কবি মোঃ ছিদ্দিক-ছোট্ট বেলা এমন একটি শব্দ যার নাম শুনলে প্রকৃতির কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে সেই আকা বাকা মাটির পথ। সেই গাছে উঠে আম পাড়ার কথা। আরো মনে পড়ে উপজেলার পুকুর থেকে মাছ চুরি করার কথা। আরো কত কিছু মনে পড়ে। সেই মাঠে প্রান্তরে বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়ানোর কথা। কতোইনা আমরা মজা করে ছিলাম। হায়রে এখন সেই দিন গুলি কোথায় যেন হারিয়ে গেল। কোথায় যেন চলেগেল সেই ছোট্ট বেলার কাহীনি। ছোট বেলায় কতই না মজা ছিল। এখন সেই মজা কোথায় যেন লুকিয়ে গেছে। চলেগেছে অনেক দূরে। পেলে রেখেগেছে শুধু স্মৃতি গুলি। যখন যে দিকে যেতে মনে ইচ্ছা হত সেখানে চলে যেতাম। বন্ধুদের সাথে কত খেলা খেলেছি। কত মারামারি করেছি আবার তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে নিয়েছি। কত সুন্দর ছিল আমাদের সেই ছোট বেলা। যখন দাদুর কাছে যেতাম দাদু গল্প শুনাতো। কত রকমের গল্প বলে শেষ করতে পারবনা এত গল্প দাদু শিখেছে কোথাথেকে তাও জানিনা। কিভাবে যে দাদু এত গল্প শিখেছে। দাদুকে জিজ্ঞেস করলে দাদু বলত জানিনা কিভাবে না কিভাবে শিখে পেলেছি। এখন দাদুকেও অনেক miss করছি আর miss করছি সেই ছোট্ট বেলাকে। মন চায় যেন আবার সেই ছোট বেলায় পিরে যাই। যে সময় সবাই আমাদের আদর করত। কেউ আমাদের হিংসার চোখে দেখতনা। মন চায় সারাদিন সেই গ্রামের পথ ধরে হাটতে। মনের ভিতর যত কষ্ট আছে সব মুছে পেলতে।।
জীবনে আর ফিরে পাবো না সেই ছোট্ট বেলা।।
- লেখক : কবি মোঃ ছিদ্দিক
সবুজে ভরা বনানী বাংলা
ওগো মোর জন্মভূমি দৌলতখান,
তোমারই বুকে জন্ম হয়ে
ধন্য হয়েছি যে আমি।
পাখিদের মধুর মিষ্টি গানে
উদিত রাঙা রবি,
মুগ্ধ করে হৃদয়টা আমার
এই বাংলার ছবি,
জালের মত ছড়ানো নদী
সবুজে ভরা সমাহার,
চোখ জুড়ানো রূপ তোমার
সৃষ্টি কর্তার উপহার।
পাল উড়িয়ে নৌকা চলায়
মেঘনা নদীর বুকে,
জাল ভর্তি ইলিশ দেখিয়া
মিষ্টি হাসি মুখে।
প্রখর রোদে ক্লান্ত হইয়া
বসি বটের ছায়ায়,
শিতল হাওয়া এসে তখন
এ হৃদয়েটা জুড়ায়।
তোমার রূপে মুগ্ধ হয়েছি
কি দিব রূপের বর্ণনা।
“পাস্তুরিত কারুকাজ”
বহুদিন পর বাতায়নের কার্নিশের মরিচীকা কষে
বিলীন যেন হিমালয়ের পাদদেশে।
ভূমিরা যেন আঁকড়ে ধরেছে পলির জীবাশ্ম।
একটি মূর্তিমুখ।
আধোঘুমে ডাকছে আঁধারের রহস্যে ডুবতে।
ডুবে গেলাম প্রস্তর ভাবনার বাঁধা শত উঁচিয়ে।
কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়াল এক ঘন ছায়া।
উদ্বেলিত হিমাঙ্গের অসাড়তায়।
লগন গলগল করে উপচে পড়ছে
বসুধায় একমুঠো সোনালী রোদ্দুর।
নিগাঢ় নির্যাস উন্মাদ উত্তাপ
রবির শুভেচ্ছাদূত খালাস করে ঘর্মের কারুকাজ।
ফের ডুবে যায় সমস্ত আকুতি
পুষ্পরেণু বিন্যাসে বৃন্তে উড়ে আসে অচেনা ভ্রমর।
পারভীন আকতার
শিক্ষক,কবি ও প্রাবন্ধিক।
চট্টগ্রাম।
বড়ভাই অধ্যাপক ডা. এল.এ. কাদেরীর ইন্তেকালে
ছোট ভাইয়ের সংক্ষিপ্ত অনুভূতি : বিনয় কথন
-মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত
=========================
আমার বড়ভাই, খ্যাতিমান নিউরোসার্জন অধ্যাপক ডা. এল.এ. কাদেরী গত ২৯ শে আগস্ট, ২০২১ খ্রী: রোববার ইন্তেকাল (ইন্নালিল্লাহি ওয়া নিল্লাহি রাজিউন) করেন। খ্রীস্ট সালের ২৯ শে আগস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ৫৭০ খ্রীস্টাব্দের ২৯ শে আগস্ট আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) জন্মগ্রহণ করেন বলে জানা যায়।
বড়ভাই অধ্যাপক এল.এ. কাদেরী প্রায় দু’বছর ধরে অসুস্থ। আমরা জীবিত দু’ভাই আবুল মোহছেনাত কাদেরী (সেখু) ও আমিও অসুস্থ। দু’ভাই এডভোকেট আবুল হাসনাত কাদেরী ও এডভোকেট নুরুল আনোয়ার কাদেরী আগেই ইন্তেকাল করেছিলেন। গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০২১ খ্রীস্টাব্দ তারিখে বড়ভাইয়ের উডল্যান্ডস্থ চেম্বারে জোহরের নামাজের পর প্রায় সোয়া একঘন্টা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়। তিন ভাই একত্রে অসুস্থ হওয়া নিয়েও কথা হয়। এক পর্যায়ে আমি বললাম- “বেঁচে থেকে আর কি লাভ? আমার জীবন কারো উপকারে তো আসছে না, আমি পারছিনা কারো কোন উপকার করতে। আল্লাহপাক আমার হায়াত কমিয়ে আপনার হায়াত বাড়িয়ে দিলে মানুষ অনেক উপকার পেত”। এ বাক্যটি শুনার পর তিনি কিছুক্ষণ স্তব্দ হয়ে রইলেন। তাঁর চোখে বিন্দু বিন্দু পানি দেখা গেল। তখন তিনি হিসেব করে বললেন- “তুই আমার ১৫ বছরের ছোট, মরে যেতে চাস কেন? কি এত কষ্ট? আর কোনদিন এ ধরণের কথা বলবি না”। বড়ভাই ছিলেন বিবেক, বুদ্ধি ও অনুভূতির বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ মানুষের অন্যতম, মানবীয় গুণে গুণান্বিত, পরোপকারী। পরোপকার মানুষের মহৎ গুণ। সমাজ জীবনে একজন মানুষকে কথায়, আচরণে, লেনদেনে অপর মানুষের সাথে সম্পৃক্ত হতে হয়। মানুষ পৃথিবীতে একজনের দুঃখে-সুখে অপরজন সহযোগী। বিপদে একজন অপরজনকে উদ্ধারে এগিয়ে আসে। মানুষের সাথে মানুষের সহযোগিতা ও সহমর্মিতামূলক কাজকে পরোপকার বলা হয়। আমার বড়ভাই অধ্যাপক ডা. এল.