মসজিদে হারামের খতীবের খুতবার আলোকে আমার বয়ান। আমাদের সমাজে মানহানিকর বা বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের বেশ ছড়াছড়ি। ইসলাম প্রচার করতে গিয়েও অনেক বক্তা সীমাহীন ও বাধাহীনভাবে এ কাজ করে যাচ্ছেন। কারো সমালোচনা করার ইসলামী পদ্ধতি তারা অনুসরণ করছেন না।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
“আর আমার বান্দাদের বলুন- তারা যেন সেসব কথা বলে যা সর্বোৎকৃষ্ট। নিঃসন্দেহ শয়তান তাদের মধ্যে বিরোধের উসকানি দেয়। শয়তান মানুষের জন্য নিশ্চয় প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা আল-ইসরা, আয়াত ৫৩)
“তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়।” (সূরা আত-তাওবা, আয়াত ১২৮)
“আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করুন আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত ১৫৯)
“মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।” (সূরা হুজুরাত, আয়াত ১২)
মু’মিনের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টি, অতএব কারো সমালোচনা করতে হলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) শিখানো পদ্ধতিতে করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানতে দয়াকরে শুনুন মসজিদে হারামের খতীব শাইখ সাউদ আশশুরাইমের খুতবা। যারা আরবী জানেন না, তারা আমার আলোচনা শুনতে পারেন।
ঘৃণা-বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য পরিহার করুন।
কল্যাণ হবে দেশ ও জাতির।
কল্যাণ হবে ইসলামের। মোহাম্মদ শহিদুল হক।
সমুদ্রের মাঝখানে এক জাহাজ প্রচন্ড ঝড়ের মধ্যে পরে লন্ডভন্ড হয়ে গেল। সেই জাহাজের বেঁচে যাওয়া এক যাত্রী ভাসতে ভাসতে এক নির্জন দ্বীপে এসে পৌছালো। জ্ঞান ফেরার পর প্রথমেই সে আল্লাহর কাছে প্রাণখুলে ধন্যবাদ জানালো তার জীবন বাঁচানোর জন্যে। প্রতিদিন সে দ্বীপের তীরে এসে বসে থাকতো যদি কোনো জাহাজ সেদিকে আসে এই আশায়।কিন্তু প্রতিদিনই তাকে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হতো।সে সমুদ্রতীরে তার জন্যে একটা ছোট ঘর তৈরী করে ফেললো। সমুদ্রের মাছ ধরে এবং বন থেকে ফলমূল শিকার করে খেয়ে সে বেঁচে থাকলো।
সে একদিন খাবারের খোঁজে বনের মধ্যে গেল। বন থেকে সে যখন ফিরে এলো তখন দেখলো যে তার রান্না করার চুলা থেকে আগুন লেগে পুরো ঘরটিই ছাই হয়ে গিয়েছে এবং তার কালো ধোঁয়ায় আকাশ ভরে গিয়েছে।লোকটি চিৎকার করে উঠলো,
‘হায় আল্লাহ,তুমি আমার ভাগ্যে এটাও রেখেছিলে!’
পরদিন সকালে এক জাহাজের আওয়াজে তার ঘুম ভাঙলো।জাহাজটি সেই দ্বীপের দিকে তাকে উদ্ধার করার জন্যই আসছিলো। সে অবাক হয়ে বললো,
‘তোমরা কিভাবে জানলে যে আমি এখানে আটকা পরে আছি!’
