জিয়াউর রহমান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড স্থাপন করেছিলেন। ১৯৭৯ সালে জেএসএস নেতা সন্তু লারমাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং রাষ্ট্রদ্রোহী সশস্ত্র সন্ত্রাসের দায়ে গ্রেফতার করা হলেও শান্তি স্থাপনের শর্ত দিয়ে সন্তু লারমাকে তিনি মুক্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু জিয়ার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ত্রিপুরার গোপন আস্তানায় ফিরে গিয়ে সন্তু লারমা আবারো জুম্মল্যান্ড আদায়ের গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে।
ভারতের বিএসএফ সীমান্তে হামলার জন্য শান্তিবাহিনীকে সর্বাত্মক সাপোর্ট দিয়ে যায়। শুধু বাংলাভাষীরাই নয়, উপজাতীয় নেতা উরিমোহন ত্রিপুরা, চাবাই মগ, চুনীলাল চাকমা, বঙ্কিম দেওয়ান, শান্তিময় দেওয়ান, কিনামোহন চাকমা, রেমন্ড লুমাই, মেজর পিওরসহ অনেক উপজাতি নেতাকে বাংলাদেশের পক্ষে থাকার জন্য দুলাগোষ্ঠী (দালাল) আখ্যা দিয়ে তাদেরকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল, সন্তু লারমার নির্দেশে।
রাঙ্গামাটির মুক্তিযোদ্ধা ও যুব ইউনিয়ন নেতা সাংবাদিক আব্দুল রশিদ, লংগদু উপজেলার চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ সরকারসহ হাজার হাজার বাঙালি নর-নারী-শিশু-কিশোর আবার বৃদ্ধ বণিতা পাহাড়ে খুনী শান্তিবাহিনীর ব্রাশফায়ারে এবং আগুনে পুড়ে জীবন দিয়েছেন। তাদের ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দিয়েছে। ধান-ফসল-গরু-ছাগল তারা লুট করেছে। এরপরও সন্তু বাবুরা আমাদের বীর সেনাবাহিনী, পুলিশ আনসার ও বিডিআরদের সাথে গেরিলা যুদ্ধে পরাস্ত হতে বাধ্য হয়।
এক এক করে তারা পালাতে শুরু করে, দল ছেড়ে সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ শুরু করে।।
শান্তিবাহিনীর শক্তি একেবারে শেষ হয়ে যাবার পথে এমনিতর করুণ অবস্থায়, শান্তিবাহিনীর অবস্থা যখন খুবই কাহিল, পরাজয় অবধারিত, ভারত সরকারও আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে দ্বিধা করছিল। ঠিক তখনই বিএনপি সরকার (১৯৯১-১৯৯৫) একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সন্তু লারমার কৌশলের কাছে হেরে যায়।।
সেটা ছিল তথাকথিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি অথবা অস্ত্রবিরতি চুক্তি মেনে নেয়া। যুদ্ধবিরতি বা অস্ত্রবিরতির কথা বলে ক্ষয়িষ্ণু প্রায় অবলুপ্ত লারমা বাহিনী দেশে-বিদেশে বিএনপি সরকারের সাথে আলোচনার দাবী তুলে বেকায়দায় ফেলে দেয়।।
সেদিন যদি যোগাযোগমন্ত্রী কর্নেল অলির নির্দেশে (পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান) অস্ত্রবিরতি না মেনে মুমুর্ষূ অবস্থায় লারমা বাহিনীকে পর্যুদস্ত করা হতো, তাহলে আর এই শান্তি চুক্তি করার দরকার হতো না। তবে শান্তিচুক্তির পর এর বিরুদ্ধে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ঐতিহাসিক লংমার্চ পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি ও পাহাড়ের প্রকৃত চিত্র পেতে বিশ্ববাসীর অনেক সুবিধা হয়েছিল।।
আন্তর্জাতিক মহলও পার্বত্য চট্টগ্রাম এ উপজাতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সন্ত্রাসযুদ্ধ বিষয়ে সম্যক অবগত হতে পেরেছিল সেই লংমার্চ ঘোষণা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের করণীয় কি??
পাবর্ত্য চট্টগ্রামের প্রকৃত প্রেক্ষাপট বর্তমান সরকারের কাছে অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। যদিও বা আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা কালে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি নিয়ে আলাদা একটি ধারণা পোষণ করতো। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদিবাসী ইস্যু নিয়ে জাতিসংঘে সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি ঢাকায় বিদেশী কূটনীতিদেরকে ডেকে সরকারের প্রকৃত অবস্থান প্রকাশ করেছেন। এতে করে পার্বত্যবাসী শান্তিপ্রিয় বাঙালি এবং উপজাতীয় জনগোষ্ঠী বর্তমান সরকারের প্রতি বিশেষভাবে আস্থাভাজন।।
তথাকথিত শান্তিচুক্তি পূর্ণবাস্তবায়নের আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে যদি সবগুলো বেআইনী অস্ত্র-শস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার না করা হয় এবং রাষ্ট্রদ্রোহী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করা হয় তবে জনসংহতি সমিতির এবং ইউপিডিএফ-এর বন্দুকযুদ্ধের মাঝখানে পড়ে বহু পার্বত্যবাসীকে অকালে জীবন হারাতে হবে- তাতে কোন সন্দেহ নেই। ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মূল কনসেপ্ট তথা পাহাড়ে ঐক্য, শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা ছাড়া সন্তু লারমার হাতে সমগ্র ক্ষমতা ছেড়ে দিলে পার্বত্য চট্টগ্রাম শুধুমাত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী জুম্মল্যান্ড বাস্তবায়নের রূপই পাবে বলে আমাদের গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা আছে।।
বর্তমান সরকার সেই সুযোগ কোন পাহাড়ী দল বা উপদলকে দিবে না বলেই দেশবাসীর একান্ত বিশ্বাস।।
সবাইকে ধন্যবাদ।।
আজমীর হোসাইন