জামার উদ্দিনঃএকসময় যাকে মানুষ সম্মান জানাতে কুণ্ঠিত হয় আবার কালের কপোলতলে তাকেই পুষ্পমাল্যে ভূষিত করে। এটাই বোধহয় কালের মহাকালের রহস্যময় খেলা।
মানুষের জীবন স্বপ্নময়। বলা হয়ে থাকে মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। এ স্বপ্নের আকাশ তৈরি হয় তার ভাবনা-কল্পনাকে ঘিরে। আকাশের নীলিমায় উড়তে থাকে মনের স্বপ্নগুলো। সুন্দর স্বপ্ন মনোলোকের চেতনাকে জাগরিত করে। প্রাণিত করে। জীবনকে আনন্দময় করে তোলে। জীবন অনেক সুন্দর। প্রাণময়। উচ্ছ্বাসে ভরপুর। উদ্যমের অপর নাম সাহসী পদক্ষেপ। জীবনকে গতিশীলতায় ভরিয়ে তোলে সুন্দর কল্পলোকের অনুভূতি। প্রতিটি মানুষের ভেতর আরেকটি মানুষ থাকে। যা তাকে পরিচালিত করে সামনের দিকে। তাকে বাহ্যিকভাবে দেখা যায় না। ছোঁয়া যায় না। অনেক সময় একজন মানুষ আমাদের সামনে থাকলেও মনে হয় যেন কাছে নেই। অন্য কোথাও। তার ভাবনাগুলো তাকে স্বপ্নের জগতে তাড়িয়ে বেড়ায়। এক নিমেষে পৃথিবীর নানা প্রান্তে বিচরণ করে আবার ফিরে আসে আপন ঘরে। মানুষের গতি অতি প্রবল। কোনো বিজ্ঞানের আবিষ্কার এ সীমাহীন গতির সাথে পাল্লা দেয়ার ক্ষমতা রাখে না। গতিময় জীবনে মানুষের সৃষ্টিশীল কর্মগুলো স্বপ্নের উজ্জ্বল নিদর্শন বয়ে বেড়ায়। শিল্পকর্মের অমর স্মৃতি মানুষের হৃদয়কে আন্দোলিত করে। প্রাণময় করে তোলে। প্রেরণা জোগায় যুগ যুগ ধরে।
জীবনের এ অন্তহীন যাত্রা শুধু নিজের তরে নয়। সাহসী মানুষেরা অপরের কল্যাণে এগিয়ে আসে। কোনো বাধার প্রাচীর তাদের গতি রোধ করতে পারে না। মানুষের স্বাধীনতা, সাম্য, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবিচল। ইস্পাত কঠিন পাথরের মতো অনড়। কারার লৌহকপাট কিংবা মৃত্যুর হাতছানিতে ভীত নয় তাদের অন্তর। মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর নেশাই তাদের প্রবল। সত্য সুন্দরের প্রেমিক কবিদের জীবনেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে কলম ধরতে এতটুকু কুণ্ঠাবোধ করেননি। হাসিমুখে কারাবরণেও দ্বিধান্বিত হননি। মানুষের মুক্তিই ছিল তার লক্ষ্য। সাম্যের বাণী তিনি উচ্চকিত করেন বলিষ্ঠ কণ্ঠে। পৃথিবীর স্বাধীনতাকামী মানুষের অন্তরে তিনি অমর। তার এই সাহসী উচ্চারণ মানুষের হৃদয়ে আশার আলো জ্বালিয়ে দেয়। পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করার শক্তি সাহস জোগায়। বিদ্রোহী কবির এই প্রতিবাদ ছিল সব অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে। সত্য সুন্দরের পক্ষে। অসাম্যের সব বেড়াজাল ছিন্ন করার দৃঢ়প্রত্যয়ে কবি ছিলেন দীপ্যমান। হৃদয়ের গভীরে সুপ্ত নৈতিক মানদণ্ডে তিনি ছিলেন মহীয়ান। আজো নৈতিকতার শক্তি অপরাজেয়। সাময়িকভাবে এর ধারকরা স্তিমিত হলেও নীতির কোনো পরাজয় নেই। সত্যের মৃত্যু নেই। সত্যের চেতনা চিরন্তন, চিরঞ্জীব। মানবিক চিন্তক, কলামিস্ট।
কবি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের কবিতা
তোমার নীরবতাকে নিয়েই
আমার যত সংশয়