জাহাজের ক্যাপ্টেন জানালো,‘তোমার জ্বালানো ধোঁয়ার সংকেত দেখে।
কোন কোন সময় বিপদ ও সুখের বার্তা নিয়ে আসে। তাই আমাদের উচিত বিপদে ধৈর্য ধারণ করা।
“যে ব্যাক্তি বিপদে ধৈর্য্যধারন করতে পারবে সে কখনো সফলতা থেকে বঞ্চিত হবেনা হয় তবা সফলতা আসতে একটু সময় লাগতে পারে”—হযরত আলী (রাঃ)
ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায় যে, অনেক সাহাবি, তাবেঈন, তবেতাবেঈন, বুজুর্গ ও ঈমানদার লোকেরা নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখেছেন। ইসলামের বিধান হলো, নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখা হলো, বাস্তবে দেখার মতো। কেননা, শয়তান কখনও নবীজির আকৃতি ধারণ করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে নবী করিম (সা.) হাদিসে ইরশাদ করেছেন, ‘যে আমাকে স্বপ্নে দেখল, শিগগিরই সে আমাকে জাগরণে দেখবে অথবা সে যেন আমাকে জাগরণেই দেখল আর শয়তান আমার রূপ ধরতে পারে না।’ –সহিহ বোখারি : ১১০, সহিহ মুসলিম : ২২৬৬।
এখন আমাদের জানা দরকার, নবী করিম (সা.) কেমন ছিলেন। কোন আকৃতিতে তাকে স্বপ্নে দেখা যাবে। শামায়েলে তিরমিজির বর্ণনায় নবী করিম (সা.)-এর আকার-আকৃতির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এভাবে—
তিনি ছিলেন মানানসই দীর্ঘদেহি। তার গায়ের রঙ দুধে-আলতায় মিশ্রিত গোলাপের মতো। গোলগাল হালকা-পাতলা চেহারা, ঘন দাড়ি ও মুখগহবর প্রশস্ত। ঘাড় যেন রৌপ্যপাত্রে রক্তঢালা। কেশরাশি সামান্য কোঁকড়ানো-বাবরি, মেদহীন সুঠাম দেহ। হাত-পায়ের আঙুলগুলো শক্তিশালী ও মজবুত। বাহু, কাঁধ ও বুকের ওপরে পশমবিশিষ্ট। অতিরিক্ত পশমমুক্ত শরীর। বুকে নাভি পর্যন্ত পশমের দীর্ঘ রেখা। দুই কাঁধের মাঝখানে মোহরে নবুওয়ত। মাথা ও অস্থিবন্ধনীগুলো কিছুটা বড়সড়, প্রশস্ত ললাট। চক্ষুগোলক ডাগর ডাগর, চোখের মণি কুচকুচে কালো। পাপড়ি লম্বাটে, ভ্রুযুগল অমিলিত প্রশস্ত ঘন। ভ্রুদ্বয়ের মাঝখানে প্রস্ফুটিত একটা রগ, যা রাগের সময় স্ফীত হতো। উন্নত চকচকে নাসিকা। দাঁতগুলো বিযুক্ত রুপার গাথুনি। এক কথায় তার অপূর্ব রূপমাধুর্য বর্ণনাতীত। যে কেউ তাকে প্রথম দর্শনে হতভম্ব হয়ে পড়ত। সে একথা বলতে বাধ্য- জীবনে এমন সুন্দর মানুষ দ্বিতীয়জন দেখিনি।’ নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতে হবে ঈমান অবস্থায়। পূর্ণ ইসলাম পরিপালনকারী ও সুন্নতের অনুসারীরাই কেবল তাকে দেখতে পাবেন। এ ছাড়া কেউ নবী করিম (সা.) কে দেখার দাবী করলে সেটা মিথ্যা দাবী হবে।
মনে রাখতে হবে, যে যাকে ভালোবাসে, তার সঙ্গ লাভে নিজেকে ধন্য মনে করে। তার চালচলন, ভাবভঙ্গি ও বচনাচার অনুকরণ করে। সে নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখে। সবসময় তার সাক্ষাতের প্রতীক্ষায় থাকে। এভাবেই যুগে যুগে হাজারো নবী প্রেমিক নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখেছেন। তাকে স্বপ্নে দেখেছিলেন- ইমাম আবু হানিফা, আবদুর রহমান জামি, জালালুদ্দীন রুমি, শেখ সাদি, সাদুদ্দীন তাফতাজানি। হজরত শাহ ওলিউল্লাহ দেহলভি, আবদুল আজিজ, শায়খ জাকারিয়াসহ অসংখ্য নবী প্রেমিক (রহ.)। বর্ণিত আছে, ইমাম মালেক (রহ.) অধিকাংশ রাতেই নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতেন।
নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতে হলে করণীয় হলো- সত্যিকারের নবী প্রেমে মাতোয়ারা হওয়া, তার সুন্নত সমূহ পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে উদ্গ্রীব হওয়া। তাহলেই কেবল নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখা সম্ভব।কোনো কোনো আলেম বলেছেন, নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতে হলে, বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। অজুসহকারে পবিত্র হয়ে বিছানায় শয়ন করা। শেষ রাতে উঠে তওবা করা। তবে সর্বাগ্রে যেটা মনে রাখা দরকার সেটা হলো- ফরজ ইবাদত তার হকসহ পরিপূর্ণভাবে পালন করেই তবে নফল ইবাদতে মনোনিবেশ করা।