এ. কাদেরী সত্যিকার অর্থেই একজন শ্রেষ্ঠ পরোপকারী মানুষ। একটি ডবষভধৎব ঝঃধঃব হিসেবে বাংলাদেশকে গড়তে তিনি পরোপকারে নিজেকে সর্বদা সামিল রেখেছিলেন সকল মত পার্থক্যের উর্ধ্বে। রাজনৈতিক বিশ্বাস তাঁর ছিল দেশের মানুষের স্বাধিকার, মুক্তি ও অধিকারকেই ঘিরে। তদানিন্তন পাকিস্তান আমলে ১৯৬৩-৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত এম.বি.বি.এস ফাইনাল পরীক্ষায় সারাদেশের মধ্যে স্বর্ণপদকসহ প্রথম শ্রেণীতে প্রথমস্থান অধিকার করলেও পাকিস্তানী কায়েমী স্বার্থবাদী ও সামরিক শাসকচক্র বিরোধী গণঅধিকার আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় তাঁর স্কলারশীপ আটকে রাখে- যা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে মেধাবী ছাত্রদের উপর ভিন্ন মতের সরকারী মহলের আক্রোশ চরিতার্থ করার একটি ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত। পরবর্তীতে গণতান্ত্রিক সরকারগুলোও তাঁকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে পারেনি- সরকারের ভিতর ঘাপটি মেরে বসে থাকা সুবিধাবাদী, স্বার্থানেষী ও নীতিজ্ঞানশূন্য ব্যক্তিদের কুট-কৌশলের কারণে।
বড়ভাই দেশের চিকিৎসা অঙ্গনে যে অবদান রেখেছেন, নিউরোসার্জারীর মত কঠিন সাবজেক্ট নিয়ে পেশাগত উৎকর্ষ সাধন ও সম্প্রসারণে যে আলোকোমূল ভূমিকা রেখেছেন- তা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য অনুসরণীয়- অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি পেশাজীবী, স্বেচ্ছাসেবী, জনকল্যাণ, সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, মকতব ও গরীব-দুঃখীদের অকাতরে দান করেছেন।
তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে শ্রদ্ধেয় ও অনুবর্তী অনেকেই ইতিমধ্যে লিখেছেন। আরো অনেকেই লিখছেন। ছোটভাই হিসেবে উনার জীবনের বিভিন্ন বিষয় ও কীর্তি যতটুকু সম্ভব সংরক্ষণ করার চেষ্টা করেছি এবং যারা লিখছেন তারা সংগ্রহ করে কাজে লাগাচ্ছেন, লিখছেন।
বড়ভাই অধ্যাপক ডা. এল.এ. কাদেরীর বড়গুণ ছিল অপ্রিয় হলেও সাহস করে সত্য বলা এবং অন্যকে সত্য বলতে উৎসাহ দেয়া। তিনি বলতেন-“আধুনিক মনোবিজ্ঞান ও নিজরোসায়েন্সের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল: সত্য কথা বলা এবং সত্য বলার জন্য উৎসাহ দিতে সহজাত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ না করে ভূল বিশ্বাস ও মিথ্যা দ্বারা ক্রমাগত প্রভাবিত হতে থাকলে মানুষের মস্তিস্কের ডড়ৎশরহম ঝঃৎঁপঃঁৎব বা কর্মকাঠামো বদলে যায়। ফলে মানুষের মধ্যে সত্য বলা, শোনার আগ্রহ ও সামর্থ্য দুই’ই কমে যায়”।
তিনি আল্লাহকে রাজী-খুশী করার জন্য নীরবে, গোপনে অনেক দান করেছেন। অনেকেই অনেক কথা বলেছিলেন, তিনি এসব কথা পরোয়া করেননি। উনার আরেকটি গুণ ছিল সবাইকে নিয়ে মৈত্রীর বন্ধনে কাজ করা। শক্তি প্রয়োগ করে মত বিরোধ থেকে বিরত রাখা তিনি পছন্দ করতেন না। কোন বিষয়ে কারো ভিন্নমত থাকলে তিনি গুরুত্ব দিয়ে শুনতেন এবং সুখকর ও গ্রহণযোগ্য সমাধানের চেষ্টা করতেন। তিনি সবসময় আলোর পথে চলেছেন। ১৯৮৮-৯১ পর্যন্ত তিনি সভাপতি থাকাকালীন সময়ে বি.এম.এ চট্টগ্রাম, শাখার কমিটি দেখলেই এটা বুঝা যায় সব মতাদর্শের চিকিৎসক উনার কমিটিতে ছিলেন।
সকলেই জানেন, ভাইয়ের সম্পর্ক রক্তের, সন্তানের সম্পর্ক অঙ্গ প্রত্যঙ্গের। একি পিতা-মাতার সন্তান আমরা। মুরব্বী, আত্মীয় ও সতীর্থদের অনেকেই পরামর্শ দিয়েছেন বড়ভাই সম্পর্কে একটি ঈড়সঢ়ৎবযবহংরাব ৎিরঃব-ঁঢ় তৈরির জন্য। এখন আমার মানসিক ও শারীরিক অবস্থা অবশিষ্ট নেই তা তৈরি করার।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছিলেন- “সন্তানের উপর পিতার যে ধরনের অধিকার রয়েছে ছোট ভাইয়ের উপরও বড়ভাইয়ের সে ধরনের অধিকার রয়েছে, তেমনি পিতার উপর সন্তানের যে ধরনের অধিকার রয়েছে বড়ভাইয়ের উপরও ছোটভাইয়ের সে ধরনের অধিকার রয়েছে”। বড়ভাই এবং আমরা ছোটভাইরা একত্রিত হলে হুজুর (সঃ) এর ‘এই হাদিসটি নিয়ে মাঝে মধ্যে আলোচনা করতাম’ এবং এটা অনুসরণ ও প্রতিপালন কতটুক করেছি তা যতেœর সাথে আলোচনা করতাম।
আল্লাহপাক বড়ভাই অধ্যাপক ডা. এল.এ. কাদেরীর সকল নেক আমলগুলো কবুল করে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন।
দেশে-বিদেশে, বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারা বড়ভাইয়ের ইন্তেকালে শোক প্রকাশ, দোয়া ও সমবেদনা জানিয়েছেন তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
নিবন্ধক: মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক, ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন অব প্রেস কাউন্সিলস্ নির্বাহী পরিষদ ও বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সাবেক সদস্য। অধ্যাপক ডা. এল.এ. কাদেরীর ছোটভাই।
* নুর মোহাম্মদ *
ঈদ হাঁসতে শেখায়, ভালবাসতে শেখায় ত্যাগের মহিমা শেখায় এরকম আদর্শ ধারণ পুর্বক সারাবিশ্বে পালিত হয় পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।
সম্ভবত ১৯৮৯ – ৯০ সালের
এক কোরবাণীর ঈদ হবে যার স্মৃতি এখনো স্মরণীয় হয়ে আছে আমাদের সবার কাছে।