অড়ষ্ট থাকি
অযাচিত হিম শীতল
বরফাচ্ছাদিত আমার ভুবন।
ঘন মেঘে আচ্ছন্ন হয়
আমার আকাশ
বাতাসের গন্ধ যায় থেমে।
বুক ভরে নিশ্বাস হয় না নেয়া।
থমকে যায় আমার পথ চলা।
ঝড়ের আগমনী আমাকে
দিশেহারা করে
আছড়ে পরা সাগরের ঢেউ
পাড় ভাঙে বিলাসী স্বপ্নের
লণ্ডভণ্ড হবার ভয়
আমার স্বপ্ন ভাঙার ভয়
তোমাকে না পাওয়া
কষ্টের ভয়
থেকেই সংশয়।
৫ই অক্টোবর ২০২২ইং
বাবা
বাবা বসতেন চেয়ারটাতে
সকাল, দুপুর সন্ধা, রাতে
চায়ের কাপে চুমুক
আর খবরের কাগজ হাতে।
চশমাটা আজও অক্ষত
ছড়িটা রেখেছি যতনে,
তোমার শাসন বারণ
হাসিমাখা মুখ ভাবি আনমনে।
তুমি ছিলে বটবৃক্ষ
মাথার উপর ছায়া,
তোমার মতো এমন করে
কেউ করে না মায়া।
জায়নামাজে তোমার ছোঁয়া
কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে,
বাবা তোমায় খুঁজে ফিরি
সকাল বিকেল সাঁঝে।
দোয়া করি, প্রভু ও গো
ক্ষমা করো, জান্নাত করো দান,
ওহে খালিক, ওহে মালিক,
ওহে রহিম, রহমান।
কবিতাটি লেখার তারিখঃ ২৭/০৯/২০২২ইং
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধিনে ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ব্যবহারের জন্য ৩৬ লক্ষ ৫০ হাজার ওএমআর সরবরাহের কাজ পায় মাষ্টার সিমেক্স পেপার লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান।যার বাজার মূল্য ১কোটি ১৩ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা। এবছর ১২ এপ্রিল উক্ত প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর আবদুল আলীম । তৎকালিন চেয়ারম্যানের অবর্তমানে রুটিন মাফিক দায়িত্বে ছিলেন সচিব । এ সুযোগে সচিব প্রফেসর আবদুল আলীম মাষ্টার সিমেক্স পেপার লিমিটেডকে ওএমআর ব্যবহারের আগে কোটি টাকার বিল পাইয়ে দিতে কার্যাদেশ-এর শর্ত শিথিল করে দেন। অনুসন্ধানে জানা যায়,মাষ্টার সিমেক্স এর সাথে সমঝোতার অংশ হিসেবে বোর্ড সচিব কার্যাদেশ পরিবর্তণের কাজ করেন। বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা তার পকেটে ঢুকে।বোর্ডের সাবেক সহকারি সচিব মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন মাষ্টার সিমেক্স এর প্রতিনিধি সবুজ মিয়া সচিব প্রফেসর আবদুল আলীমের সাথে বিষয়টি মধ্যস্থতা করেন,২০২১ সালে ১৯ লক্ষ ৫০ হাজার ওএমআর তৈরির কাজ পায় একই প্রতিষ্ঠান।২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারী প্রফেসর আবদুল আলীম স্বাক্ষরিত কার্যাদেশ এর ১০ নং শর্তে লেখা ছিল “২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ওএমআর স্ক্যান করা সাপেক্ষে বিল প্রদান করা হবে।২০২২ সালে সচিব আগের শর্তটি তুলে দেয় । সচিব প্রফেসর আবদুল আলীম চলতি বছর অক্টোবরেই অবসরে যাচ্ছেন । তিনি অবসরে যাওয়ার আগে যেন কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয়ে যায় এজন্য কার্যাদেশের শর্ত শিথিল করে দেন । ওএমআর ব্যবহারের আগে বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেন।২০১৮ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড ২কোটি ৩০ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকার ওএমআর ক্রয় করে,২০১৯ সালে ১ কোটি ৭৮লক্ষ ৯০ হাজার টাকার ওএমআর ক্রয় করে।সকল ক্রয়ের কার্যাদেশে শর্ত উল্লেখ ছিল ওএমআর ব্যবহারের পর বিল পরিশোধ করা হবে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ওএমআর ও কাগজের কোটি কোটি টাকার ক্রয়ে সচিব প্রফেসর আবদুল আলীম শর্ত শিথিল করে সদ্য বদলিকৃত সহকারী সচিব মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন সাথে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন । বর্তমান চেয়ারম্যান যোগ দেওয়ার পর এই সিন্ডিকেট আবারও সক্রিয় হয়ে উঠে। নতুন চেয়ারম্যান কিছু বুঝতে পারার আগেই এই চক্র বোর্ড থেকে কোটি টাকার বিল বের করে ফেলে।যা চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের প্রতিষ্ঠার পর আর কখনও হয়নি । সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট কিবরিয়া মাসুদ খান থেকে জোর করে বিলে সম্মতি আদায়,চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট কিবরিয়া মাসুদ খান এর বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় ব্যবস্থার বিষয় ঝুলিয়ে রেখে বিলে জোর করে স্বাক্ষর নিয়েছেন।তিনি স্বাক্ষর দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সচিব প্রফেসর আবদুল আলীম চিৎকার করে দ্রুত স্বাক্ষর দিতে বলেন।বোর্ড সূত্রে জানা গেছে । তবে সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট ওএমআর এ লিখেন,কাগজের মান শেষ পর্যন্ত সঠিক যেন থাকে । এটা গুরুতর জালিয়াতি কোটি টাকার বিল এভাবে পরিশোধ করা যায় না,এ বিষয়ে সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট কিবরিয়া মাসুদ খান বলেন,আমার কাছ থেকে বিলে জোর পূর্বক স্বাক্ষর নেয়ার বিয়ষটি সঠিক না। আমার সাথে সচিব স্যারের সাথে সম্পর্ক ভালো,কখনো খারাপ ছিল না,আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল অভিযোগ নিস্পত্তি হয়ে গেছে। এখন আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আখতার বলেন,সচিবের বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে এখনও পর্যন্ত কোন অভিযোগ আসেনি,অভিযোগ আসলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।উল্লেখ্য সচিব প্রফেসর আবদুল আলীম কমিউনিস্টপন্থি ব্লকের একজন সক্রিয় কর্মি। তাছাড়া চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড এর সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিউনিস্টপন্থি মাহবুব হাসানের ঘনিষ্ঠ সহচর।যিনি তৎকালিন উচ্চআদালতে দোষি (কোর্ট অব কনডেম) হয়।
