নিউজ ডেস্কঃ
প্রাণঘাতী মহামারী করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হতে পারে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করতে পারে বলে জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানিয়েছেন।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও আংশিকভাবে খুলে দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে— এমন তথ্য পাওয়া গেলেও সে চিন্তা থেকে সরে এসেছে অধিদফতর। বিদ্যালয়ের রক্ষণাবেক্ষণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, প্রশাসনিক কাজের জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হবে না, বরং করোনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য এগুলো বন্ধ রাখা হবে।
এদিকে, গতকাল সোমবার (১ জুন) ছাত্রভর্তি, বিজ্ঞানাগার, পাঠাগার, যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মতো প্রশাসনিক কাজে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অফিস সীমিত আকারে খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে অসুস্থ ও গর্ভবতী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনও জানা গেছে, মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে অনেক শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এমন অবস্থায় প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই পরীক্ষা দেবে— এমন চিন্তাও সরকারের রয়েছে।
বর্তমান করোনা ভাইরাস-পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নানাভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। টেলিভিশনে পাঠদান সম্প্রচার নিয়ে প্রতিদিন শিক্ষকদের মনিটরিং করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কারণে নতুন কোনো কাজে শিক্ষকদের যুক্ত করতে রাজি নয় প্রাথমিক শিক্ষার নীতিনির্ধারকরা।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিই’র মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ আজ মঙ্গলবার ২ জুন গণমাধ্যমে তিনি জানান, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মতো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দফতরিক গুরুত্বপূর্ণ তেমন কোনো কাজ থাকে না। প্রতিষ্ঠান খোলার প্রয়োজনও পড়ছে না। আংশিক খোলার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হলেও তা বাতিল করা হয়েছে। করোনার এমন পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মাঠে থেকে প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মনিটরিং করছেন, তাই নতুন করে শিক্ষকদের কোনো দায়িত্ব দেয়া হবে না।
তিনি আরো জানান, ঈদুল ফিতরের জন্য আগামী ৬ জুন পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি রয়েছে। অন্যদিকে সরকারিভাবে ১৫ জুন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। তবে ১৫ জুনের মধ্যে করোনা মহামারি স্বাভাবিক হওয়ার কোনো নমুনা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয়ও খোলা হবে না। এজন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য বিদ্যালয় বন্ধ রাখার চিন্তা-ভাবনা চলছে।‘বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে ছুটি বৃদ্ধি করে নতুন নির্দেশনা জারি করা হবে। সেখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার জন্য বলা হতে পারে’ বলেও জানান তিনি।
মহাপরিচালক বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত সংসদ টেলিভিশনে শ্রেণিপাঠ সম্প্রচার করা হচ্ছে। সেখানে প্রতিদিন শিক্ষকরা বাসার কাজ দিচ্ছেন। বাসায় বসে অভিভাবকদের সহায়তায় সাময়িক পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তাই করোনার পরিস্থিতির কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের ওপর তার প্রভাব পড়বে না।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, আমাদের মূল কাজ বাচ্চাদের পড়াশোনা করানো ভাইরাস। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠান খোলার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।তবে উপবৃত্তির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্বাভাবিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে চলছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি এবং কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেটিও জানা যাচ্ছে না। তাই আমরা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। এ বিষয়ে অধিদফতর সিদ্ধান্ত নেবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মো. শহীদ উল্লা খন্দকার-
রাজনৈতিক বলয়ে থেকেও বিজ্ঞানী হিসেবে নিজের গবেষণা নিয়ে আলাদা জগৎ তৈরি করেছিলেন যিনি, তিনি আমাদের প্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া। বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ ধাপ পরমাণু নিয়ে স্বপ্ন দেখার মতো কাজটি তিনি করে গেছেন। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য এমন একজন বিজ্ঞানী অপরিহার্য ছিল। বাংলাদেশের আণবিক পাওয়ার প্ল্যান্টের এই স্বপ্নদ্রষ্টা আজ আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই পরমাণু বিজ্ঞানী নানাভাবে বাঙালি জাতির পরম আপনজনে পরিণত হয়েছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করে বাংলাদেশকে প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিকভাবে উন্নত দেশে পরিণত করার এক স্বপ্ন ছিল তাঁর। যা তিনি তাঁর জীবন ও কর্মে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন আমাদের। এই মহান বিজ্ঞান সাধকের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৯ সালের ৯ মে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬৭ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই পরমাণু বিজ্ঞানী তাঁর জীবদ্দশায় আন্তরিকতা, প্রতিভা ও মানবিক গুণাবলি দিয়ে চারপাশের মানুষকে যেমন মুগ্ধ করেছেন, তেমনই ভালোবাসা ও দেশপ্রেম দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে জাতির জন্য কাজ করে গেছেন। জাতির জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার জন্য ড. ওয়াজেদ মিয়া সবার জন্য আদর্শ হয়ে থাকবেন এবং তাঁর অবদানের জন্য মানুষ তাঁকে চিরকাল স্মরণ করবে।