তখন আমার আব্বা মরহুম সামশুল আলম, চাচা মরহুম আহমদ মিয়া, চাচা মরহুম ছালে আহমদ, চাচাত ভাই মরহুম আবু ইউসূফ ও চাচাত ভাই মরহুম আবু তৈয়ব ছিলেন।
তিন গেরস্ত মিলে সেবার কোরবাণী দেওয়া হচ্ছিল।
আব্বা সামশুল আলম , চাচা ছালে আহমদ ও চাচা আহমদ মিয়া মিলে কোরবানির ঈদের গরু কেনার জন্য একটি বাজেট করল।
টাকার পরিমাণ খুব সম্ভবত
তিন গেরস্ত মিলে ১০ -১২ হাজার হবে।
চাচা ছালে আহমদ ও চাচাত ভাই আবু তৈয়ব সারাদিন রাউজানের নোয়াপাড়ার চৌধুরীহাট
বাজার ঘুরতে ঘুরতে হয়রান।
গরু মিলছে না।
শেষমেষ হঠাৎ তিনটা বলদ গরু কিনবার সিদ্বান্ত নিলেন।
কিনলেন লম্বা শিং ওয়ালা তিনটা বলদ গরু।
দাম তিন – চার হাজার টাকা করে মোট বার হাজার টাকা।
বর্তমান সময়ে ঐ তিনটা গরুর দাম প্রায় দুই লক্ষ বিশ হাজারের বেশী হবে।
তাহলে চিন্তা করেন কি হারে বিভিন্ন জিনিসের দাম বেড়েছে।
এখন অত্যাধিক দাম, পারিবারিক সমস্যা প্রভৃতি কারণে আর নিয়মিত ঘরে আর কোরবানি করা হয়ে উঠে না।
হয়তো বেশী টাকা দিয়ে কোরবানী করতে না পারলে ও পবিত্র ঈদুল আজহার মূল শিক্ষা – নীতি বাস্তব জীবনে ধারণ করার চেস্টা করি।
২০১২ সালের পর আর কোরবানির পশুর অত্যাধিক দামের কারণে কোরবানি দেওয়া যায়নি । সবশেষ মনে হয় ২০/৩৫ হাজার টাকা দিয়ে কোরবানি দেওয়া হয়েছিল।
এখন তো কোরবানির যাবতীয় কাজের জন্য লাখ টাকা বাজেট করতে হয়।
যাক সে সময় বাড়ীতে গরু তিনটা আনার সময় বাড়ীর ছোট ছেলে – মেয়েদের মিছিল আর হৈ -চৈ এ বাড়ী মুখরিত হয়ে উঠল। সবাই কিছুটা বিরক্ত হয়ে আবার খুশি হল।
কোরবানির দিন গরু তিনটা জবাই এর পর একসাথে মিশিয়ে চাচা আহমদ মিয়ার আগের অভিজ্ঞতা মোবাবেক তিন ঘেরস্তের মধ্য আর কোরবানির নিয়মে অন্যদের ভাগ করে বন্টন করে দিল।
আজকে আব্বা সামশুল আলম, চাচা আহমদ মিয়া, চাচা ছালে আহমদ, চাচাত ভাই আবু ইউসূফ, চাচাত ভাই মোহাম্মদ তৈয়ব উনারা বেঁচে নেই।
তাঁহারা না থাকলে তাদের গুণ, আদর্শ, সততা, সখ্য, ঐক্যোর শিক্ষা এখনো আমাদের অন্তরে চির জাগরুক।
এই পাঁচ জন শান্তপ্রিয় মানুষ কখনো কারো অনিস্ট করেনি।
তাদের সময়ে বাড়ীতে, পরিবারে সবাই মিলেমিশে সকল কাজে এক দৃঢ়, আন্তরিক বন্ধন সৃস্টি করেছিল।
★ লেখক : সহ – সভাপতি,
রাউজান রাইটার্স ক্লাব।
বাপুজী_কেক
– বলছি দাদা , একটা কেক কিনে দিন না ? খাই । ওই বাপুজী কেক । ওটা ই ভালো লাগে । ক্ষিদে পাচ্ছে ।
একটু অবাক হবার মতো ই প্রশ্ন । এতো সুন্দরী । বিবাহিত বলে ই মনে হচ্ছে । এতো ভালো , দামি চুড়িদার সালোয়ার পরা একজন মহিলা , এই বালি হল্ট স্টেশনে হঠাৎ করে এমন প্রশ্ন করলে তো একটু অবাক লাগেই ।
– হ্যাঁ । খান না । আর কি খাবেন ? চা । একটু চা খান ।
– হ্যাঁ । খেতে ই পারি । এই সন্ধের সময় একটু চা না খেলে আবার আমার মাথা ধরে ।
– তা , যাবেন কোথায় ? সঙ্গে কে আছে ? টাকা র ব্যাগ কি হারিয়েছে ?
– একসঙ্গে অনেকগুলো প্রশ্ন করে ফেললাম । ক্ষমা করবেন ।
– না না । মনে করবো কেনো । যাবো ব্যাঙ্গালোর । ছেলের কাছে । ছেলে তো ওখানে ইসরোর ইন্জিনিয়ার । সঙ্গে কাউকে দরকার নেই তো । ব্যাঙ্গালোর এ পৌঁছে গেলেই ছেলে গাড়ি নিয়ে নিতে আসবে । সেডান কার । খুব আরাম এর । আর টাকা তো আমার লাগে না । এই তো ফ্লাইটে উঠলেই এয়ারহোষ্টেস রা খাবার এর প্যাক দেবে । অনেক কিছু থাকে । চিকেন স্যান্ডুইচ , ফিঙ্গারচিপস , আরও কতো কি । আমি তো সব খেতে ও পারি না । আগের বার আমার বাবুসোনা র জন্য ভ্যানিটি ব্যাগ এ করে নিয়ে গিয়েছিলাম । কিন্তু বাবুসোনা খুব রেগে গিয়েছিলো জানেন । বলে কিনা খেতে না পারলে ফেলে দিয়ে আসতে । তবু বাড়িতে এসব না নিয়ে আসতে । আচ্ছা , আপনি ই বলুন , খাবার কেউ ফেলে দেয় ? তাই এবার ঠিক করেছি , এয়ারপোর্ট এর বাইরে গরীব মানুষ দেখলে দিয়ে যাবো । আসলে , বাবুসোনা যখন ছোটো ছিলো , তখন আমি একা কোথাও গেলে , যা খেতাম তাই নিয়ে আসতাম ওর জন্য । তা সে ফুচকা হোক বা রোল , কিংবা আলুর চপ । অভ্যাস টা রয়ে গেছে এখনও ।
সব কেমন ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে । বালি হল্ট স্টেশন । এদিকে ব্যাঙ্গালোর । ফ্লাইট । কোথাও তো একটা মিসলিঙ্ক হচ্ছে । কিছু একটা মস্ত গোলমাল । আমার একটা ট্রেন চলে গেল । কিন্তু এই মহিলা কে ছেড়ে যেতে ও পারছি না । দেখে ই মনে হচ্ছে ভালো পরিবার এর মহিলা । সবকিছু ঠিকঠাক । যেমন সুন্দর , তেমন ভদ্র ও বিনয়ী কথাবার্তা । অথচ , কোনো কিছুই যেন মিলছে না । কি যে করি ! সন্ধ্যা নেমে আসছে । এরপর রাতের বেলা এই স্টেশন গুলো নরক হয়ে যায় । পুলিশ , আর পি এফ যেনো ঝুলনের মাটির পুতুল । থাকাও যা , না থাকাও তা । আর এমন সুন্দরী মহিলা একা থাকলে যে কি কি দুর্গতি হতে পারে , তা ভেবে ই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে । অথচ , আমার যাওয়ার ও খুব তাড়া । সন্ধ্যা ৭ টায় আমার একটা জরুরী মিটিং আছে । কি যে করি !
– বলছি , আর এক ভাঁড় চা খাবেন নাকি ?
– হ্যাঁ , খেলে ভালো হতো । তবে ওই প্যাকেট এর বাদাম ভাজা একটু খাবো । ওটা আমার খুব ভালো লাগে ।
– আচ্ছা ।
– ও ভাই । দুটো বাদাম এর প্যাকেট দেবেন ?