মুহাম্মদ আবু নাসের ঃ আমাদের সাম্প্রতিক সাহিত্যচর্চা নিয়ে ভাবতে গেলে খেই হারিয়ে ফেলতে হয়। বুঝিনা আমরা কি সাহিত্য সাধনা করছি, নাকি প্রতিযোগিতা করছি, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি, নাকি ঘোড়দৌড় দৌড়াচ্ছি। সাহিত্যে প্রতিযোগিতা থাকে। সেটা নিজের সাথে নিজের। প্রতিনিয়ত নিজেকে অতিক্রম করার প্রতিযোগিতা। সাহিত্যের জন্য যে মগ্নতা, যে নিমজ্জন প্রয়োজন তা কোথায়? সাহিত্য সাধনায় ব্রতী হতে হলে মন মানসে ধারন করতে হয় রবীন্দ্র-নজরুল-জসীম উদ্দীন-জীবনানন্দ-সুকান্তকে। বোধজুড়ে থাকবে বিভূতিভূষন- মানিক আবু রুশদ আল মাহমুদ- শওকত ওসমান-শামসুর রাহমান- সৈয়দ শামসুল হক। যাদের লেখা ঋদ্ধ করে তুলবে। পথের সন্ধান দেবে। তাঁদের লেখা পড়ে, আত্নস্থ করে লেখা আর পড়াকেই ধ্যানজ্ঞান বিবেচনা করতে হবে।
দেড় যুগ ধরে লেখালেখির সাথে আছি। একদিনের জন্যও লেখা ছাড়িনি। জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে লেখা। একটু একটু করে এগিয়েছি। আমরা যারা মফস্বল বা পাড়া গাঁয়ের লেখক এক সময় পত্রিকা অফিস সম্পাদকদের চিনতাম না। ভীরু ভীরু মনে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে এক একটা লেখা পোষ্ট করেছি, বাক্সে ফেলেছি। তারপর অধীর অপেক্ষায় থেকেছি। কখনো ছাপা হয়েছে, কখনো হয়নি। ভেঙ্গে পড়িনি আমরা। তাপসের ন্যায় লেগে থেকেছি। লেখা ছাপা হয়েছে লেখার গুনে। পত্রিকা অফিসে যেতে হয়নি, সম্পাদককে চিনতে হয়নি। লেখকদের জেনেছি তাদের লেখা পড়ে, ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ হয়নি। লেখার দক্ষতা একদিনে হয়নি, তার জন্য সাধনা করতে হয়েছিল। আজকাল চেনাজানা, যাতায়াত লেখা ছাপানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বিষয়। এখন কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া লেখা ব্যক্তি গুনে ছাপা হয়, লেখার গুনে নয়। অবশ্য সব সম্পাদকের ক্ষেত্রে নয়। ভালো মানুষ, ভালো সম্পাদক আগেও ছিলেন, এখনও আছেন। নইলে দুনিয়ার ভারসাম্য থাকত না
এক একটি পত্রিকাকে কেন্দ্রীভূত করে গড়ে উঠেছে একটি করে লেখক বলয়। ওরা যেন ওই পত্রিকারই লেখক। অসংখ্য সাহিত্য সংগঠন রয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন সংগঠন ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবর পাই। সেখানেও একই ব্যাপার, নিজস্ব লোক। সাহিত্য বিষয়ক অসংখ্য পুরষ্কার ঘোষিত হচ্ছে বছর জুড়ে। এক শ্রেণীর লেখক হয়ে পড়ছেন পুরস্কার কেন্দ্রিক। তাদের উদ্দেশ্য পুরস্কার পাওয়ার জন্য লেখা আর যা যা করা দরকার তা করা। ফেসবুক হয়েছে আরেকটা বড় বিড়ম্বনা। যার কল্যাণে সবাই এখন কবি-সাহিত্যিক। ভালো লেখক হওয়ার জন্য বা মহৎ সৃষ্টির প্রেরণাতে যেন লিখছেন না। লিখছেন ফেসবুকে লেখা পোষ্ট দিয়ে বন্ধুদের দেখানোর জন্য। তাদের কাছ থেকে লাইক-কমেন্টস পাওয়ার জন্য। কিছু লেখক মেতেছেন ক্রেস্ট বাণিজ্যে। গলায় একটা উত্তরীয় ঝুলিয়ে ক্রেস্ট হাতে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। ক্রেস্ট বাণিজ্যে সওয়ারি হয়েছে বেশ কিছু সংগঠনও। অন্যের টাকায় ক্রেস্ট বানিয়ে তাকে দেওয়ার পরও হাতে কিছু থাকে। সাথে বাড়তি পাওনা সংগঠন আর নিজের নাম প্রচার।