স্বপ্নবান এই বিজ্ঞানী বলেছিলেন, ‘একটা উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে সম্পদ অপ্রতুল সেখানে একমাত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিই জাতির জন্য সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে পারে।’ কথায় নয়, তাঁর কাজেও আমরা সেই প্রতিফলন দেখেছি। তাঁর জীবনের সব কর্মময় বছরই তিনি নিবেদন করেছেন বিজ্ঞান এবং তার পেছনের মানুষগুলোকে মহিমান্বিত করার কাজে।
পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এই বিজ্ঞানী সম্পর্কে যতই জেনেছি—অবাক হয়েছি ততই। বারবার আমার মানসপটে তাঁর অবয়বটি দেখতে পেয়েছি এ রকম—তিনি যেন ক্লান্তিহীন। বিজ্ঞানকে সামাজিক উন্নয়নে আরো অর্থবহ করে তোলার জন্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে এগিয়ে নেওয়ার নতুন নতুন সুযোগের সন্ধানে তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ। ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনে ছিল তাঁর কাজের শেষ দিন। ৩৬ বছরের কর্মস্থলের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সে দিনটিতেও তাঁর কর্মোদ্যম একটুও স্তিমিত হয়ে যায়নি। একটা মহৎ উদ্দেশ্যের প্রতি অবিচলভাবে প্রতিশ্রুত থাকার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিলেন তিনি।
১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞান সাধক ছাত্রজীবনেও তুখোড় মেধাবী ছিলেন। মেধার কারণে তিনি একের পর এক সাফল্যের সঙ্গে সব শিক্ষা বৈতরণি পার হন। যা সমসময়ে সহপাঠীদের কাছে তাঁর আলাদা পরিচয় তৈরি করে দেয়। তাঁর জীবনের দিকে দৃষ্টি নিপতিত করলে দেখা যায়, মেধাবী ছাত্র বা পরমাণু বিজ্ঞানী, এর বাইরেও অনেক গুণবাচক শব্দ ধারণ করেছিলেন তিনি। যা আমাদের এক মুগ্ধতার আবেশে তাঁকে নিয়ে ভাবতে উজ্জীবিত করে। তিনি ছিলেন নির্লোভ, নিভৃতচারী, নীতিবান, নিরহংকার, নির্ভীক, স্পষ্টবাদী, দৃঢ়চেতা, দেশপ্রেমিক, আদর্শবান, সৎ, সহজ-সরল, বিনয়ী, চরিত্রবান, যুক্তিবাদী, অজাতশত্রু ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন আদর্শ মানুষ। এত গুণে গুণান্বিত মানুষ কয়জন আছেন এই ভুবনে। ওয়াজেদ মিয়াকে প্রিয়জনরা ডাকতেন ‘সুধা মিয়া’ নামে। বাবা ছিলেন আবদুল কাদের মিয়া, মা ময়জু নেসা বিবি। রংপুরের পিছিয়ে পড়া জন্মগ্রাম ফতেহপুরেই বেড়ে উঠেন তিনি। মেধাবী হিসেবে ছোটবেলাতেই শিক্ষকদের দৃষ্টি কাড়েন তিনি।
১৯৬৩ সালের ৯ এপ্রিল তিনি তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে যোগ দেন। এরপর ১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিউক্লিয়ার অ্যান্ড হাই এনার্জি পার্টিক্যাল ফিজিকসে পিএইচডি করেন।
এই সাধক বিজ্ঞানের সঙ্গে কতটা জড়িয়ে ছিলেন, তা তাঁর কর্মজীবনের দিকে তাকালেই স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে নিউক্লিয়ার ল্যাবরেটরিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা ছাড়াও ইতালির ট্রিয়েসটের আন্তর্জাতিক পদার্থবিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্রে একাধিকবার গবেষণা করেছেন। তিনি গবেষণা করেছেন ভারতের পরমাণু শক্তি কমিশনেও। তাঁর গবেষণা ও জ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে। ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনি তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির কার্লসরুয়ে শহরের আণবিক গবেষণাকেন্দ্রে আণবিক রি-অ্যাক্টর বিজ্ঞানে উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত তিনি ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের দিল্লির ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা ট্র্যাজেডির পর গোটা পরিবারের হাল ধরেন ওয়াজেদ মিয়া। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত নির্বাসিত জীবনে ভারতীয় পরমাণু শক্তি কমিশনের বৃত্তির টাকায় সংসার চালিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ চাকরি করেছেন পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান পদে। ১৯৯৯ সালে অবসরগ্রহণ করেন চাকরি থেকে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ঢাকার বিক্রমপুর জগদীশ চন্দ্র বসু সোসাইটি তাঁকে ১৯৯৪ সালে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু স্বর্ণপদক এবং ম্যাবস ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকা ১৯৯৭ সালে পদক প্রদান করে।
আজ বাস্তবায়নের পথে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। বলা যায় এটা তাঁর স্বপ্নেরই বাস্তবায়ন। বাংলাদেশের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পূরণ হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। সফল হবে বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার আমরণ প্রচেষ্টা এবং সুফল ভোগ করবে সারা দেশের মানুষ।’
ড. ওয়াজেদ মিয়াকে ব্যক্তিগতভাবে যাঁরা চিনতেন, কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা একবাক্যে তাঁর সততা ও মোহমুক্ততা নিয়ে প্রশংসায় মেতে ওঠেন। সহকর্মীদেরও উদ্বুদ্ধ করেছেন সৎ ও ন্যায়-নিষ্ঠাবান হওয়ার জন্য। তিনি নিজে ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থেকেও কোনো সুযোগ-সুবিধা নেননি। কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি। সর্বদা নিজস্ব বলয়ে থেকে নিজের যোগ্যতায় নিজ কর্মক্ষেত্রের পরিধিতে স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে কর্মজীবন শেষ করেছেন।
লেখক : সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়
সুভাষ চৌধুরী
মধ্যবিত্তরা চার্লি চ্যাপলিনের মতো
বৃষ্টিতে কাঁদে
যাতে কেউ না বুঝতে পারে
কারণ, হাসলে হাসে কেন?
