ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডিপিডিসি)-এর তদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ড বৈদ্যুতিক কোনও কারণে হয়নি। এছাড়াও পুরান ঢাকার রাস্তায় বৈদ্যুতিক লাইনের নিরাপত্তার জন্য ইনসুলেটেড তার স্থাপন এবং কোনও কোনও জায়গায় মাটির নিচে তার প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। এই ঘটনায় ডিপিডিসির প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও জানানো হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার বিষয়ে বলা হয়, সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে-চুড়িহাট্টা মোড়ে অগ্নিদগ্ধ ভবনের সামনে তিনটি বৈদ্যুতিক খুঁটি ও খুঁটিতে অবস্থিত এলটি তার ও ১১ কেভি অ্যারিয়াল ক্যাবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশের এলাকায় অবস্থিত তিনটি ট্রান্সফারমার অগ্নিদগ্ধ হয়নি এবং ভাল অবস্থায় পাওয়া গেছে, যা চালু করার উপযোগী অবস্থায় আছে।
ক্ষতির বিষয়ে আরও বলা হয়, আগুনের কারণে ডিপিডিসির তিনটি বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৬ স্প্যান (এক খুঁটি থেকে অন্য খুঁটি পযন্ত তারকে স্প্যান বলে) ওয়াপস তারের এলটি লাইন পুড়ে গেছে। ৩ স্প্যান ১২০ মিটার ১১ কেভি অ্যারিয়াল ক্যাবল পুড়ে গেছে। খুঁটি ও তার মিলিয়ে তাদের মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা।
ডিপিডিসি সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটির সদস্যরা প্রতিবেদনে দুটি সুপারিশ করেছেন।
দ্রুত পুরান ঢাকা হতে ক্ষুদ্রশিল্প, প্লাস্টিক কারখানা ও কেমিক্যালের গুদাম অপসারণ করা প্রয়োজন। অন্যদিকে পুরান ঢাকার রাস্তা খুবই সরু হওয়ায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থার অধিকতর নিরাপত্তার জন্য ওভারহেড বৈদ্যুতিক লাইনগুলো ইনসুলেটেড তার দিয়ে এবং কিছু কিছু স্থানে ভূ-গর্ভস্থ ক্যাবলের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন।
এই বিষয়ে ডিপিডিসির পরিচালক (অপারেশন) হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমাদের বেশিরভাগ তারই নরমাল অর্থাৎ বাড়তি কোনও আবরণ থাকে না। ইনসুলেটেড তার হচ্ছে এক ধরণের আবরণযুক্ত তার, যেটি আরও বেশি নিরাপদ। তাই পুরান ঢাকার সরু গলির কথা চিন্তা করেই তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে এই সুপারিশ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই তার সাধারণত পাওয়া যায় না। আমরা বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছি।’ পুরান ঢাকার বিষয়ে আলাদা একটি প্রকল্প নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে, ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় আগুন লাগার কারণ হিসেবে স্থানীদের অনেকে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের কথা বলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান। এরপর ডিপিডিসির প্রধান প্রকৌশলীর দফতরের এনওসিএস সেন্ট্রালের প্রধান প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অন্য দুই সদস্য হলেন গ্রিড অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্সের প্রধান প্রকৌশলী ছারোয়ারে কায়নাত মো. নূর এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. বেলায়েত হোসেন।
কমিটিকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে প্রতিবেদন, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধের সুপারিশ ও আরও কোনও সুপারিশ থাকলে তা উল্লেখ করে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।