সারাবিশ্ব থেকে মুসলিম উম্মাহ কাবা শরিফ ও প্রিয় নবির রওজা জেয়ারতের উদ্দেশ্যে পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় একত্রিত হয়। ওমরা ও হজ ছাড়া দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে ভিশন ২০৩০-এর অংশ হিসেবে সৌদি আরব হজ ও ওমরা কর্তৃপক্ষ মক্কা-মদিনায় ‘স্মার্ট সিটি’ তৈরির পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
আল্লাহর মেহমানদের জন্য হজের সময় মক্কা-মদিনায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে স্মার্ট ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়েছে।
হাজি ও ওমরা পালনকারীদের চলাচল ও শীতল পরিবেশের সুবিধার্থে মক্কা মুকাররমা ও মদিনা মুনাওয়ারায় বেশি বেশি ছায়াদার গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সে সঙ্গে থাকবে পানির ঝরণা ও পরিবেশ শীতলকারী সরঞ্জাম।
হজ ও ওমরা পালনকারীর জন্য যে কোনো প্রয়োজনে তাৎক্ষনিক সমাধানের বিষয়টিও রয়েছে ‘স্মার্ট সিটি’ প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্য তালিকায় ।
এছাড়াও ‘মিকাত’-এর স্থানকে আরো সুন্দর, উন্নত ও সুপরিসর করার পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। অসুস্থ, অক্ষমদের জন্য আলাদা করে পর্যাপ্ত টয়লেটসহ অন্যান্য সেবা প্রদানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
সৌদি আরব হজ কর্তৃপক্ষের এ উদ্যোগ হজ-ওমরা পালনকারী ও দর্শণার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলে মিলেই এই দেশ। এ দেশের মাটিতে সবার সমান অধিকার। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য বলেছেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব এডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ লক্ষ্যে সরকার নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মন্ত্রী চট্টগ্রাম হোটেল রেডিসন ব্লু, তে UNDP Bangladesh & Save and Serve Foundation Av‡qvwRZ “Fostering Peaceful and Inclusive Society and the Role of Religious Leaders and Actors” w বিষয়ক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি হলো ধর্ম নিরপেক্ষতা। এর অর্থ হলো প্রতিটি ধর্মের লোক নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে এবং রাষ্ট্র সবার ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করবে। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসিকতা ও মানবিকতা প্রদর্শন করে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন, যা বিশ্বে বিরল। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো বেশি সক্রিয় হয়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি আহ্বান জানান।
সভায় জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের জেনোসাইড প্রতিরোধ বিষয়ক উপদেষ্টা অফধসধ উরবহম, সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিদগণ অংশগ্রহণ করেন।
মৌলিক যে পাঁচটি ভিত্তির উপর ইসলাম দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্যে সালাত দ্বিতীয়।মুল স্তম্ভ বা বুনিয়াদ ছাড়া যেমন তার ভিত্তি কল্পনা করা যায় না। তেমনিভাবে নামাজ ছাড়া ইসলামের মৌলিকত্ব অসম্ভব। ইসলামের মৌলিক স্তম্ভগুলোর মধ্যে নামাজ অন্যতম। ঈমানের পর ইসলামে নামাজের চেয়ে গুরুত্ব অন্য কোনো ইবাদতে প্রদান করা হয়নি। পবিত্র কোরআন শরিফে ৮৩ বার নামাজের আলোচনা এসেছে। নামাজ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে নবী! আমার বান্দাদের মধ্যে যারা মুমিন তাদের বলুন, নামাজ কায়েম করতে।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৩১)
আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১১০)
তিনি আরো ইরশাদ করেন, ‘তোমরা রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৪৩)
আলোচ্য আয়াতে জামাতে নামাজ আদায়ের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সাহাবায়েকেরাম নামাজ ত্যাগকারীকে কাফির মনে করতেন। আর জামাত ত্যাগকারীদের মনে করতেন মুনাফিক।
আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.)-কে এ কথা বলতে শুনেছি, “আচ্ছা তোমরা বল তো, যদি কারোর বাড়ির দরজার সামনে একটি নদী থাকে, যাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার করে গোসল করে, তাহলে তার শরীরে কি কোনো ময়লা অবশিষ্ট থেকে যাবে?” সাহাবীগণ বললেন, ‘(না,) কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না।’ তিনি বললেন, “পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উদাহরণও সেইরূপ। এর দ্বারা আল্লাহ পাপরাশি নিশ্চিহ্ন করে দেন।’ (বুখারি, হাদিস নং: ৫২৬)
আল্লাহ তাআলা কোরআনে আরো ইরশাদ করেন, ‘আমাকে স্মরণ করো আমি তোমাকে স্মরণ রাখবো।’ (সুরা বাকারাহ, আয়াত: ১৫২)
আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৪৫)
আল্লামা শানকিতি বলেন, ধৈৰ্য্যের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করা সুস্পষ্ট বিষয়। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলে এক সময় তার উপর আল্লাহ্র রহমত নেমে আসবে এবং সে সফলকাম হবে। কিন্তু নামাজের মাধ্যমে কীভাবে সাহায্য প্রার্থনা করবে? এর উত্তর হচ্ছে, সালাতের মাধ্যমে অন্যায় অশ্লীল কাজ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। আল্লাহ্ বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে দূরে রাখে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)
রাসুল (সা.) যখন কোনো সমস্যায় পড়তেন বা চিন্তাগ্রস্ত হতেন তখনই তিনি সালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ: ৫/৩৮৮)
সুতরাং যে কোনো বিপদাপদে ও সমস্যায় পড়লে আল্লাহর সাহায্য ও অনুগ্রহের প্রত্যাশায় নামাজে মগ্ন হওয়া চাই। পাশাপাশি পারিপার্শ্বিকভাবেও চেষ্টা-কোশেশ করতে হবে। এতে আল্লাহর সাহায্য ও সহযোগিতা মিলবে সহজে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
রোগীকে দেখতে যাওয়া সুন্নত। যে ব্যক্তি রোগীকে দেখতে যায়, ফেরেশতারা তার জন্য সারা দিনমান দোয়া করতে থাকে। হাদিস ও রাসুল (সা.)-এর সিরাতের আলোকে দেখা যায়, অমুসলিম রোগীকে দেখতে যাওয়াও সুন্নাত। প্রিয় নবী (সা.) অমুসলিম রোগীদের দেখতে যেতেন। তাদের সেবা-শুশ্রুষা করতেন এবং তাদের ঈমানের দাওয়াত দিতেন।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, ইহুদি এক ছোট বালক রাসুল (সা.)-এর খেদমত করত। সে অসুস্থ হলে, তখন মহানবী (সা.) তাকে দেখতে যান। তখন তিনি তার মাথার দিকে বসে তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ করো! তখন সে তার পিতার দিকে দেখল। পিতা বললেন, তুমি আবুল কাসেমের অনুসরণ করো, ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করলো। তখন রাসুল (সা.) এই বলে বের হলেন, ‘আল্লাহর শোকর, যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন।’ (বুখারি, হাদিস নং: ১২৫৬)
এভাবে তিনি মৃত্যুর সময় তাদের দেখতে যেতেন। তাদের কাছে গিয়ে ইসলামের ও ঈমানের দাওয়াত দিতেন। জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করতেন।
ইসলামে মানুষের পাপ ও পঙ্কিলতা মোচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল ও পরিভাষা হলো তাওবা। তাওবা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তার শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি ও প্রতিনিধি মানুষের জন্য বড় নেয়ামত, করুণা ও দয়া।