কাঁদলে কাঁদে কেন?
কথা বললে কথা বলি কেন?
না বললে না বলি কেন?
আসলে মধ্যবিত্ত মানে
দোষের কোনো শেষ নেই
কষ্ট দিয়ে বলে, কষ্ট পেয়েছ?
এখন দৈব- দুর্বিপাকে পরে
অসহায়ত্ব আরো চরমে পৌছেছে
সুখ- দুঃখ, শখ আহ্লাদ
সবকিছু উপরে তুলে রেখে
হাসিমুখে সবার সামনে দাঁড়াতে হয়
মধ্যবিত্তের দুঃখ থাকতে নেই
কষ্ট থাকতে নেই
প্রেম- ভালোবাসা
পরিবার -পরিজন কিচ্ছু থাকতে নেই
মধ্যবিত্তের সন্তানরা খিদেয় কাঁদে না
তাদের জন্য আহারের প্রয়োজন পড়ে না
মধ্যবিত্তরা অদ্ভুত জীব
তাদের কাজ শুধু দেওয়া
তারপর একটা সময় হারিয়ে যাওয়া
মধ্যবিত্তরা অপেক্ষায় থাকে
কোনো একদিন হয়তো মূল্যায়ন হবে
আসলে মূল্যায়ন হয় না
কিন্তু এখন যে বড় দুঃসময় চলছে
মূল্যায়ন দূরে থাক
বাঁচবার উপকরণ চাই
এই যে মানুষ থেকে মানুষের দূরত্ব
এই দূরত্বই কাল হয়ে দাঁড়াল
এই মহামারির মৃত্যুর রণহুংকার
আসলে কোথায় গিয়ে থামবে
তার কোনো নির্ধারিত সময়ও নেই
মধ্যবিত্তের কথা কেউ লিখছে না
কেউ বলছে না
বললেও কেউ শুনছে না
হাত ধুচ্ছেন ঘন ঘন
এই বুঝি কেউ এল
টাক টাক শব্দ হচ্ছে
এ বুঝি দিয়ে গেল
না তো কেউ তো এলো না
হৃদয়ে কারো এখনো আলো জ্বলেনি
না সরকার না বেসরকার
এ এক ঘোর অমানিশা
বিষাদের রাত্রি, দহনের কাল
অন্য সবার মত
মধ্যবিত্তেরও একটা ঘর আছে
ঘরে বাবা, মা, ভাই, বোন
স্ত্রী, সন্তান সবই আছে
সৌভাগ্যবান হলে
বৃদ্ধ ঠাকুরদা- ঠাকুরমাও আছে
আজ ভালোবাসার সমস্ত মুখ গুলো
তাকিয়ে আছে
কিন্তু কর্মক্ষেত্র আজ অসহনীয়
অসহায়তার মধ্যে বিষন্ন জীবনযাপন
কাজকর্ম নেই তো, আয় রোজগার নেই
যে টুকটাক সাহায্য সহযোগিতা করতাম
সেটাও আজ বদ্ধ
সামাজিক মর্যদাও নেই
এই কথা কি পেট মানবে?
মানবে না
পেটে খাবার চাই
খাবারের জন্য দরকার টাকা
সেই টাকা কোথায় থেকে আসবে
মধ্যবিত্তরা কেউ জানে না
আমরা এক অসহায় অদ্ভুত জীব
প্রশাসন বলছে
ফোন করলে চলে আসবে খাবার
এমনিতে আসবে না?
আসলে আমরা সবাই অভিনয় শিল্পী
নাট্যকার, প্রযোজক, পরিচালক
আমরা নেপথ্য কুশীলব
এভাবে আলো ছাড়া
এত অন্ধকারে কি বাঁচা যায়?
সেই আলোর খোঁজে তাকিয়ে
অজস্র চোখ আজ নিদ্রাহীন
রাত্রি বেলা পশুপাখির ডাক শুনি
তারা মানুষকে কিছু বলছে
মানুষ ছাড়া
প্রকৃতিতে আরোও সন্তান আছে
আজ সবকিছু ঠিক থাকত
দয়ামায়াহীন নিষ্ঠুর এই পাষাণ
চীনা ভাইরাস করোনা যদি না আসত
ছত্রে ছত্রে শব্দে শব্দে হিংস্র মরণবীজ
মনকে প্রবোধ দিই, থামো
অপেক্ষা করো মৃত্যুহীন দিনের জন্য
এ এক মহৎ মরণের মাহাত্ম্যকীর্তন
প্রতিদিন কতবার মরছি
টিভিতে যখন বলে
এতজন সনাক্ত এতজনের মৃত্যু
তাহলে আক্রান্তের সংখ্যা কত?