একজন লেখক ইচ্ছে করলেই যা খুশি লিখতে পারেন না। তার আছে সামাজিক দায়বদ্ধতা। লেখকের লেখা ছাপা হওয়ার আগ পর্যন্ত ওটা তার সম্পত্তি কিন্তু লেখা ছাপা হওয়া মাত্র ওটা জনগণ আর পাঠকের সম্পত্তি। কাজেই লেখককে লিখতে হবে ভেবে। পাঠক-সমাজ-দেশের কথা চিন্তা করে।
লেখক: সম্পাদক: চট্টগ্রাম লেখক- সাংবাদিক ফোরাম।
চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে একক মূকাভিনয়ের তিন দিনের বিশেষ কর্মশালা ২১-২৩ জুলাই সম্পন্ন হয়েছে। প্যান্টোমাইম মুভমেন্ট এ কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালা পরিচালনা করেন মূকাভিনয়শিল্পী ও প্রশিক্ষক রিজোয়ান রাজন। এতে অতিথি প্রশিক্ষক ছিলেন শহীদুল মুরাদ। একক মূকাভিনয়ে আগ্রহী এমন ২৩ জন অভিনয় শিল্পী কর্মশালায় অংশ নেন। কর্মশালার সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন প্যান্টোমাইম মুভমেন্টের সাধারণ সম্পাদক সোলেমান মেহেদী।
কর্মশালায় মূকাভিনয়ের শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি, নির্বাকতা, নির্বাক কথোপকথন, চরিত্র সৃষ্টি ও আবেগ অনুভূতির খেলা, গল্প ভাবনা, মাইম নির্মাণ ও মাইম উপস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
কর্মশালার সমাপনী দিন শনিবার (২৩ জুলাই) রাতে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন বাংলাদেশের প্রথম মূকাভিনয়শিল্পী দেওয়ান মামুন।
কর্মশালায় সহযোগিতায় আরো ছিলেন মূকাভিনয়শিল্পী রাইদাদ অর্ণব ও তরুণ বিশ্বাস
কর্মশালা সম্পর্কে রিজোয়ান রাজন বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর পর চট্টগ্রামে মূকাভিনয়ের কর্মশালা হল। ভাল সাড়া পেয়েছি। এখানে বেশ উৎসাহ নিয়ে বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থীরা যুক্ত হয়েছে। তারা এ ধরণের কর্মশালা দীর্ঘ মেয়াদীভিত্তিক করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ব্যাপারটা মূকাভিনয় শিল্পের জন্য আশার কথা। তবে কর্মশালার জন্য মানসম্পন্ন রুম বা কক্ষের অপ্রতুলতা কাজের ব্যাঘাত ঘটায়। আগামীতে এ ধরণের আরো কর্মশালা চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই।’
কবি মোঃ ছিদ্দিক-ছোট্ট বেলা এমন একটি শব্দ যার নাম শুনলে প্রকৃতির কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে সেই আকা বাকা মাটির পথ। সেই গাছে উঠে আম পাড়ার কথা। আরো মনে পড়ে উপজেলার পুকুর থেকে মাছ চুরি করার কথা। আরো কত কিছু মনে পড়ে। সেই মাঠে প্রান্তরে বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়ানোর কথা। কতোইনা আমরা মজা করে ছিলাম। হায়রে এখন সেই দিন গুলি কোথায় যেন হারিয়ে গেল। কোথায় যেন চলেগেল সেই ছোট্ট বেলার কাহীনি। ছোট বেলায় কতই না মজা ছিল। এখন সেই মজা কোথায় যেন লুকিয়ে গেছে। চলেগেছে অনেক দূরে। পেলে রেখেগেছে শুধু স্মৃতি গুলি। যখন যে দিকে যেতে মনে ইচ্ছা হত সেখানে চলে যেতাম। বন্ধুদের সাথে কত খেলা খেলেছি। কত মারামারি করেছি আবার তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে নিয়েছি। কত সুন্দর ছিল আমাদের সেই ছোট বেলা। যখন দাদুর কাছে যেতাম দাদু গল্প শুনাতো। কত রকমের গল্প বলে শেষ করতে পারবনা এত গল্প দাদু শিখেছে কোথাথেকে তাও জানিনা। কিভাবে যে দাদু এত গল্প শিখেছে। দাদুকে জিজ্ঞেস করলে দাদু বলত জানিনা কিভাবে না কিভাবে শিখে পেলেছি। এখন দাদুকেও অনেক miss করছি আর miss করছি সেই ছোট্ট বেলাকে। মন চায় যেন আবার সেই ছোট বেলায় পিরে যাই। যে সময় সবাই আমাদের আদর করত। কেউ আমাদের হিংসার চোখে দেখতনা। মন চায় সারাদিন সেই গ্রামের পথ ধরে হাটতে। মনের ভিতর যত কষ্ট আছে সব মুছে পেলতে।।
জীবনে আর ফিরে পাবো না সেই ছোট্ট বেলা।।
- লেখক : কবি মোঃ ছিদ্দিক
সবুজে ভরা বনানী বাংলা
ওগো মোর জন্মভূমি দৌলতখান,
তোমারই বুকে জন্ম হয়ে
ধন্য হয়েছি যে আমি।
পাখিদের মধুর মিষ্টি গানে
উদিত রাঙা রবি,
মুগ্ধ করে হৃদয়টা আমার
এই বাংলার ছবি,
জালের মত ছড়ানো নদী
সবুজে ভরা সমাহার,
চোখ জুড়ানো রূপ তোমার
সৃষ্টি কর্তার উপহার।
পাল উড়িয়ে নৌকা চলায়
মেঘনা নদীর বুকে,
জাল ভর্তি ইলিশ দেখিয়া
মিষ্টি হাসি মুখে।
প্রখর রোদে ক্লান্ত হইয়া
বসি বটের ছায়ায়,
শিতল হাওয়া এসে তখন
এ হৃদয়েটা জুড়ায়।
তোমার রূপে মুগ্ধ হয়েছি
কি দিব রূপের বর্ণনা।
“পাস্তুরিত কারুকাজ”
বহুদিন পর বাতায়নের কার্নিশের মরিচীকা কষে
বিলীন যেন হিমালয়ের পাদদেশে।
ভূমিরা যেন আঁকড়ে ধরেছে পলির জীবাশ্ম।
একটি মূর্তিমুখ।
আধোঘুমে ডাকছে আঁধারের রহস্যে ডুবতে।
ডুবে গেলাম প্রস্তর ভাবনার বাঁধা শত উঁচিয়ে।
কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়াল এক ঘন ছায়া।
উদ্বেলিত হিমাঙ্গের অসাড়তায়।
লগন গলগল করে উপচে পড়ছে
বসুধায় একমুঠো সোনালী রোদ্দুর।
নিগাঢ় নির্যাস উন্মাদ উত্তাপ
রবির শুভেচ্ছাদূত খালাস করে ঘর্মের কারুকাজ।
ফের ডুবে যায় সমস্ত আকুতি
পুষ্পরেণু বিন্যাসে বৃন্তে উড়ে আসে অচেনা ভ্রমর।
পারভীন আকতার
শিক্ষক,কবি ও প্রাবন্ধিক।
চট্টগ্রাম।
বড়ভাই অধ্যাপক ডা. এল.এ. কাদেরীর ইন্তেকালে
ছোট ভাইয়ের সংক্ষিপ্ত অনুভূতি : বিনয় কথন
-মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত
=========================
আমার বড়ভাই, খ্যাতিমান নিউরোসার্জন অধ্যাপক ডা. এল.এ. কাদেরী গত ২৯ শে আগস্ট, ২০২১ খ্রী: রোববার ইন্তেকাল (ইন্নালিল্লাহি ওয়া নিল্লাহি রাজিউন) করেন। খ্রীস্ট সালের ২৯ শে আগস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ৫৭০ খ্রীস্টাব্দের ২৯ শে আগস্ট আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) জন্মগ্রহণ করেন বলে জানা যায়।