– এই যে দাম টা । ( ফিসফিস করে ) বলছিলাম ( বাদাম ওয়ালা কে ) এই মহিলা কে একটু গল্প করে ব্যাস্ত রাখতে পারবেন ? বোধহয় ওনার মাথায় কিছু গোলমাল হচ্ছে । একটু অসংলগ্ন কথাবার্তা । আমি একটু স্টেশন মাস্টার কে গিয়ে রিপোর্ট করে দেখি কিছু করা যায় না কি ! আপনার মোবাইল নম্বর টা দিন , আমি আপনাকে রিং করে দি । যদি অসুবিধা হয় আমাকে ফোন করবেন । আর আপনার ব্যাবসায় যেটুকু ক্ষতি হবে আমি পুরন করে দেবো ।
– কি বলছেন দাদা । বাদাম বিক্রি করি বলে কি বিবেক টা ও বিক্রি করি ? আপনি যান । আমি আছি ।
নিশ্চিন্ত হলাম । বাদাম ওয়ালা মানব ( রিং করার সময় ট্রু কলার এ ওই নামটাই দেখাচ্ছিলো ) এর সঙ্গে মহিলা জমিয়ে গল্প করতে শুরু করেছে । আমি গেলাম স্টেশন মাস্টার এর ঘরে । অনেক বোঝানোর পর, তিনি বললেন , বালি হল্ট স্টেশনে মহিলা দের রাখার মতো কোনো ব্যাবস্থা নেই । আর পি এফ থাকলেও ফিমেল নেই । তিনি একটাই কাজ করতে পারেন , হাওড়া র গাড়ি তে তুলে দিতে পারেন । হাওড়া তে ফিমেল আরপিএফ আছে । ওরা যদি কোনো ব্যাবস্থা নেয় । বুঝতে পারলাম যে উনি দায়িত্ব টা এড়িয়ে যেতে চাইছেন । স্টেশন মাস্টার আরও বললেন যে , কতো লক্ষ লক্ষ মানুষ এই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করছে । সবাইকে কি আর এতো দেখাশোনা করা যায় ? শেষমেশ অনেক অনুরোধ এর পর তিনি আমার সঙ্গে যেতে প্রস্তুত হলেন ।
স্টেশন মাস্টার এই নাম এর সাথে মাষ্টার মশাই টা কেনো জুড়ে রয়েছে জানি না । এনার সঙ্গে কথা বলে মনে হোলো , জীবনের ক্ষেত্রে ইনি মাষ্টার নয় , এক ফাঁকিবাজ ছাত্র । যে নাকি অন্য দের টুকলি করে ই জীবন চালাতে চান । চোতার বাইরে প্রশ্ন এলে ডাহা ফেল । এই এখন যেমন এসেছে আর কি । একজন মহিলা কিছু অসুবিধা র মধ্যে পড়েছে । তাকে কিভাবে সাহায্য করা যায় না ভেবে , কি করে , কতো তাড়াতাড়ি ঘাড় থেকে নামিয়ে দেওয়া যায় , তার জন্য নানা কায়দা ।
( স্টেশন মাস্টার ) – ম্যাডাম , কোথায় যাবেন ?
( মহিলা ) – ব্যাঙ্গালোর । বললাম তো !
– সঙ্গে কে আছে আপনার ?
– কেউ না ।
– বাড়ি কোথায় ?
– দূর্গাপুর ।
– তা , বালিহল্টে নামলেন কি করে ? এখানে তো দূর্গাপুর এর কোনো ট্রেন থামে না ?
– থামলো তো ! আমি তো এয়ারপোর্ট যাবো ।
– আপনার মোবাইল নাম্বার ? বা আপনার বাড়ির কারো নাম্বার ?
– ৯৮৩০… । নাঃ মনে পড়ছে না । আমার মোবাইল খুব দামী । ওটা বাড়িতে রেখে এসেছি ।
( স্টেশন মাস্টার এবার আমার উদ্দেশে । )
– দেখেছেন তো । কিভাবে এবার আমি এনার ঠিকানা খুঁজে বের করবো বলুন ? তার চেয়ে ওনাকে বালি মেন স্টেশন এ নিয়ে চলুন । আমি হাওড়া কে ফোন করে দেবো , আর ওনাকে হাওড়ার ট্রেন এ তুলে দেবো । আমার অনেক কাজ আছে । অনেক ট্রেন বার করতে হবে । মালগাড়ি পাশ করতে হবে । আপনার জন্য আমায় শো কজ হতে হবে দেখছি ।
( এবার মানব বাদাম ওয়ালা বললো ) । যদি আপনাদের অনুমতি হয় , আমি এই দিদি ভাই কে আমার বাড়ি তে আজ নিয়ে যাই। আমার বাড়িতে বৌ আর আমার মেয়ের সঙ্গে আজ রাত টা থেকে যাবে । কাল না হয় আমি পুলিশ এর কাছে গিয়ে দেখবো কি করা যায় । এই নিন আমার আধার কার্ড এর ল্যামিনেশন । আপনারা মোবাইল এ ফটো তুলে রেখে দিন ।
স্টেশন মাস্টার তো যেনো হাতে চাঁদ পেলেন । আমরা তাই করলাম । দেখলাম বাদাম ওয়ালা র নাম , ‘ মানব চন্দ্র ‘ বাড়ি , বালি সর্দার পাড়া । ইচ্ছে না থাকলে ও সেই প্রস্তাব ই মানতে হোলো । আমায় মিটিং এ যেতে ই হবে । অথচ , ওই মহিলা কে ছেড়ে ও ফেলে যেতে ইচ্ছে করছে না। বিদায় নেওয়ার আগে বললাম ।
– ম্যাডাম । এই মানব বাবুর সঙ্গে যান। উনি আপনার ফ্লাইট ধরিয়ে দেবেন । আর ব্যাঙ্গালোর পৌঁছে আমায় একটা খবর দেবেন । দেখা হবে আবার ।
বলে আমি পরের ট্রেন ধরলাম । আর মানব তার দিদি ভাই কে নিয়ে চললো । কটা টাকা ই বা হয় বাদাম বিক্রি করে । অথচ মনে প্রানে কতো ধনী । এতো বড়ো চাকরি করে আমি যা করতে পারলাম না , ওই মানব তা অনায়াসেই করে দেখালো । আজকের মতো তার রোজগার পন্ড ।
রাতে বাড়ি ফিরে ও চিন্তা যায় না । রাত প্রায় এগারোটায় ফোন করলাম মানব কে ।
– হ্যালো ! কি খবর ?
– চিন্তা করবেন না দাদা । দিদি ভাই খেয়ে দেয়ে আমার বউ আর মেয়ের সঙ্গে জমিয়ে গল্পো করছেন । আমি কাল সকালে ই থানায় যাবো । আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ুন । কাল একটা বন্দোবস্ত হবে ঠিক ই ।
– একটু নিশ্চিন্ত হলাম । এখনও পর্যন্ত তথাকথিত অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের মধ্যে ই বোধহয় কিছু মানবিক রূপ খুঁজে পাওয়া যায় । আর আমার মতো , স্টেশন মাস্টার এর মতো অকাল কুষ্মান্ড রা কুটিল রোবটের মতো জীবন কাটাচ্ছি । সমাজের অদৃশ্য অমানবিক শক্তি ই আমাদের চালিত করে ।
পরের দিন ছুটি নিয়ে গেলাম বালি । যার শেষ ভালো , তার সব ভালো । গিয়ে দেখলাম মানব এর বাড়িতে তার বৌ এর শাড়ি পড়ে তাদের ঘর ঝলমল করে বসে আছেন সেই মহিলা । বাড়ির বাইরে একটা গাড়ি দেখেছিলাম । ভেতরে বসে ওই মহিলার বাবা । অতি ভদ্র , বিনয়ী । বাড়ি দক্ষিনেশ্বর এর বাচষ্পতি পাড়া । ওনার বাবা বললেন ,
– ব্যাবসায়ী পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলাম । ওদের অনেক দিন পর্যন্ত কোনো সন্তান হয় নি । এক টা ছোট এক্সিডেন্ট এ মাথায় চোট লাগে । সেই অপারেশন করাতে নিয়ে যাই ব্যাঙ্গালোর । কিন্তু অপারেশন আনসাকসেসফুল হয় । স্মৃতি শক্তি ওলটপালট হয়ে যায় । মাঝে মাঝে এরকম বেরিয়ে পড়ে পথ হারিয়ে ফেলে ।
– কিছু কিছু আমার মেয়ে ঠিক বলে , কিছু কিছু কল্পনা । আমার কাছে ই থাকে । পাড়ার লোকেরা ও খুব ভালোবাসে । খুব মিশুকে ছিলো তো আমার মেয়ে । কিন্তু কি দূর্ভাগ্য । পড়ালেখা য় খুব ভালো ছিলো । ইসরোর ইন্জিনিয়ার হওয়ার শখ ছিলো । স্পেস টেকনোলজি র ওপর কাজ করার ইচ্ছে ছিলো ওর । আমিই একপ্রকার জোর করেই ধনী পরিবারে বিয়ে দিই । যাতে ও সুখী হয় । কিন্তু , কি ভবিতব্য দেখুন ! ওর এই অবস্থার জন্য ওর হাজব্যান্ড ডিভোর্স এর মামলা করে , এবং পেয়েও যায় ।
– কাল আপনারা না থাকলে যে কি হোতো কে জানে ? আজ বালি থানা থেকে আমাদের থানায় ফোন যায়। আমি সাথে সাথেই চলে আসি । এসে খুব শান্তি পেলাম । আপনাদের যে কি বলে ধন্যবাদ দেবো ?