তখন একবার মরি
ঘরে বাইরে অফিস আদালতে
এই ভাইরাস নিয়ে বাস করতে হবে
তখন একবার মরি
ত্রান বলো আর উপহার বলো
অবরুদ্ধ মধ্যবিত্তরা তো কিছুই পাচ্ছে না
তখন একবার মরি
মেয়ে যখন বলে
বাবা, ঘরে খাবার নেই
বুক কেঁপে উঠে
তখন একবার মরি
যখন গর্ভজাত সন্তানরা
সংক্রমিত হবার আতঙ্কে মা- বাবাকে
রাস্তায় ফেলে চলে আসে
তখন আরও একবার মরি
এভাবে চলছে মরণ মরণ খেলা
আসলে পরলোকগমন কাকে বলে
শেষ করে দেওয়ার জন্য
একটি মহামারিই যথেষ্ট
আজ সমস্ত ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত
তুমি মধ্যবিত্ত
তোমার সমস্ত সময় ও যৌবন
খেয়ে নিয়েছে যে, সে-ও মধ্যবিত্ত
পৃথিবী ভুলে গেছে তোমার অবদান
তোমার নাম মধ্যবিত্ত
আজ আমি অদ্ভুত এক
অসহনীয় অসহায়ের মত
সীমাহীন সীমানাহীন এক ঈশ্বরকে খুঁজছি
আমার প্রার্থনা শুনে
সে-ও মহাবিরক্ত হয়ে বলে উঠে
দেখো তোমার মাথার ওপরে
নীলকন্ঠের আকাশগঙ্গা দিয়েছি
পায়ের নিচে মায়ের মত মাটি দিয়েছি
বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার জন্য
উন্মুক্ত বাতাস, অক্সিজেন দিয়েছি
নদী, পাহাড়, অরণ্য দিয়েছি
তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তে
স্বাধীনতা দিয়েছি
আরো দিয়েছি স্বাধীন চিন্তা
ইচ্ছে, স্বপ্ন, প্রেম, ভালোবাসা
সব কিছুই তো দিয়েছি
আর কি চাই তোর হতভাগা মধ্যবিত্ত
বসে বসে কবিতা লেখ, আর গান শুন
নয়তো ধান কাটতে চল।
মুহাম্মদ আবু নাসের.. .. ..
সংযম ও ত্যাগের মাস হিসেবে পবিত্র রমজান মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত মর্যাদার। এবারের রমজান মাসে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের ছোঁয়াও রয়েছে। এখন আম-কাঁঠালের মৌসুম। বাংলা দেশের কয়েকটি অঞ্চলে রমজান মাসে মেয়েদের শ্বশুরবাড়িতে ইফতারি দেয়ার প্রচলন রয়েছে। আবার জ্যৈষ্ঠমাসে মেয়েদের বাড়িতে আম কাঁঠালসহ নানা ফল উপটৌকন দেয়ার চলও আছে। এ নিয়ে চলে বিরাট প্রতিযোগিতা। অনেক মেয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে চাপ দেওয়া হয়। তাদের দাবি অনুযায়ী দিতে না পারলে অনেক কটু কথা শুনতে হয় মেয়েকে। অনেকের সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও মেয়েদের সুখের জন্য শ্বশুর বাড়ির দাবি পূরণ করা হয়। রমজানে শ্বশুর বাড়ি থেকে ইফতারি এবং আম-কাঁঠালকে ‘ না ‘ বলার সামাজিক উদ্যোগ নেয়া আমার-আপনার-সকলের ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব। অনেকের শ্বশুর বাড়ির লোকজন হয়তো বেশি ধনী। তাদের জন্য এসব মামুলি ব্যাপার। কিন্তু এই কুসংস্কার আমাদের এমন বর্বর বানিয়েছে যে, অনেক পরিবারকে মেয়ের বাড়িতে ইফতারি /আম-কাঁঠাল পাঠানোর জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিতে হয়।কাতর হয়ে বলতে হয়, মেয়ের বাড়িতে ইফতারি/ আম-কাঁঠাল না পাঠালে মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকতে পারবে না, শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার সইতে হবে মেয়েটিকে।
ইফতারির ক্ষেএে আরেরকটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা হচ্ছে – ইফতারি কি দিয়ে নিয়ে যাবেন। মাইক্রো ভাড়া করবেন নাকি পিকআপ! যত বড় পরিবহন ব্যবহার করা যাবে, বিয়াই বাড়ির এলাকায় তাদের মুখ আরো বেশি উজ্জল হবে। এসব অসুস্থ মানসিকতা ছাড়া আর কিছু নয়।