মুসলিম সমাজে তাওবা ব্যাপক পরিচিত বিষয় হলেও তাওবা কেন অপরিহার্য, কী এর গুরুত্ব ও কীভাবে তাওবা করতে হয় সে সম্পর্কে অনেকের স্পষ্ট ও সঠিক ধারণা নেই।
তাওবা শব্দের আক্ষরিক অর্থ ফিরে আসা ও প্রত্যাবর্তন করা। পারিভাষিক অর্থে তাওবা হলো, শরিয়ত বহির্ভূত নিষিদ্ধ কাজ ত্যাগ করে ইসলাম নির্দেশিত কাজ করার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ফিরে আসা এবং আল্লাহর বিধানের ওপর অটল-অবিচল থাকা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম ও অমুসলিম সবাইকে তাওবা করার আদেশ দিয়ে আহ্বান করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমার সকলেই আল্লাহর কাছে তাওবা করো; যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা আননূর, আয়াত: ৩১)
আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো; খাঁটি তাওবা।’ (সুরা আত-তাহরিম, আয়াত:০৮)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘ইয়া আইয়্যুহান নাসু তুবু ইলাল্লাহি’ অর্থাৎ হে মানবজাতি! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো—এর অর্থ হলো- আল্লাহর নিকট ফিরে আসো, প্রত্যাবর্তন করো।’ (মুসলিম, হাদিস নং: ৭০৩৪)
বিশেষজ্ঞ আলেমগণ সর্বসম্মতিক্রমে বলেন, সর্বদা তাওবা করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ওয়াজিব। ইমাম কুরতুবি (রহ.) ও ইমাম নববি (রহ.) এই ঐক্যমতের কথা তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
তাওবা জান্নাত প্রাপ্তি ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও ভালোবাসা লাভের একটি বড় সুযোগ ও উপায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ বেশি বেশি তাওবাকারীকে ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২২)
আল্লাহর ভালোবাসার পাথেয় হলো তাওবা। আর এই তাওবা হতে হবে শুধু আল্লাহর জন্য। আমরা জানি যে, কর্মের ফলাফল নির্ভর করে নিয়তের ওপর। সুতরাং তাওবা আল্লাহর জন্য হলে আমরা তাওবার কাঙ্ক্ষিত ফজিলত লাভ করতো পারবো। তাওবা কীভাবে করতে হয়? মহান আল্লাহর হক বা অধিকার সম্পর্কিত হলে তিনটি শর্ত বাস্তবায়ন করলেই তাওবা হয়ে যাবে।
এক. পাপ পুরোপুরিভাবে ছেড়ে দিতে হবে।
দুই. পাপের জন্য অনুশোচনা করতে হবে, লজ্জিত ও অনুতপ্ত হতে হবে।
তিন. ঐ পাপ দ্বিতীয়বার না করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে, দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। এবং এর ওপর অটল ও অবিচল থাকতে হবে। আর মানুষের হক বা অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হলে আরও একটি শর্ত যুক্ত হবে, তা হলো সেই ব্যক্তি মানুষের কাছে মাফ চেয়ে নিতে হবে অথবা তার পাওনা-প্রাপ্তি, হক ফিরিয়ে দিতে হবে। এই শর্তগুলো পূরণ করলেই তাওবা শুদ্ধ হবে। অন্যথায় তাওবা বিশুদ্ধ হবে না।
তাওবা করার নিয়ম-পদ্ধতি : তাওবা করার সুন্দর একটি পদ্ধতি হলো, তাওবা করার জন্য প্রথমে সুন্দর করে অজু করা চাই। এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলার কাছে মাগফিরাত ওক্ষমা চাইতে হবে। গত জীবনের সব পাপ এবং আদেশ অমান্য করার অপরাধ থেকে মার্জনা চাইতে হবে। তবে এই নফল নামাজ তাওবার জন্য জরুরি নয়। তাওবার সময়-সীমা হলো, মৃত্যুর নিদর্শন প্রকাশ পাওয়ার আগ পর্যন্ত। এ সম্পর্কে নবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার বান্দার তাওবা কবুল করেন, যতক্ষণ না সে (মৃত্যু যন্ত্রণায়) গরগর করে।’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ৩৫৩৭)
