বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব মতে, প্রতিবছর ১৪.১ মিলিয়ন মানুষ হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিতে ভোগে। সম্পৃক্ত চর্বি বা স্যাচুরেটেড ফ্যাট যেহেতু পুরোপুরি বাদ দেওয়া যাবে না কারণ শরীরের জন্য অল্প পরিমাণের সম্পৃক্ত চর্বি গ্রহণ করা উচিত। তাই আপনি যদি রোজ অতিরিক্ত পরিমাণের সম্পৃক্ত চর্বি যুক্ত খাবার খান তাহলে আজ থেকে সম্পৃক্ত চর্বি খাদ্যতালিকা থেকে কমিয়ে দিন। কারণ অতিরিক্ত চর্বি নিয়মিত খেলে লিভারে সমস্যা দেখা দেবে, এমনকি স্ট্রোকের ঝুঁকিও বেড়ে যাবে।
আমেরিকান হৃদরোগ এ্যাসোসিয়েশনের হিসেব অনুযায়ী সম্পৃক্ত চর্বি থেকে শতকরা ৫-৬ ভাগ ক্যালরি পাওয়া যায়। আর সুস্বাস্থ্যের জন্য ক্যালরি অতীব প্রয়োজনীয়। তাই খাদ্যতালিকা থেকে পুরোপুরি সম্পৃক্ত চর্বি বাদ না দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণে খেতে হবে। তাহলে শরীর ও স্বাস্থ্য উভয় ভালো থাকবে। জেনে নিন, কম পরিমাণে খেতে হবে এমন কয়েকটি সম্পৃক্ত চর্বি যুক্ত খাবার সম্পর্কে।
কেক : কেক স্বাদে অনন্য। জন্মদিন, হলুদ ও যেকোনো উৎসব কেক ছাড়া কল্পনা করা যায় না। কেক তৈরিতে মিষ্টি, চিনি, ক্রিম ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। সপ্তাহে প্রায় পাঁচ ছয়দিন কেক খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায়। কেক কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। তাই অতিরিক্ত কেক খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। সম্ভব হলে বাদামি চিনি ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর উপকরণ দিয়ে বাসায় কেক তৈরি করুন।
মাখন : মাখনের গন্ধ ও স্বাদ অসাধারণ। প্রতিদিন মাখন না খেতে চাইলেও কোনো না কোনো সুস্বাদু খাবারে মাখন দেয়া হয়। আর সেই সুস্বাদু খাবার খেলে দেহে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম মাখনে ৫১ গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে, ১৪.২ গ্রাম মাখনে ৭ গ্রাম সম্পৃক্ত চর্বি আছে। সকাল, দুপুর ও বিকেলের নাস্তায় মাখন ব্যবহার করা হয়। মাখন অল্প ও পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। কেননা এতে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে। অতিরিক্ত সম্পৃক্ত চর্বি খেলে শরীর মেদবহুল হয়ে যায় এবং শরীরে বিভিন্ন রোগব্যাধি বাসা বাঁধে।
প্রাণীজ চর্বি : প্রাণীজ চর্বিতে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি। গরু, মহিষ, মুরগি, খাসি ইত্যাদির মাংসে কম বা বেশি পরিমাণে চর্বি থাকে। এই চর্বি সর্বদা স্বাস্থ্যের পক্ষে অনুকূল হয় না। এগুলো স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তবে প্রাণীজ চর্বি খাওয়া একেবারে বন্ধ করা যাবে না। কারণ পরিমিত চর্বি স্বাস্থ্যের জন্য দরকার। তবে অতিরিক্ত চর্বি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রতি ১০০ গ্রাম প্রাণীজ চর্বিতে ৩৯ গ্রাম সম্পৃক্ত চর্বি রয়েছে।