যেহেতু অনেকাংশে ছেলে পক্ষের চাহিদাই মেয়ে পক্ষকে এসব করতে বাধ্য করে, তাই এসব বন্ধের প্রয়াস ছেলে পক্ষকেই আগে নিতে হবে। জানাতে হবে- ইফতারি কিংবা আাম- কাঁঠালের এই রেওয়াজ একটি কুসংস্কার ও সামাজিক অনাচার। এটি জুলুমবান্ধব সংস্কৃতি।
সামাজিক প্রথার নামে এই জোরপূর্বক ইফতার ও গ্রীষ্মের আম- কাঁঠাল আদান প্রদান বন্ধ হোক। একজন দরিদ্র বাবা কষ্ট করে তার মেয়েকে বড় করল। আবার বিয়ের জন্য মোটা অংকের টাকার বায়না মিটিয়ে, আসবাবপত্র দিয়ে ও অনেক অতিথিকে রসালো খাবার পরিবেশন করে কন্যাকে পাত্রস্থ করতে হয়। আবার এই গরিব বাবাকে ধার – দেনা করে রমজান মাসে বর পক্ষের চাহিদা মাফিক ইফতার সামগ্রী দিতে হয়। ইফতারের রেশ কাটতে না কাটতেই আবার আাম-কাঁঠাল দেয়ার পালা। কিন্তু সুদের বিনিময়ে টাকা এনে, আবার চাহিদামত আম- কাঁঠাল দিতে হয় আর সারা বছর ধরে সুদের ঘানি টানতে টানতে বেচারার প্রাণ ওষ্ঠাগত। কি নির্মম-অমানবিক এই কুপ্রথা,
এই কুসংস্কার দূর করা সামাজিক দায়িত্ব।
মোঃআবু মনসুর
মরতে মরতেই বেঁচে আছি
সমাপ্তির খাদে দাড়িয়ে
নিত্য নতুন সূচনা করছি
হারতে হারতে কষ্টটা ভুলে গেছি
অনেকবার জয়ী হয়েছি
বুঝে উটার সুযোগই হয়নি
কাঁদতে কাঁদতে অশ্রুহীন হয়ে পড়েছি
অজান্তে, অনেক হেসেছি
বুঝে উটার সুযোগই হয়নি
হাসির স্বাদটা কি
ভালবাসতে বাসতে নিংস্ব হয়েছি
বুঝে উটার সুযোগই হয়নি
কবে যে ভালবাসা পেয়েছি।
সময়ের রশিকে শক্ত হাতে ধরেছি
কবে যে সময় ছেড়ে দিয়েছে
বুঝে উটার সুযোগই হয়নি
জীবন উঠোনে আজ পরন্ত বৈকাল
চলতে চলতে এতদূর এসেছি
হারিয়েছি দূরান্তপনা শৈশব
কৈশোর, স্বর্নালী যুবা
বুঝে উটার সুযোগই হয়নি
স্বপ্ন দেখতে দেখতে
স্বপ্ন দেখাই ছেড়ে দিয়েছি
বুঝে উটার সুযোগই হয়নি
স্বপ্নের বাস্তবতা কি?
অজান্তে স্বপ্নের কপোত
উকি দিয়ে ফিরে যায়
এক আড্ডার ভিতর চলতে চলতে
কবে যে একা হয়েছি
বুঝে উটার সুযোগই হয়নি
চিন্তার আগুনে জ্বলতে জ্বলতে
অবিরত দগ্ধ হয়ছি
বুঝে উটার সুযোগই হয়নি।
ব্যাথার অনূভুতি কি???
অনিশ্চয়তার জ্বলে ভাসতে ভাসতে
কবে যে হয়ছি ঠিকানা বিহীন
বুঝে উটার সুযোগই হয়নি
চিঠি লিখে আত্মহরনের
খবরটুকু দিয়ে স্বজনদের
অব্যক্ত ব্যাথা হৃদগগনে ধারন
তবু
একমুটো ভালবাসা পাবার
ভীষন পিড়ায়
বুঝে উটার সুযোগই হয়নি
কবে যে আমি ফিরেছি
আমার প্রেয়সির বাহুতে
আমি বড়বেশী স্বার্থপর
আমি ভালবাসা পেতে চাই
আমি স্বপ্ন দেখতে চাই
আমি স্বপ্নের আকাশে
ঘুরি উড়াতে চাই
আমি আড্ডার ভিতর থাকতে চাই
আমি তবু চলে যাব
যেতে হবে দূর বহুদূর।————
মো: আবু মনসুর
মধ্যরাতের নির্জনতায় বড় একা আমি
প্রিয়রা যে যার মতো
গভীর নিদ্রায়
যে যার মতো স্বপ্নে বিভোর
অনাগতের জাল বুনছে
কেনো জানি
চোখটা ভুলেও বন্ধ করতে পারছিনা
কেমন জানি মনে হচ্ছে
ঘুমটা নির্বাসনে
আমার সাথে বৈরী ভাব।
মধ্যরাতের আকাশে
শুক্লপক্ষের বড় চাঁদটি যেন
মিষ্টি আলোর ঝলঝলে
প্রকৃতি হেসে যাচ্ছে
ঝোপঝাড় থেকে মাঝে মাঝে
কিছু নিশাচর প্রাণির আওয়াজে
যেন মনে হয়
আমার সাথে হয়তো
কোন কালের সখ্যতা ছিল
নতুবা
আমিও জেগে আছি ?
তারাও জেগে কেন ?