খেয়াল রাখা জরুরি—তাওবা মানে এই নয় যে, আমরা সেই শেষ সময়ের প্রতীক্ষা করবো আর মৃত্যুর সময় কাছাকাছি এলে তাওবা করে নেবো। প্রকৃত ব্যাপার হলো আমরা কেউ জানি না ঠিক কখন আমাদের মৃত্যুসময় এসে পড়বে। তাই পাপে মগ্ন থাকার সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ এই সময় সীমা মানুষের জন্য, আল্লাহর বান্দাদের জন্য বিশেষ ইহসান। আমরা যদি হাদিসের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে মানবজাতি! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো; কেননা আমি প্রতিদিনে শতবার তাঁর নিকট তাওবা করি।’ (মুসলিম, হাদিস নং ৭০৩৪)।
সুতরাং মুহাম্মাদ (সা.) এর সুন্নত অনুযায়ী আমাদের প্রতিনিয়ত ও সার্বক্ষণিক তাওবার ওপর থাকা চাই। তাওবা ব্যক্তির একান্ত অনুভূতি, মন ও অন্তরের বিষয়। আমাদের সমাজে দেখা যায় তাওবা পড়ানোর রীতি প্রচলিত। কোনো একজন মানুষ খুবই মুমূর্ষ অবস্থায় আছে, বেঁচে থাকার আশা নেই—তখন মসজিদের ইমাম বা কোনো হুজুর ডেকে এনে তাওবা পড়ানো হয়। অথচ তাওবা কাউকে ডেকে এনে করানো বা পড়ানোর বিষয় নয় বরং তাওবা হলো ব্যক্তি মানুষের একান্ত হৃদয়-মনের ব্যাপার; ব্যক্তি নিজেই স্বয়ং আল্লাহর কাছে তাওবা করবে। আর অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এরকম তাওবার কোনো দৃষ্টান্ত কোরআন-হাদিসে নেই। কোনো সাহাবি ও তাবেয়িদের জীবনে কিংবা মুসলিম উম্মাহর প্রাথমিক যুগের কোনো আল্লাহওয়ালা প্রাজ্ঞ ব্যক্তির কিতাবপত্র বা আমলেও নেই।
তাই আসুন, উপর্যুক্ত তাওবার শর্তগুলো পূর্ণ করার মাধ্যমে সুন্নতসম্মত তাওবা করে আল্লাহর ভালোবাসা হাসিল করি। আর সুযোগ পেলে মন দিয়ে ও অর্থের প্রতি খেয়াল রেখে এই দোয়া পড়ি—‘আসতাগফিরুল্লাহ ওয়া আতু-বু ইলাইহি’। অর্থ: ‘আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছি ও তার নিকট তাওবা করছি।’ আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
এ বছর জমাদিউস সানী মাসটি ৩০ দিন পূর্ণ হবে কারণ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে রজব মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে শনিবার পবিত্র রজব মাস শুরু হবে। সে হিসেবে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে আগামী ৩ এপ্রিল বুধবার দিবাগত রাতে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভা কক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আমাদের দেশে শবে মেরাজের দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানে এদিন ঐচ্ছিক ছুটি। ফারসি ‘শব’ এর অর্থ- রাত্র বা অন্ধকার এবং আরবি ‘মেরাজ’ এর অর্থ- উর্ধ্বারোহণ। মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী, ২৬ রজব দিবাগত রাতে ঊর্ধ্বাকাশে ভ্রমণ করে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.) আল্লাহ তা’য়ালার সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন। এ বছর সেই রাতটি পড়েছে আগামী ৩ এপ্রিল।
রাসূল (সা.) বলেছেন, নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানতে পারত এতে কীরূপ শাস্তি ভোগের আশঙ্কা রয়েছে, তাহলে ৪০ বছর পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকাও ভালো মনে করত। সুতরাং নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা নিষিদ্ধ এবং তা অত্যন্ত বড় গুনাহের কাজ।
বর্ণনাকারী আবুন নাযর বলেন, আমার জানা নেই, হাদিসে ৪০ দ্বারা কী উদ্দেশ্য, ৪০ দিন, ৪০ মাস, নাকি ৪০ বছর! -সহীহ বুখারী, হাদিস : ৫১০; সহীহ মুসলিম, হাদিস : ৫০৭। তাই এ বিষয়ে ইসলামের সঠিক দিক নির্দেশনা জেনে নেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে নামাজির কয়েক অবস্থা হতে পারে।