– আমি আর কি করতে পারলাম ? করলেন তো মানব বাবু ।
– হ্যাঁ । ওনার কথা তো কিছু বলার ই নেই । আমার মেয়ে যেনো তার নিজের ভাই এর বাড়ি তেই রয়েছে । আমি তো মানব কে অনুরোধ করছি , যে আমার একটা ছোট্ট ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির ফ্যাক্টরি আছে । পেশায় আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার । মানব যদি নিজের মনে করে ওখানে একটা দায়িত্ব নেয় , তাহলে আমি ও একটু নিশ্চিন্ত হই , আর আমার মেয়েও তার একটা ভাই পায় । মানব কিছূতেই রাজি হচ্ছে না । দেখুন না আপনি বলে যদি রাজি করাতে পারেন ।
মা , ওদের একটা গান শোনা না ?
কাল সকাল পর্যন্ত আমরা কেউ কাউকে চিনতাম না । আর আজ যেনো সকলে আত্মীয় হয়ে গেছি । এখনও বোধহয় এতো অবিশ্বাস , অনাচার এর মধ্যে ও পৃথিবীটা বহাল তবিয়তে চলছে । ঋতু পরিবর্তন হচ্ছে । সূর্য উঠছে । চাঁদ উঠছে । ফুল ফুটছে । বৃষ্টি হলে মাটির সোঁদা গন্ধ এখনও পাওয়া যাচ্ছে । এখনও বাপুজী কেক কেউ খেতে ভালো বাসে , ক্লাব স্যান্ডুইচ বাদ দিয়ে । শত বিচ্ছেদ সত্ত্বেও এখনও মন ভালো হওয়ার মতো যথেষ্ট ঘটনা ঘটে ।
কালকে মহিলা যে সব কথা বলছিলেন , আজ তা পরিষ্কার হয়ে গেলো । ব্যাঙ্গালোর । ইসরো । ইত্যাদি ইত্যাদি ।
বাবার অনুরোধ এ মেয়ে তখন গান শুরু করে দিয়েছে …..
” ভাইয়ের মায়ের এত স্নেহ , কোথায় গেলে পাবে কেহ , ও’মা তোমার চরণ দুটি , বক্ষে আমার ধরি ….”
আমার চোখটাকে সোজা শক্ত , টান টান করে রেখে দিয়েছি । জলরাশি জমতে দেবো না । আসলে তো ভেতরে ভেতরে আনন্দ হচ্ছে আমার । তাই না ?
❤সুজয় শঙ্কর ❤
রবিবার, ১১ জুলাই, ২০২১
আমাদের দেশে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা না থাকায় বর্জ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে । নদীর তলদেশে পলিথিন বর্জ্যের কারণে পাহাড়ী কন্যা কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং প্রকল্প ভেস্তে গেছে । চাকতাই খাল ভরাটের ফলে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের হাজার কোটি টাকা জলে ভেসে গেছে । অথচ সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছাড়া এ সংকট নিরসন সম্ভব নয় । উন্নত বিশ্বে বর্জ্য একটি সম্পদ । রিসাইক্লিং পদ্ধতিতে তার থেকে জৈব সার সহ কতো মূল্যবান পণ্য উৎপাদিত হয় । মানবাধিকার ও সুশাসন কর্মী হিসেবে ইউরোপ, আমেরিকা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফরকালে তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আমাকে আকৃষ্ট করেছে । আসলে জনগণকে আইনের মাধ্যমে সচেতন ও সম্পৃক্ত করতে না পারলে যত প্রকল্পই হাতে নেয়া হোক না কেন তা সাফল্যের মুখ দেখবে না । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ উন্নত বিশ্বের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দেখেছি প্রতিটি বাড়ীতে ৪টি গার্বেজ বক্স থাকে । এর একটি পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্যে । যা রিসাইক্লিং হয়ে নানা পণ্য উৎপাদিত হয় । আরেকটি বক্স থাকে পচনশীল বর্জ্য যেমনঃ তরিতরকারি ফলমূল ইত্যাদির খোসা,উচ্ছিষ্ট অংশ, যেগুলো দিয়ে মূল্যবান জৈব সার তৈরী হয় । আরেকটি বক্স থাকে কাঁচ, টিন জাতীয় পণ্য বর্জ্যের জন্যে । পেপার জাতীয় বর্জ্যের জন্যে একটি স্বচ্ছ ব্যাগ বা বস্তা যা আবার রিসাইকেল হয় । গাছের গুড়ি বা টুকরো নির্মাণ সামগ্রী রশি দিয়ে জালের মতো গিট দিয়ে ফেলে রাখা হয়, যা সিটি কর্পোরেশন নিয়ে যায় । কোনটার সাথে কোনটা মেশানো যাবে না । মেশালে পর্যাপ্ত জরিমানা গুনতে হয় । নগর ব্যবস্থাপনায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই চ্যালেঞ্জিং । জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে শহরাঞ্চলে মানবসৃষ্ট বর্জ্য তৈরি হচ্ছে এবং সেসাথে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে । সমন্বিত সম্পন্ন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তিনটি নীতি প্রয়োগ করা হয় । তিনটি নীতি হলো- Reduce (কমানো), Re-use (পুনব্যবহার) এবং Recycle (পুনশ্চক্রীকরণ) । কিছু অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল কারনে সমন্বিত সম্পন্ন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অবশ্যই প্রবর্তনের প্রয়োজন । যেমন- ক) একটি শহর, শহরের পার্শবর্তী এলাকা সমূহের জীবাণু চক্র নিয়ন্ত্রণ অর্থাৎ ফাঙ্গাল, ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়াল জার্ম সাইকেল নিয়ন্ত্রণ । ব্যক্টেরিয়াল ব্যাধি, ক্যান্সার ইত্যাদি মরন ঘাতী রোগ বালাই প্রতিকার এবং প্রতিরোধ কে সামনে রেখে এই ব্যবস্থাপনার কর্ম পরিধি সাজানো হয় । খ) নদী দূষণ মুক্ত রেখে পুরো খাদ্য চক্রকে (সাধু পানির মাছ, অন্যান্য ইনল্যান্ড ওয়াটার এর প্রান চক্র) বিষাক্ততার হাত থেকে রক্ষা (প্রতিকার এবং প্রতিরোধ) করা । গ) ভু-গর্ভস্ত সুপেয় পানির গভীরতা কে রাষ্ট্রের এবং দরিদ্র জনসমষ্টির উত্তোলন কিংবা পিউরিফিকেশন সাধ্যের নিয়ন্ত্রনে রাখা । ঘ) উন্মুক্ত এবং প্রবাহিত জলীয় (পুকুর, খাল, বিল, নদীর) উৎসের পানিকে রিসাইকেল এবল রাখার বাধ্যবাধকতা । ঙ) কৃষি ভূমির অণুজীব চক্র কে ভেঙ্গে ফেলার হাত থেকে রক্ষা, অতি দীর্ঘ মেয়াদে জমির উর্বরতা রক্ষা । চ) আবর্জনার সমন্বিত এবং ক্লাসিফাইড ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করে জৈব সার তৈরির (এমনকি ওয়েস্ট ল্যান্ডফিল গ্যাস তৈরির ইকনোমিক প্রকল্প) প্রকল্প হাতে নিয়ে দেশে ওরগ্যানিক চাষাবাদের ক্ষেত্র বৃদ্ধি করা । মেগা সিটি ম্যানেজমেন্ট চালু করতে হলে দেশ ও নগরের বর্জ্য প্রথমে উৎস অনুসারে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে ক্লাসিফাই করে নিতে হবে । এরপর ময়লা-আবর্জনার সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার পৃথক এবং সমন্বিত মডেল সাজাতে হবে । উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একসাথে তিনটি রঙ্গের ডাস্টবিন সিস্টেমের ব্যবহার রয়েছে । আবার কোন কোন দেশে ৪টি ডাস্টবিনেরও ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে । এই ডাস্টবিন ৩টি প্রত্যেক বাড়ির সামনে সারিবদ্ধভাবে দেয়া থাকে । বাড়ির ব্যবহৃত আবর্জনাসমূহ ৩টি ভাগে ভাগ করে ফেলা হয়ে থাকে বিনগুলোতে । বর্জ্য নিষ্কাশন গাড়ি রাতে এসে বর্জ্যগুলো ৩ভাগে কালেকশন করে নিয়ে যায় । আসুন জেনে নিই তিনটি বিন সিস্টেম সম্পর্কে । উন্নত বিশ্বের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তারা ৩টি রঙ্গের ডাস্টবিন ব্যবহার করেন । যেমন- ১) সবুজ ডাস্টবিন/Organics for compost (২৪০লিটার) যেখানে উদ্যান জৈব ফেলা হয় । এখানে বাগানে জন্মানোর সমস্ত জৈব বর্জ্য এই বাক্সে রাখা হয় । যেমন- ঘাস, সংবাদপত্রের কাটিয়া রাখা অংশ, আগাছা (উদ্ভিদ সহ) ডানা, লাঠি, ছাঁটাই, কাটিং এবং ফ্রুটস, গাছ বাদাম ইত্যাদি ।এই বিনের বিষয়বস্তুগুলি হেন্ডারসন বর্জ্য রিকভারি পার্ক/জায়গাতে মিশ্রিত করার জন্য প্রেরণ করা হয় । ২) হলুদ ডাস্টবিন/Recycling (২৪০লিটার) এখানে পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য ফেলা হয় ।