যান্ত্রিক নগরীর ব্যস্ত মানুষগুলো
দিনের শেষে ক্লান্ত শরীরে
ঢলে পড়েছে ঘুমের কোলে
রাতের বিছানায়
কতো আকুতি,কত মিনতি
কত স্বপ্ন,কত আকাঙ্ক্ষা
দিনের শেষে কত স্বপ্নই ঝরে যায়
রাতের বিছানায় শুয়ে
জীবনের নাট্যশালায়
রং তুলি দিয়ে
কত রঙের সাজ সাজায়
কত ভাবনা
ঘুম চোখেই আসছে না
সেই নিশাচর প্রাণীরা
মধ্যরাতের এই নির্জনতায়
ভিন্ন ভিন্ন সুরে আওয়াজ করছে
কেন জানি মনে হচ্ছে
তাদের সাথে এক
অবিচ্ছেদ্য অভিন্নতা রয়েছে
মধ্যরাতের চিন্তার চিতায়
তুষের আগুন জ্বলছে
অনেক পিছনে ফিরে যাওয়া
যাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে
শৈশব-কৈশোর-যৌবন
তারা কি আজ
কেউ আছে পাশে
যাদের সাথে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ ছিল
শৈশব কৈশোর জীবন যৌবন
তারা তো সম্পর্কের দৃঢ় হাত
ছেড়ে দিয়ে মিলে গেছে নীলিমায়
এত যোগ-বিয়োগের লীলাখেলায়
সব সইতে হয় মনকেই
সব যন্ত্রণার দায়
শুধু মনকেই নিতে হয়
এ এক চিরন্তনী নিয়ম
কত দৌড়ঝাঁপ,কত সাধনা
কত পরিশ্রম,কত সফলতা
মধ্য রাতের নির্জনতার মত
সম্পূর্ণ একা ,এটাই সত্য.
২০০১ সালে
ঘুরে এলামঃ আজমীর-দিল্লী-আগ্রা
মোঃ আবু মনসুর
“কেউ ফিরে না খালী হাতে, গেলে খাজার দরবারে”
খাজা গরীবে নেওয়াজ মঈনুদ্দিন চিশতি
(রঃ) এর মাজার আজমীর শরীফ
জিয়ারতের প্রবল ইচ্ছা দীর্ঘদিন ধরে।
যদিওবা আমার মতাে মধ্যবিত্ত ঘরের
লােক বিদেশ ভ্রমণ করাটা অনেকটা
“বামন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়ানাে’র
মত”। তবু যে মনে বড় আশা হযরত খাজা
গরীবে
জেয়ারতের। এই প্রবল মনের টানে গত
এপ্রিল মাসে চুড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নিলাম
আজমীর যাবার। আমার সাথে আজমীর
যাবার সফরসঙ্গী হলাে বন্ধু পারভেজ
রফিক, ইয়াকুব এবং রফিকের সদ্য
বিবাহিত সহধর্মিনী মিসেস লাভলী।
সফরসঙ্গী বন্ধুদের আর্থিক অবস্থা আমার
চাইতে অনেক ভাল। তাই তারা একটি
নির্দিষ্ট তারিখ লক্ষ্য করে প্রস্তুতি নিতে
লাগলাে রওনা হবার। তাদের নির্দিষ্ট
তারিখ আমাকেও জানিয়ে দিল। ২৬
এপ্রিল বেলা দু’টা চল্লিশ মিনিটে তথা
নির্ধারিত সময়ে আমাদের যাত্রা শুরু
হলাে। এসি কোচ; নিয়মতান্ত্রিকভাবে
দরজা বন্ধ। শুধু গ্লাসের ভিতর দিয়ে
বাইরের প্রকৃতি অবলােকন করছি। বেশ
কয়টি পত্রিকা এবং ম্যাগাজিন গাড়ীতে
চড়ার আগেই নিয়ে নিয়েছি। গাড়ী চলছে।
তার আপন গতিতে। কিছুক্ষণ পত্রিকা
ম্যাগাজিনে চোখ বুলাচ্ছি, কিছুক্ষণ
একমনা হয়ে বাইরের প্রকৃতির সাথে
সখ্যতা গড়ার চেষ্টা করছি। এসি কোচের
দরজা বন্ধ করে যখন যাত্রা শুরু হলাে
তখন থেকে কেমন জানি মনে হচ্ছে
আমরা যারা এসি কোচের যাত্রী সবাই
বাইরের জগত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা,
জনবিচ্ছিন্ন জীব। এভাবে ভাবনার রেশ
কাটতেই আমার বন্ধু রফিকের স্ত্রী
লাভলীর সাথে দুষ্টুমীর পালা। লাভলী
অত্যন্ত চঞ্চল এবং মুক্ত মানসিকতার
মেয়ে।মুক্তভাবে লাভলীর সাথে কথা
বলতে পারাটা এতাে লম্বা ভ্ৰমণের
বিনােদন হিসেবে সহায়ক হয়েছে।
এভাবে দীর্ঘ সতের ঘন্টা গাড়ীতে চড়ে
২৭ এপ্রিল সকাল সাতটায় বেনাপােল
পৌছলাম। একটানা গাড়ীতে চড়ে আমরা
সবাই ক্লান্ত। নয়টার সময় বেনাপােল
কাষ্টমস খুলবে। কর্মকর্তারা আসবেন।