১) মসজিদ যদি বড় হয় অর্থাৎ মসজিদের প্রশস্ততা চল্লিশ হাতের বেশি হয় তাহলে উক্ত মসজিদে নামাজরত ব্যক্তির দুই কাতার সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েয আছে। পক্ষান্তরে চল্লিশ হাতের চেয়ে ছোট মসজিদ হয়, সেক্ষেত্রে নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে ‘সুতরা ( প্রতিবন্ধক) ব্যতীত’ অতিক্রম করা জায়েজ হবে না। সুতরা সামনে রেখেই প্রয়োজনে অতিক্রম করতে পারবে। -ফাতহুল কাদীর ১/৩৫৪; ফতোয়ায়ে শামী ১/৬৩৭; আল-বাহরুর রায়েক ২/১৭
২) তবে নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে যদি অন্যদের যাতায়াতের সম্ভাবনা থাকে তাহলে নামাজ শুরু করার পূর্বেই সামনে ‘সুতরা’ রেখে নামাজ আরম্ভ করা সুন্নত। আর সুতরার, সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো, “এক হাত হওয়া।” এক হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.)কে সুতরার পরিমাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, হাওদার লাঠির মতো। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫০০ এর ব্যাখ্যায় হজরত আতা (রা.) বলেন, হাওদার লাঠির দৈর্ঘ্য হলো, “এক হাত বা তার চেয়ে একটু বেশি।” -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৬৮৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৪; শরহুল মুনইয়াহ ৩৬৮
৩) কেউ যদি নামাজি ব্যক্তির সামনে উপবিষ্ট থাকে তাহলে তার জন্য সেখান থেকে চলে যাওয়া বা অন্যত্র সরে যাওয়ার সুযোগ আছে। কেননা হাদিসে অতিক্রম করাকে নিষেধ করা হয়েছে। আর সামনে থেকে চলে যাওয়া অতিক্রম করার অন্তর্ভুক্ত হয় না। অবশ্য নামাজরত মুসল্লির সামনে উপবিষ্ট ব্যক্তির বিনা প্রয়োজনে উঠে আসা অনুচিত। এতে তার নামাযে খুশুখুযু বিনষ্ট হতে পারে। এ ছাড়া অন্যান্য মুসল্লিরা তার সামনে দিয়ে যাতায়াত করতে পারে। তাই নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত যথাস্থানে বসে থাকা উত্তম।
৪) কখনো নামাজি ব্যক্তির সামনে জুতার বক্স থাকে। তাই হাত বাড়িয়ে নামাজি ব্যক্তির সামনের জুতার বক্স থেকে জুতা নিতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে খেয়াল রাখা দরকার, যেন তার নামাজের কোন ব্যাঘাত না ঘটে।
৫) মাঝে মাঝে মসজিদে কিছু মুসল্লিকে দেখা যায়, তারা দ্রুত বের হওয়ার জন্য নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে রুমাল বা হাতে থাকা জায়নামাজ সুতরা হিসেবে ব্যবহার করে হাঁটতে থাকে। এই ধরনের ‘চলমান সুতরা’ নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার জন্য সুতরা হিসেবে যথেষ্ট নয়। তাই এর থেকে বিরত থাকতে হবে। বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৯; শরহুল মুনিয়াহ পৃ. ৩৬৭
৬) কেউ যদি অজ্ঞতাবশত নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করে তাহলে তাকে হাত দিয়ে কিংবা একটু উচ্চস্বরে তাসবিহ পড়ে সতর্ক করাও জায়েজ আছে। তবে নামাজি ব্যক্তির জন্য এমন না করাই উত্তম। তবে হ্যাঁ, তার সামনে দিয়ে কারো অতিক্রম করার আশঙ্কা থাকলে নামাজ শুরু করার পূর্বেই সুতরা সামনে রাখা সুন্নত।
আলবাহরুর রায়েক ২/১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২১৩; ফাতহুল কাদীর ১/৩৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৯
৭) অনেক সময় দেখা যায়, কোনো মুসল্লি নামাজরত ব্যক্তির সামনে সুতরা রেখে অতিক্রম করে এরপর আরেক জনের সামনে সুতরা রাখে। এইভাবে সে একাধিক ব্যক্তির সামনে সুতরা রেখে মসজিদ থেকে বের হয়। এইভাবে অতিক্রম করা নাজায়েজ নয়। তবে এতে নামাজি ব্যক্তির মনোযোগ বিনষ্ট হতে পারে। তাই প্রয়োজন ছাড়া এমনটি করা থেকে বিরত থাকবেন। অবশ্য এরূপভাবে অতিক্রম করলেও অতিক্রমকারীর গুনাহ হবে না। তবে নামাজি ব্যক্তির উচিত মানুষ যাতায়াতের স্থানে সুতরা সামনে রেখেই নামাজে দাঁড়ানো। ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৬৩১