মেয়নেজ : স্যান্ডউইচ, সালাদে মেয়নেজ পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যেকোনো সালাদকে সুস্বাদু করতে মেয়নেজের জুড়ি নেই। তাছাড়া স্যান্ডউইচ ও অন্যান্য খাবারের সাথে মেয়নেজ থাকলে স্বাদটা অসাধারণ লাগে। স্বাদে অনন্য হলেও মেয়নেজে একটি সমস্যা আছে। আর তা হলো এতে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি। যেহেতু এটি সুস্বাদু ও মজাদার সেহেতু সবাই অধিক পরিমাণে মেয়নেজ খেয়ে ফেলে। এই অতিরিক্ত খাওয়া আপাতদৃষ্টিতে সমস্যা না হলেও এটি স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তাই সালাদে অলিভ অয়েল, স্যান্ডউইচে কোটাজ চিজ ও মেয়নেজ প্রতিদিন দুই টেবিল চামচের বেশি খাওয়া ঠিক নয়। প্রতি ১০০ গ্রাম মেয়নেজে ৫১ গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ১৪.২ গ্রাম মেয়নেজে ৭ গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ৪.৭ গ্রাম মেয়নেজে ২ গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে।
চিজ : পিৎজ্জা কিংবা বার্গারে চিজ না থাকলে কি হয়? নিশ্চয় না। চিজ অত্যন্ত মজাদার। এটি খাবারকে সুস্বাদু করে তোলে। খাবার খেতে বসলে একসাথে অনেক চিজ খাওয়া হয়ে যায়। চিজ খাওয়ার কিছু উপকারিতা থাকলেও অতিরিক্ত চিজ খাওয়ার অপকারিতা রয়েছে। অতিরিক্ত চিজ খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি, স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়ে। তাই খাবারে অতিরিক্ত চিজ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং মাত্রাতিরিক্ত চিজযুক্ত খাবার খাওয়া বন্ধ করুন। কারণ প্রতি ১০০ গ্রাম চিজে ২১ গ্রাম সম্পৃক্ত চর্বি থাকে।
প্রক্রিয়াজাতকৃত মাংস : প্রক্রিয়াজাতকৃত মাংস যেমন সসেজ, ইটালিয়ান খাবার সালামি, বেকনে সম্পৃক্ত চর্বি অধিক পরিমাণে থাকে। প্রক্রিয়াজাত মাংসে প্রাণীজ চর্বির পরিমাণও বেশি থাকে। বাসায় কিংবা রেস্তোরাঁয় সসেজ, বেকন জাতীয় খাবার প্রতিনিয়ত খেলে বর্ণনাতীত ভাবে স্বাস্থ্যের আশঙ্কা বেড়ে যাবে। তাই প্রক্রিয়াজাতকৃত মাংস ও প্রাণীজ চর্বির পরিবর্তে মাশরুম, কাঁচা ছোলা, সেদ্ধ সবজি, টফু, শিম ও শিমের বিচি, মুরগির বুকের মাংস বেশি করে খান। তাহলে খাবার থেকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন গ্রহণ করতে পারবেন।
জিল নাট : কাঠবাদাম ও অন্যান্য বাদামে প্রচুর সম্পৃক্ত চর্বি রয়েছে। যেহেতু বাদাম খেলে অনেক উপকার হয় সেহেতু আপনি হয়তো উপকারী দিকগুলোর কথা মাথায় রেখে একসাথে অনেক বাদাম খেয়ে ফেলেন। এটা সবসময় মঙ্গলজনক নয়। কারণ এতে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ অধিক থাকে। ব্রাজিল নাটের পরিবর্তে আমন্ড, আখরোট, ম্যাকডামিয়াম, চীনাবাদাম, পেস্তাবাদাম খেতে পারেন।
শুকনো ও মিষ্টি স্বাদের নারকেল : আপনি কি নাস্তায় শুকনো ও মিষ্টি স্বাদের নারকেল খেতে ভালবাসেন? তাহলে জেনে রাখুন, তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়। শুকনো নারকেলের পরিবর্তে নরম নারকেল ও নারকেল তেল খেতে পারেন। কারণ শুকনো মিষ্টি জাতীয় নারকেলে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে।
অতিরিক্ত ভাজা খাবার : অনেকেই অতিরিক্ত ভাজা জাতীয় খাবার ছাড়া নাস্তা করার কথা ভাবতে পারে না। কারণ মুখরোচক ও অতিরিক্ত ভাজা খাবার খেতে তারা ভালবাসে। তবে জেনে রাখা ভালো, এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ভাজা খাবারে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে। সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যার নাস্তায় ভাজা খাবার, ফ্রায়েড চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ইত্যাদি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।