দুই ঘন্টার বিশ্রাম পেলাম। এরিমধ্যে
আমরা নাস্তার পর্বটা সেরে নিলাম।
যথারীতি নয়টা বেজে গেলাে। আমরা
কাষ্টমস এর দিকে এগুলাম। কাষ্টমসের
কাজ সারতে হবে। প্রথমে অামরা
জনপ্রতি ৩২০ টাকা করে ভ্রমণ কর
দিলাম। কাষ্টমসে আমাদের পাসর্পোটে
ইমিগ্রেশন সিল করতে হবে। লাইনে
দাঁড়ালাম। লাইনেই চট্টগ্রামের পটিয়া
থানার একভদ্র লােক উনি কলকাতার
মেডিকেলে ডাক্তারী পড়ছেন। তাঁর সাথে
পরিচয় হলাে। তিনি আমাদের যথেষ্ট
সহযােগিতা করেছেন যা ভােলার নয়।
বেনাপােল কাষ্টমস কর্মকর্তাদের
ভারতগামী যাত্রীদের উপর এদের ওপেন
সিক্রেট চাঁদার হার রয়েছে।
বহির্ভূতভাবে এরা এ টাকা নিয়ে থাকে।
এই বিড়ম্বনার শিকার আমরাও হলাম।
এভাবে কাষ্টমস সেরে আমরা বেনাপােল
সীমান্ত পার হয়ে ৮০০ রুপি দিয়ে ভাড়া
করলাম একটা টেক্সি।
২৭ এপ্রিল বেলা দুইটার সময় পৌছলাম
কলিকাতার জাকারিয়া স্ট্রীটে। হােটেল
আমানিয়াতে উঠলাম। দুই ঘন্টা বিশ্রামে
খাওয়া দাওয়া সেরে নিলাম। বিকেল
চারটার সময় পিয়ারলি প্যালেস ট্রেনের
টিকেট কাউন্টারে গেলাম। দেখলাম
পরের দিনের টিকেট নেই। ইতােমধ্যে
সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোন ট্রেনে যাবাে।
রাজধানী এক্সপ্রেসে যেতে হলে ১৫০০
রুপি লাগবে। তাই আমরা টাকা কম
খরচের জন্য রাজধানী এক্সপ্রেস বাদ
দিয়েছি। কিন্তু দালাল মারফতে আমরা
২৮ এপ্রিলের “কালকা এক্সপ্রেসের
টিকেট নিলাম ৬০০ রুপি করে। ট্রেন
ছাড়বে সন্ধ্যা সাতটায়। যথারীতি সন্ধ্যা
সাতটায় হাজির হলাম হাওড়া রেল
ষ্টেশনে। হাওড়া রেল ষ্টেশন দেখার মত
একটা জায়গা। অনেকগুলাে প্ল্যাটফর্ম
একটা প্ল্যাটফর্ম মিস হলে ট্রেন মিস হবার
সম্ভাবনা। তবে যাত্রীদের সুবিধার্থে
কম্পিউটারাইজড তালিকা প্রিন্ট রয়েছে।
কত নম্বর ট্রেন কত নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে
ছাড়বে স্পষ্টভাবে কম্পিউটার তালিকা
আছে। সেই সুবাদে আমাদের কোন
অসুবিধা হয়নি। সন্ধ্যা সাতটায় কালকা
এক্সপ্রেসে উঠলাম। শ্রিপিং সিট এ-
সুবিধা আছে ঘুমানাে যাবে। আমরা
কলকাতা থেকে রওনা দিলাম দিল্লী
উদ্দ্যেশ্যে।
২৯ এপ্রিল রাত আটটায় আমরা দিল্লীতে
পৌছলাম। পঞ্চাশ রুপি দিয়ে টেক্সি ভার্া
নিলাম দিল্লি জামে মসজিদ। সেখানে
“হােটেল নাজ” এ উঠলাম।
যেহেতু ১ মে রওনা দেব আজমীর এর
উদ্দ্যেশ্যে একদিন অবসর-বিশ্রাম
পাওয়ার সুবাদে দিল্লী জামে মসজিদে
নামাজ পড়ার সুযােগ পেলাম। দিল্লী
জামে মসজিদ মুসলিম স্থাপত্যের এক
অনন্য নিদর্শন। এ মসজিদের আয়তন
অনেক বড়, তবে মসজিদের ময়দানটা
অনেক বড়। অনেক দামী পাথরে গড়া
সম্রাট আকবর কর্তৃক স্থাপিত এ দিল্লী
জামে মসজিদ। এ মসজিদে হযরত
মুহাম্মদ (সঃ) এর কদম মােবারক এবং
দাড়ি মােবারক রয়েছে। প্রতি ওয়াক্ত
নামাজ শেষে দর্শনার্থীদের পবিত্র কদম
মােবারক এবং দাড়ি মােবারক স্পর্শ
করার সুযােগ থাকে। এই সুবাদে হযরত
মুহাম্মদ (সঃ) এর কদম মােবারক এবং
দাঁড়ি মােবারক চুম্বন করার মহা সুযােগ
পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করলাম।
তবে
দিল্লী জামে মসজিদের বর্তমান চিত্র দেখে
আমার মনে এক প্রশ্নের উদ্রেক হলাে।
ভারতীয় সরকার কি মুসলিম স্থাপত্যের
প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করছেনা?
