এ পর্যায়ে এনে দাঁড় করিয়েছে। ব্যাংক খাতের অর্থ সংকটের নেপথ্যে রয়েছে বিপুল পরিমাণে খেলাপি ঋণ এবং তা আদায়ে ব্যর্থতা। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা অনেক দিন ধরে আলোচিত হলেও এ ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ প্রতিফলিত হয়নি।
বাজেটের ঘাটতি পূরণে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে ব্যাংক ঋণ ও সঞ্চয়পত্র বিক্রি করবে। বিষয়টি অস্বাভাবিক নয়। সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের অর্থ সংগ্রহের পরিমাণ কম নয়। এখন নিচ্ছে ব্যাংক ঋণ। এ ঋণ যাতে ভবিষ্যতের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে না দাঁড়ায়, সরকারকে এখন থেকেই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা, ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশের অর্থনীতি। এমতাবস্থায় ব্যাংকগুলোর সার্বিক সক্ষমতা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। আমরা মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে ওঠা সরকারের পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব। আর এখানেই নিহিত হয়ে আছে আমাদের প্রত্যাশা।