এই বিনের বিষয়বস্তুগুলিকে পুনরুদ্ধারের সুবিধায় সুয়েজপেন্সে প্রেরণ করা হয় যেখানে সেগুলি আলাদা করা হয় এবং পুনর্ব্যবহারের জন্য প্রেরণ করা হয় । সমস্ত শক্ত প্লাস্টিকের টব, বোতল, প্লাস্টিকের পাত্র, সমস্ত গ্লাস বোতল, জার, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ক্যান, এলইডি লাইট, পিচবোর্ড, কাগজ, খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন, ফয়েল পেপার, ব্যাটারি, মোবাইল ফোন, প্রিন্টার কার্তুজ এবং হালকা বাল্বগুলি, স্প্রে পেইন্ট, রাসায়নিক, গ্যাসের বোতল, অ্যারোসোল ক্যান এবং অন্যান্য বিপজ্জনক গৃহস্থালী বর্জ্য অপচনশীল বর্জ্য ইত্যাদি ফেলা হয়, যা পুনর্ব্যবহারের জন্য পুনরুদ্ধার পার্কে প্রেরণ করা হয় ।আপনি আপনার হলুদ-লিডযুক্ত রিসাইক্লিং বিনটিতে নিম্নলিখিত আইটেমগুলি নিষ্পত্তি করতে পারেন: ৩) লাল ডাস্টবিন/Rubbish (১৪০লিটার) সাধারণ বর্জ্য ফেলা হয় ।অ-পুনর্ব্যবহারযোগ্য সাধারণ খাদ্যের বর্জ্য, স্ক্র্যাপ খাবারের সাথে দূষিত পদার্থ, যেমন কাগজের তোয়ালে, সার্ভিট, টিস্যু, কাগজ প্লেট, পিজ্জা বাক্স, চিপস পেপার, পেপার প্লেট, ডাইপার, ব্যান্ড-এইড, মৃত্তিকা আইটেম, কাগজ কাটা/কুচি, স্যানিটারি আইটেম, সুতি উলের এবং সুতির উলের কুঁড়িচুল, সফট প্লাস্টিক, পুরনো পোষাক ইত্যাদি । এই বিনের সামগ্রীগুলি বর্জ্য পুনরুদ্ধার পার্কে/জায়গা প্রেরণ করা হয় । উন্নত রাষ্ট্রের জন্য বর্জ্যের উৎস বিচ্ছেদ অত্যন্ত গুরত্বপুর্ণ একটি বিষয় । হলুদ ও লাল ডাস্টবিন বর্জ্যের উৎস বিচ্ছেদ করে এবং বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ করে এটি রাষ্ট্রের জন্য ব্যয় হ্রাস এবং পুনর্ব্যবহারের হার বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকর পরিচালনা । সবুজ ডাস্টবিনটির জৈবিক উপাদানগুলি পূর্বে সাধারণ বর্জ্য বাক্সের সাথে অন্যান্য সাধারণ গৃহস্থালী বর্জ্যের সাথে স্থাপন করা হয় এবং আঞ্চলিক রিসোর্স পুনরুদ্ধার কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়, সেখানে সেগুলি নিম্ন মানের মানের কম্পোস্টে প্রক্রিয়া করা হয় । এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উত্পাদিত গাছের শিকড়ের চারিধারে রক্ষিত ভেজা খড়-পাতা ইত্যাদি উচ্চমানের কম্পোস্ট তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং সাথে পচনশীল বর্জ্যের ব্যাকটেরিয়া ও দূষণের মাত্রা হ্রাস করে । বাংলাদেশের পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আইনি কাঠামো গড়ে উঠেছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের উপর ভিত্তি করে । এছাড়াও জাতীয় সংসদে প্রণীত আইন, নিয়মাবলী, উপ-আইন ও বিভিন্ন বিধিমালা নিয়ে এ ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হয়ে থাকে । গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ (১) ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে যে, জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবেন । এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ২০১১ সালের ৩০ জুন পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ১৮ (ক) ধারা যোগ করা হয় ।নতুন এই ধারায় বলা হয়েছে যে, “রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন । বাংলাদেশে পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সর্ম্পকিত যে সকল পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আইন, বিধিমালা ও আদেশ রয়েছে সেগুলো হলো- (১) বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫, (২) বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত), ২০০০, (৩) বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত), ২০০২, (৪) বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত), ২০১০, (৫) পরিবেশ আদালত আইন, ২০০০, (৬) পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭, (৭) পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা (সংশোধিত ফেব্রুয়ারি), ১৯৯৭, (৮) পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা (সংশোধিত আগস্ট), ১৯৯৭, (৯) পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ (সংশোধিত ২০০৫), (১০) পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ (সংশোধিত ২০১০) ।বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত যেসকল বিধিমালা ও আদেশ রয়েছে সেগুলো হলো- (১) চিকিৎসা-বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা, ২০০৮, (২) বিপদজনক বর্জ্য ও জাহাজ ভাঙ্গার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১১, (৩) ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক পণ্য হইতে সৃষ্ট বর্জ্য (ই-বর্জ্য) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৭ (খসড়া) । বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫’ অনুযায়ী ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা’র খসড়া তৈরি করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর । জৈব ও অজৈব বর্জ্য আলাদা করা বিষয়ে খসড়া নীতিমালায় একটি বিধান রাখা হয়েছে । বিধানে বলা হয়েছে, যদি কেউ জৈব ও অজৈব বর্জ্য আলাদা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদেরকে সর্বোচ্চ ২,০০০ টাকা জরিমানা করা হবে এবং একই কাজ পুনরায় করলে সর্বোচ্চ ৪০০০ টাকা জরিমানা করা হবে । বর্জ্যকে রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে সম্পদে পরিণত করতে নতুন নীতিমালা বিশেষভাবে সহায়তা করবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে । উন্নত দেশগুলোতে যেমন সুইডেন ও নরওয়েতে বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহারযোগ্য লাভজনক ভিন্ন বস্তুতে রূপান্তরিত করা হচ্ছে । এজন্য তারা অন্য দেশ থেকেও বর্জ্য আমদানিও করছে । বাংলাদেশেরও বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত । বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে বর্জ্য সংরক্ষণ, নিরপেক্ষায়ণ, নিষ্ক্রীয়করণ অথবা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে ব্যবহার উপযোগী বিভিন্ন নতুন জিনিস বানানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত ।এতে পরিবেশের সাথে সাথে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে দেশ ও দেশের মানুষ । উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মত মেগাসিটি করতে হলে সকল স্তরে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে । ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার । তাই ছোটবেলা থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে । এখানে সরকার ময়লা ব্যবস্থাপনার ‚ওয়েস্ট রি-ইউজ” ‚ওয়েস্ট রি-সাইকেল” এবং ‚ওয়েস্ট রিডিউস” কন্সেপ্ট জনগণকে বুঝাবে, এই শিক্ষা প্রাইমারি স্কুলে দেয়া বাধ্যতামূলক করা দরকার । ময়লা ব্যবস্থাপনার জ্ঞান বাচ্চাদের মাঝে নিয়ে আসতে হবে, পারিবারিক এবং প্রাইমারি শিক্ষার স্তরেই! এ শিক্ষা দিতে হবে পরিবার থেকেই । পরিবার থেকে যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলার শিক্ষা ছাত্র-ছাত্রীদের ছোটবেলা থেকেই সচেতন হতে সাহায্য করবে । তাছাড়া স্কুল, কলেজ, বিশ্ব-বিদ্যালয় পাঠ্যপুস্তকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নির্দিষ্ট অধ্যায় সংযুক্ত করলে এবং গণমাধ্যমে যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সচেতনামূলক অনুষ্ঠান প্রচারসহ কার্যকর বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে শিশুসহ আমাদের সকলকে সচেতন করে তুলতে হবে । নগরের দূষণ, অপরিচ্ছন্নতা এবং জলাবদ্ধ মানুষেরই তৈরি । তাই ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন এবং ইমপ্লিমেন্টেশন এর কারিগরি বিষয় গুলো গুরুত্ব সহকারে আমলে নেয়া খুব দরকার । ময়লার ক্ল্যাসিফিকেশন এবং “রি-ইউজ,” ‚রি-সাইকেল,” ‚রিডিউস,” কন্সেপ্ট নাগরিকের মাঝে ছড়িয়ে দেয়াঃ পচনশীল, অপচনশীল ক্ল্যাসিফাইড ময়লা সম্পর্কে সিটি ম্যানেজমেন্ট নাগরিককে সচেতন করতে টিভি প্রমোশনে যেতে হবে ।প্যাকেজিং সহ পলিব্যাগের দাম আতিমাত্রায় বৃদ্ধির যত সম্ভব পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে । পাশাপাশি কাগজের প্যাকেট ও পাটের ব্যাগ তো ভারি পণ্যের মড়ক হিসেবে বাধ্যতামূলক করতেই হবে । পচনশীল এবং অপচনশীল উভয় পদ্ধতির সুবিধা রেখে বাজার গুলোর ময়লা ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে হবে । পশু জবাইকে বাসা বাড়ি থেকে সরিয়ে বাজার ভিত্তিক কিংবা আংশিক ভাবে খামার ভিত্তিক করা যায় কিনা সেটা নিয়ে নেয়া পরিকল্পনা ম্যাচিউর করতে হবে ।তবে পশু জবাই স্কুল মাঠ কেন্দ্রিক করা যাবে না কোনভাবেই, এতে জীবাণু সংক্রমণে বাচ্চাদের স্বাস্থ্য গত ঝুঁকি দেখা দিতে পারে ।আর এভাবেই নিরাপদ, সুস্থ-সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করে যেখানে সেখানে বর্জ্য ফেলার চর্চা বন্ধ হবে ব্যক্তি থেকে বৃহত্তর পর্যায়ে । আসুন জীবন গড়ি, পরিবেশবান্ধব দেশ গড়ি ।
লেখকঃ আইনজীবী, সুশাসন ও মানবাধিকার কর্মী।
নিউজ ডেস্কঃ
প্রাণঘাতী মহামারী করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হতে পারে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করতে পারে বলে জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানিয়েছেন।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও আংশিকভাবে খুলে দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে— এমন তথ্য পাওয়া গেলেও সে চিন্তা থেকে সরে এসেছে অধিদফতর। বিদ্যালয়ের রক্ষণাবেক্ষণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, প্রশাসনিক কাজের জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হবে না, বরং করোনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য এগুলো বন্ধ রাখা হবে।
এদিকে, গতকাল সোমবার (১ জুন) ছাত্রভর্তি, বিজ্ঞানাগার, পাঠাগার, যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মতো প্রশাসনিক কাজে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অফিস সীমিত আকারে খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে অসুস্থ ও গর্ভবতী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনও জানা গেছে, মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে অনেক শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এমন অবস্থায় প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই পরীক্ষা দেবে— এমন চিন্তাও সরকারের রয়েছে।
বর্তমান করোনা ভাইরাস-পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নানাভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। টেলিভিশনে পাঠদান সম্প্রচার নিয়ে প্রতিদিন শিক্ষকদের মনিটরিং করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কারণে নতুন কোনো কাজে শিক্ষকদের যুক্ত করতে রাজি নয় প্রাথমিক শিক্ষার নীতিনির্ধারকরা।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিই’র মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ আজ মঙ্গলবার ২ জুন গণমাধ্যমে তিনি জানান, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মতো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দফতরিক গুরুত্বপূর্ণ তেমন কোনো কাজ থাকে না। প্রতিষ্ঠান খোলার প্রয়োজনও পড়ছে না। আংশিক খোলার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হলেও তা বাতিল করা হয়েছে। করোনার এমন পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মাঠে থেকে প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মনিটরিং করছেন, তাই নতুন করে শিক্ষকদের কোনো দায়িত্ব দেয়া হবে না।
তিনি আরো জানান, ঈদুল ফিতরের জন্য আগামী ৬ জুন পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি রয়েছে। অন্যদিকে সরকারিভাবে ১৫ জুন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। তবে ১৫ জুনের মধ্যে করোনা মহামারি স্বাভাবিক হওয়ার কোনো নমুনা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয়ও খোলা হবে না। এজন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য বিদ্যালয় বন্ধ রাখার চিন্তা-ভাবনা চলছে।‘বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে ছুটি বৃদ্ধি করে নতুন নির্দেশনা জারি করা হবে। সেখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার জন্য বলা হতে পারে’ বলেও জানান তিনি।
মহাপরিচালক বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত সংসদ টেলিভিশনে শ্রেণিপাঠ সম্প্রচার করা হচ্ছে। সেখানে প্রতিদিন শিক্ষকরা বাসার কাজ দিচ্ছেন। বাসায় বসে অভিভাবকদের সহায়তায় সাময়িক পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তাই করোনার পরিস্থিতির কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের ওপর তার প্রভাব পড়বে না।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, আমাদের মূল কাজ বাচ্চাদের পড়াশোনা করানো ভাইরাস। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠান খোলার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।তবে উপবৃত্তির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্বাভাবিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে চলছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি এবং কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেটিও জানা যাচ্ছে না। তাই আমরা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। এ বিষয়ে অধিদফতর সিদ্ধান্ত নেবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মো. শহীদ উল্লা খন্দকার-
