দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে নিম্নমুখী প্রবণতা এখনো বজায় রয়েছে। বিশেষত ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। পণ্যটির সাম্প্রতিক দরপতনের পেছনে ভারতের বাজারে তুলনামূলক কম দাম ও এর জের ধরে বাড়তি আমদানিকে চিহ্নিত করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তবে নভেম্বরের শেষ সময়ে এসে ভারতে বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। ফলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে বিদ্যমান এ মন্দাভাব বেশিদিন থাকবে না বলে মনে করা হচ্ছে।ভারত থেকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়। এ স্থলবন্দরের পাইকারি আড়তগুলো ঘুরে ভারতের ইন্দোর, ভেলোর ও নাসিক থেকে পেঁয়াজ আমদানি হতে দেখা যায়। সর্বশেষ কার্যদিবসে হিলির পাইকারি বাজারে (ট্রাকসেল) ইন্দোর থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে ৯-১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। অন্যদিকে ভেলোর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয় কেজিপ্রতি ১৪-১৫ টাকায়। চারদিন আগেও আমদানি করা এসব পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১৭-২১ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে চারদিনের ব্যবধানে হিলির পাইকারি বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ১১ টাকা।
পাইকারি পর্যায়ে দরপতনের প্রভাব পড়েছে পেঁয়াজের খুচরা বাজারেও। সর্বশেষ কার্যদিবসে স্থানীয় খুচরা বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে ১০-১৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। চারদিন আগেও আমদানি করা এসব পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১৮-২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। অর্থাৎ চারদিনে আমদানি করা পেঁয়াজের খুচরা দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ৮ টাকা কমেছে। দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩০-৩৫ টাকায়।স্থলবন্দরে দাম কম থাকার কারণে দেশের অন্যান্য জায়গায় পেঁয়াজের দাম নিম্নমুখী রয়েছে। গতকাল রাজধানীর পাইকারি বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে ১৫-১৭ টাকায় বিক্রি হয়। সপ্তাহ খানেক আগেও পণ্যটি কেজিপ্রতি ১৬-১৮ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে ঢাকায় এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১ টাকা কমেছে। অন্যদিকে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের দামও একই পরিমাণ কমেছে। গতকাল পণ্যটি বিক্রি হয় কেজিপ্রতি ২২-২৪ টাকায়। সাতদিন আগেও দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ২৩-২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।পেঁয়াজের সাম্প্রতিক দরপতনের পেছনে দুটি কারণ চিহ্নিত করেন হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক হারুন উর রশীদ হারুন। বণিক বার্তার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, অক্টোবরের শেষ নাগাদ দেশে উৎপাদিত নতুন মৌসুমের পেঁয়াজের আগাম সরবরাহের কারণে দাম অনেকটাই কমে যায়। একই সঙ্গে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার জের ধরে ভারতের বাজারেও পেঁয়াজের দাম অনেকটাই কমেছে। ফলে কম দামের সুযোগ নিয়ে দেশীয় আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছে। এর জের ধরে দেশের বাজারে চাহিদার তুলনায় বাড়তি পেঁয়াজ সরবরাহ হচ্ছে। এ পরিস্থিতি পাইকারি ও খুচরা— উভয় বাজারেই পেঁয়াজের দরপতনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
এদিকে ভারতের বাজার থেকে তুলনামূলক কম দামে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ সীমিত হয়ে আসতে শুরু করেছে। নতুন মৌসুমের শুরুতেও দেশটির পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১ আগস্ট মহারাষ্ট্রের লাসালগাঁওয়ের পাইকারি বাজারে প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজের দাম ছিল ১ হাজার ৩০ রুপি। সেপ্টেম্বরের শুরুতে প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজের দাম ৭৮০ রুপিতে নেমে আসে। এক মাসের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়ে দাঁড়ায় কুইন্টালপ্রতি ৮৭৫ রুপিতে।গত ১ নভেম্বর লাসালগাঁওয়ের পাইকারি বাজারে প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১ হাজার ১৯ রুপিতে। সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার জের ধরে মাসের ১৫ তারিখে পণ্যটির দাম কমে দাঁড়ায় কুইন্টালপ্রতি ৮৫১ রুপিতে। তবে ২০ তারিখেই প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজের দাম ফের বেড়ে ১ হাজার ২০০ রুপিতে উঠেছে। এ কারণে আগামী দিনগুলোয় দেশীয় আমদানিকারকদের বাড়তি দামে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ কমছে বলে মনে করছেন হিলির আমদানিকারকরা। ফলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বর্তমানের তুলনায় বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন হিলি প্রতিনিধি হালিম আল রাজী