বড়ভাই অধ্যাপক এল.এ. কাদেরী প্রায় দু’বছর ধরে অসুস্থ। আমরা জীবিত দু’ভাই আবুল মোহছেনাত কাদেরী (সেখু) ও আমিও অসুস্থ। দু’ভাই এডভোকেট আবুল হাসনাত কাদেরী ও এডভোকেট নুরুল আনোয়ার কাদেরী আগেই ইন্তেকাল করেছিলেন। গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০২১ খ্রীস্টাব্দ তারিখে বড়ভাইয়ের উডল্যান্ডস্থ চেম্বারে জোহরের নামাজের পর প্রায় সোয়া একঘন্টা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়। তিন ভাই একত্রে অসুস্থ হওয়া নিয়েও কথা হয়। এক পর্যায়ে আমি বললাম- “বেঁচে থেকে আর কি লাভ? আমার জীবন কারো উপকারে তো আসছে না, আমি পারছিনা কারো কোন উপকার করতে। আল্লাহপাক আমার হায়াত কমিয়ে আপনার হায়াত বাড়িয়ে দিলে মানুষ অনেক উপকার পেত”। এ বাক্যটি শুনার পর তিনি কিছুক্ষণ স্তব্দ হয়ে রইলেন। তাঁর চোখে বিন্দু বিন্দু পানি দেখা গেল। তখন তিনি হিসেব করে বললেন- “তুই আমার ১৫ বছরের ছোট, মরে যেতে চাস কেন? কি এত কষ্ট? আর কোনদিন এ ধরণের কথা বলবি না”। বড়ভাই ছিলেন বিবেক, বুদ্ধি ও অনুভূতির বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ মানুষের অন্যতম, মানবীয় গুণে গুণান্বিত, পরোপকারী। পরোপকার মানুষের মহৎ গুণ। সমাজ জীবনে একজন মানুষকে কথায়, আচরণে, লেনদেনে অপর মানুষের সাথে সম্পৃক্ত হতে হয়। মানুষ পৃথিবীতে একজনের দুঃখে-সুখে অপরজন সহযোগী। বিপদে একজন অপরজনকে উদ্ধারে এগিয়ে আসে। মানুষের সাথে মানুষের সহযোগিতা ও সহমর্মিতামূলক কাজকে পরোপকার বলা হয়। আমার বড়ভাই অধ্যাপক ডা. এল.এ. কাদেরী সত্যিকার অর্থেই একজন শ্রেষ্ঠ পরোপকারী মানুষ। একটি ডবষভধৎব ঝঃধঃব হিসেবে বাংলাদেশকে গড়তে তিনি পরোপকারে নিজেকে সর্বদা সামিল রেখেছিলেন সকল মত পার্থক্যের উর্ধ্বে। রাজনৈতিক বিশ্বাস তাঁর ছিল দেশের মানুষের স্বাধিকার, মুক্তি ও অধিকারকেই ঘিরে। তদানিন্তন পাকিস্তান আমলে ১৯৬৩-৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত এম.বি.বি.এস ফাইনাল পরীক্ষায় সারাদেশের মধ্যে স্বর্ণপদকসহ প্রথম শ্রেণীতে প্রথমস্থান অধিকার করলেও পাকিস্তানী কায়েমী স্বার্থবাদী ও সামরিক শাসকচক্র বিরোধী গণঅধিকার আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় তাঁর স্কলারশীপ আটকে রাখে- যা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে মেধাবী ছাত্রদের উপর ভিন্ন মতের সরকারী মহলের আক্রোশ চরিতার্থ করার একটি ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত। পরবর্তীতে গণতান্ত্রিক সরকারগুলোও তাঁকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে পারেনি- সরকারের ভিতর ঘাপটি মেরে বসে থাকা সুবিধাবাদী, স্বার্থানেষী ও নীতিজ্ঞানশূন্য ব্যক্তিদের কুট-কৌশলের কারণে।
বড়ভাই দেশের চিকিৎসা অঙ্গনে যে অবদান রেখেছেন, নিউরোসার্জারীর মত কঠিন সাবজেক্ট নিয়ে পেশাগত উৎকর্ষ সাধন ও সম্প্রসারণে যে আলোকোমূল ভূমিকা রেখেছেন- তা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য অনুসরণীয়- অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি পেশাজীবী, স্বেচ্ছাসেবী, জনকল্যাণ, সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, মকতব ও গরীব-দুঃখীদের অকাতরে দান করেছেন।
তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে শ্রদ্ধেয় ও অনুবর্তী অনেকেই ইতিমধ্যে লিখেছেন। আরো অনেকেই লিখছেন। ছোটভাই হিসেবে উনার জীবনের বিভিন্ন বিষয় ও কীর্তি যতটুকু সম্ভব সংরক্ষণ করার চেষ্টা করেছি এবং যারা লিখছেন তারা সংগ্রহ করে কাজে লাগাচ্ছেন, লিখছেন।
বড়ভাই অধ্যাপক ডা. এল.এ. কাদেরীর বড়গুণ ছিল অপ্রিয় হলেও সাহস করে সত্য বলা এবং অন্যকে সত্য বলতে উৎসাহ দেয়া। তিনি বলতেন-“আধুনিক মনোবিজ্ঞান ও নিজরোসায়েন্সের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল: সত্য কথা বলা এবং সত্য বলার জন্য উৎসাহ দিতে সহজাত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ না করে ভূল বিশ্বাস ও মিথ্যা দ্বারা ক্রমাগত প্রভাবিত হতে থাকলে মানুষের মস্তিস্কের ডড়ৎশরহম ঝঃৎঁপঃঁৎব বা কর্মকাঠামো বদলে যায়। ফলে মানুষের মধ্যে সত্য বলা, শোনার আগ্রহ ও সামর্থ্য দুই’ই কমে যায়”।
তিনি আল্লাহকে রাজী-খুশী করার জন্য নীরবে, গোপনে অনেক দান করেছেন। অনেকেই অনেক কথা বলেছিলেন, তিনি এসব কথা পরোয়া করেননি। উনার আরেকটি গুণ ছিল সবাইকে নিয়ে মৈত্রীর বন্ধনে কাজ করা। শক্তি প্রয়োগ করে মত বিরোধ থেকে বিরত রাখা তিনি পছন্দ করতেন না। কোন বিষয়ে কারো ভিন্নমত থাকলে তিনি গুরুত্ব দিয়ে শুনতেন এবং সুখকর ও গ্রহণযোগ্য সমাধানের চেষ্টা করতেন। তিনি সবসময় আলোর পথে চলেছেন। ১৯৮৮-৯১ পর্যন্ত তিনি সভাপতি থাকাকালীন সময়ে বি.এম.এ চট্টগ্রাম, শাখার কমিটি দেখলেই এটা বুঝা যায় সব মতাদর্শের চিকিৎসক উনার কমিটিতে ছিলেন।
সকলেই জানেন, ভাইয়ের সম্পর্ক রক্তের, সন্তানের সম্পর্ক অঙ্গ প্রত্যঙ্গের। একি পিতা-মাতার সন্তান আমরা। মুরব্বী, আত্মীয় ও সতীর্থদের অনেকেই পরামর্শ দিয়েছেন বড়ভাই সম্পর্কে একটি ঈড়সঢ়ৎবযবহংরাব ৎিরঃব-ঁঢ় তৈরির জন্য। এখন আমার মানসিক ও শারীরিক অবস্থা অবশিষ্ট নেই তা তৈরি করার।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছিলেন- “সন্তানের উপর পিতার যে ধরনের অধিকার রয়েছে ছোট ভাইয়ের উপরও বড়ভাইয়ের সে ধরনের অধিকার রয়েছে, তেমনি পিতার উপর সন্তানের যে ধরনের অধিকার রয়েছে বড়ভাইয়ের উপরও ছোটভাইয়ের সে ধরনের অধিকার রয়েছে”। বড়ভাই এবং আমরা ছোটভাইরা একত্রিত হলে হুজুর (সঃ) এর ‘এই হাদিসটি নিয়ে মাঝে মধ্যে আলোচনা করতাম’ এবং এটা অনুসরণ ও প্রতিপালন কতটুক করেছি তা যতেœর সাথে আলোচনা করতাম।
আল্লাহপাক বড়ভাই অধ্যাপক ডা. এল.এ. কাদেরীর সকল নেক আমলগুলো কবুল করে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন।
দেশে-বিদেশে, বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারা বড়ভাইয়ের ইন্তেকালে শোক প্রকাশ, দোয়া ও সমবেদনা জানিয়েছেন তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
নিবন্ধক: মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক, ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন অব প্রেস কাউন্সিলস্ নির্বাহী পরিষদ ও বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সাবেক সদস্য। অধ্যাপক ডা. এল.এ. কাদেরীর ছোটভাই।