রাজনৈতিক বলয়ে থেকেও বিজ্ঞানী হিসেবে নিজের গবেষণা নিয়ে আলাদা জগৎ তৈরি করেছিলেন যিনি, তিনি আমাদের প্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া। বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ ধাপ পরমাণু নিয়ে স্বপ্ন দেখার মতো কাজটি তিনি করে গেছেন। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য এমন একজন বিজ্ঞানী অপরিহার্য ছিল। বাংলাদেশের আণবিক পাওয়ার প্ল্যান্টের এই স্বপ্নদ্রষ্টা আজ আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই পরমাণু বিজ্ঞানী নানাভাবে বাঙালি জাতির পরম আপনজনে পরিণত হয়েছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করে বাংলাদেশকে প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিকভাবে উন্নত দেশে পরিণত করার এক স্বপ্ন ছিল তাঁর। যা তিনি তাঁর জীবন ও কর্মে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন আমাদের। এই মহান বিজ্ঞান সাধকের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৯ সালের ৯ মে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬৭ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই পরমাণু বিজ্ঞানী তাঁর জীবদ্দশায় আন্তরিকতা, প্রতিভা ও মানবিক গুণাবলি দিয়ে চারপাশের মানুষকে যেমন মুগ্ধ করেছেন, তেমনই ভালোবাসা ও দেশপ্রেম দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে জাতির জন্য কাজ করে গেছেন। জাতির জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার জন্য ড. ওয়াজেদ মিয়া সবার জন্য আদর্শ হয়ে থাকবেন এবং তাঁর অবদানের জন্য মানুষ তাঁকে চিরকাল স্মরণ করবে।
স্বপ্নবান এই বিজ্ঞানী বলেছিলেন, ‘একটা উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে সম্পদ অপ্রতুল সেখানে একমাত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিই জাতির জন্য সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে পারে।’ কথায় নয়, তাঁর কাজেও আমরা সেই প্রতিফলন দেখেছি। তাঁর জীবনের সব কর্মময় বছরই তিনি নিবেদন করেছেন বিজ্ঞান এবং তার পেছনের মানুষগুলোকে মহিমান্বিত করার কাজে।
পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এই বিজ্ঞানী সম্পর্কে যতই জেনেছি—অবাক হয়েছি ততই। বারবার আমার মানসপটে তাঁর অবয়বটি দেখতে পেয়েছি এ রকম—তিনি যেন ক্লান্তিহীন। বিজ্ঞানকে সামাজিক উন্নয়নে আরো অর্থবহ করে তোলার জন্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে এগিয়ে নেওয়ার নতুন নতুন সুযোগের সন্ধানে তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ। ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনে ছিল তাঁর কাজের শেষ দিন। ৩৬ বছরের কর্মস্থলের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সে দিনটিতেও তাঁর কর্মোদ্যম একটুও স্তিমিত হয়ে যায়নি। একটা মহৎ উদ্দেশ্যের প্রতি অবিচলভাবে প্রতিশ্রুত থাকার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিলেন তিনি।
১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞান সাধক ছাত্রজীবনেও তুখোড় মেধাবী ছিলেন। মেধার কারণে তিনি একের পর এক সাফল্যের সঙ্গে সব শিক্ষা বৈতরণি পার হন। যা সমসময়ে সহপাঠীদের কাছে তাঁর আলাদা পরিচয় তৈরি করে দেয়। তাঁর জীবনের দিকে দৃষ্টি নিপতিত করলে দেখা যায়, মেধাবী ছাত্র বা পরমাণু বিজ্ঞানী, এর বাইরেও অনেক গুণবাচক শব্দ ধারণ করেছিলেন তিনি। যা আমাদের এক মুগ্ধতার আবেশে তাঁকে নিয়ে ভাবতে উজ্জীবিত করে। তিনি ছিলেন নির্লোভ, নিভৃতচারী, নীতিবান, নিরহংকার, নির্ভীক, স্পষ্টবাদী, দৃঢ়চেতা, দেশপ্রেমিক, আদর্শবান, সৎ, সহজ-সরল, বিনয়ী, চরিত্রবান, যুক্তিবাদী, অজাতশত্রু ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন আদর্শ মানুষ। এত গুণে গুণান্বিত মানুষ কয়জন আছেন এই ভুবনে। ওয়াজেদ মিয়াকে প্রিয়জনরা ডাকতেন ‘সুধা মিয়া’ নামে। বাবা ছিলেন আবদুল কাদের মিয়া, মা ময়জু নেসা বিবি। রংপুরের পিছিয়ে পড়া জন্মগ্রাম ফতেহপুরেই বেড়ে উঠেন তিনি। মেধাবী হিসেবে ছোটবেলাতেই শিক্ষকদের দৃষ্টি কাড়েন তিনি।
১৯৬৩ সালের ৯ এপ্রিল তিনি তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে যোগ দেন। এরপর ১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিউক্লিয়ার অ্যান্ড হাই এনার্জি পার্টিক্যাল ফিজিকসে পিএইচডি করেন।
এই সাধক বিজ্ঞানের সঙ্গে কতটা জড়িয়ে ছিলেন, তা তাঁর কর্মজীবনের দিকে তাকালেই স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে নিউক্লিয়ার ল্যাবরেটরিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা ছাড়াও ইতালির ট্রিয়েসটের আন্তর্জাতিক পদার্থবিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্রে একাধিকবার গবেষণা করেছেন। তিনি গবেষণা করেছেন ভারতের পরমাণু শক্তি কমিশনেও। তাঁর গবেষণা ও জ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে। ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনি তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির কার্লসরুয়ে শহরের আণবিক গবেষণাকেন্দ্রে আণবিক রি-অ্যাক্টর বিজ্ঞানে উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত তিনি ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের দিল্লির ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা ট্র্যাজেডির পর গোটা পরিবারের হাল ধরেন ওয়াজেদ মিয়া। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত নির্বাসিত জীবনে ভারতীয় পরমাণু শক্তি কমিশনের বৃত্তির টাকায় সংসার চালিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ চাকরি করেছেন পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান পদে। ১৯৯৯ সালে অবসরগ্রহণ করেন চাকরি থেকে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ঢাকার বিক্রমপুর জগদীশ চন্দ্র বসু সোসাইটি তাঁকে ১৯৯৪ সালে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু স্বর্ণপদক এবং ম্যাবস ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকা ১৯৯৭ সালে পদক প্রদান করে।
আজ বাস্তবায়নের পথে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। বলা যায় এটা তাঁর স্বপ্নেরই বাস্তবায়ন। বাংলাদেশের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পূরণ হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। সফল হবে বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার আমরণ প্রচেষ্টা এবং সুফল ভোগ করবে সারা দেশের মানুষ।’
ড. ওয়াজেদ মিয়াকে ব্যক্তিগতভাবে যাঁরা চিনতেন, কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা একবাক্যে তাঁর সততা ও মোহমুক্ততা নিয়ে প্রশংসায় মেতে ওঠেন। সহকর্মীদেরও উদ্বুদ্ধ করেছেন সৎ ও ন্যায়-নিষ্ঠাবান হওয়ার জন্য। তিনি নিজে ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থেকেও কোনো সুযোগ-সুবিধা নেননি। কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি। সর্বদা নিজস্ব বলয়ে থেকে নিজের যোগ্যতায় নিজ কর্মক্ষেত্রের পরিধিতে স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে কর্মজীবন শেষ করেছেন।
লেখক : সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়