দিল্লী জামে মসজিদের সংস্কার কোন
সাধারণ জনগণের ব্যক্তিগত উদ্যোগে
করার ক্ষমতা পুরাে আওতার বাইরে
বিধায় সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা ছাড়া দিল্লী
জামে মসজিদের সংস্কার অসম্ভব বলে
আমার মনে হচ্ছে। দিল্লী জামে মসজিদে
আছর এর নামাজ পড়ে দিল্লীর লাল কেল্লা
দেখতে গেলাম। খুব সুন্দর স্থাপনা।
তৎকালীন
আভিজাত্যের স্থাপনা এ লাল কেল্লা।
সম্রাটদের শােবার ঘর, বাগান, বিচারের
আসন মানে পঞ্চায়েত মহল, এসব
অত্যাধিক আভিজাত্যের চিত্র দেখে মনে
হলাে এ সম্রাটরা রাজ্য শাসনের
পাশাপাশি অনেক শােষণ করেছে সাধারণ
জনগণকে।
১ মে নির্ধারিত রাত নয়টা পনের মিনিটের
আহমেদাবাগ এক্সপ্রেসে আজমীর যাবার
উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলাম। ট্রেনে বসে এক
আনন্দের ভাবনা এসে গেলাে। আজ দীর্ঘ
অনেক বছর যাবত আজমীর যাবার
আশা হৃদয়ে লালিত করেছি- হযরত
খাজা গরীবে নেওয়াজ মঈনুদ্দিন চিশতী(রঃ)
এর রওজা জেয়ারতের স্বপ্ন
অনেকদিনের। গাড়ী ছুটছে তার আপন
ছন্দময় গতিতে গন্তব্যের ঠিকানায়। আর
আমরা অপেক্ষায় কখন পৌছবাে আজমীর
শরীফ। ট্রেনে চড়ে ভাবছি আজ সত্যি
সত্যি আমার স্বপ্নের মহা প্রত্যাশার
জায়গা আজমীর যাচ্ছি।
এই ব্যাকুল আনন্দে কখন যে দীর্ঘ এগার ঘন্টা ট্রেনে
চড়ে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি। পরদিন
সকাল আটটায় আমরা আজমীর শরীফের
ষ্টেশনে নামলাম। টেক্সিতে করে আজমীর
শরীফের খাদেম জুনায়েদ মিয়া চিশতীর
বাসভবনে গিয়ে উঠলাম। আজমীর
শরীফে কোন হােটেলে থাকার চাইতে
জানাশুনা খাদেমদের ঘরে গেলে
খাওয়া জেয়ারতের যাবতীয় সুব্যবস্থা গুলি
খাদেমরাই করে থাকেন।
আমরা খাওয়া
দাওয়া সেরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিশ্রামই যেন ভাল লাগছেনা, এই মন শান্তি পাচ্ছে না
যতক্ষন না যাই হযরত খাজা গরীবে
নেওয়াজের পবিত্র রওজা জেয়ারত
করতে। জুনায়েদ চিশতী বেলা বারটায়
আমাদের রওজা শরীফে নিয়ে গেলেন।
আমরা ফুল এবং চাদর নিয়ে গেলাম
রওজা শরীফে। হযরত খাজা গরীবে
নেওয়াজ (রঃ) এর রওজায় ফুল ও চাদর
দিয়ে জোহরের নামাজ পড়লাম। প্রতিদিন জোহরের নামাজের পর থেকে কাওয়ালী আয়োজন করা হয়। এই কাওয়ালী গানের প্রতি প্রচন্ড দুর্বলতা আছে।
জীবনে আমার অনেক বড় স্বপ্ন ছিল খাজা
গরীবে নেওয়াজ (রঃ) এর দরবার শরীফে
কাওয়ালী গান শুনার। আল্লাহ্ আমার
সেই আশাপূর্ণ করেছে, আল্লাহর দরবারে
হাজার শুকরিয়া।
আমরা ৩ এপ্রিল আনা
সাগরে গেলাম। জলরাশি খুব পরিস্কার
খাজা গরীবে নেওয়াজ (রঃ)-কে যখন পৃথিরাজ এবং এর সৈন্যরা আনা সাগরের
পানি ব্যবহার করতে দিচ্ছিলনা, খাজা
গরীবে নেওয়াজ একটু রাগান্বিত হয়ে
এক মুরিদকে পাঠালেন আনা সাগরের
এক বদনা পানি আনতে। ঐ মুরিদ এক
বদনা পানি আনার সাথে সাথেই আনা
সাগর শুকিয়ে যায়। পরবর্তীতে এরা
আবার খাজা গরীবে নেওয়াজের নিকট
ক্ষমা প্রার্থনা
করলে তিনি ক্ষমা করে দেন।বদনার পানি আনা সাগরে ঢেলে
দিলে সাগর আবার পানিতে ভরপুর হয়ে
যায়। আছরের নামাজ পড়ে আবার বসে
গেলাম কাওয়ালীর আসরে।
আর আমাদের দেশীয়
কাওয়ালীর সাথে আজমীর শরীফের
কাওয়ালীর রয়েছে অনেক পার্থক্য।
আমরা ৪ এপ্রিল তারাগড় পাহাড়ে হযরত
মিরা সৈয়দ হােসেন দুলার মাজার
জেয়ারত করতে যাই।
পাহাড়ে যাবার সময় জীপ যােগে যাই।
এত উঁচু পাহাড়। জানতে পারলাম
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী
তারাগড় পাহাড়ে পানি এবং বিদ্যুৎ
সংযােগ করে দিয়েছেন। জেয়ারিত শেষে
আসার সময় হেঁটে হেঁটে আসি। নামার
সময় দেখি, হযরত খাজা গরিবে
নেওয়াজকে পৃথিরাজের যাদুকর যে বিরাট
পাথরটি নিক্ষেপ করেছিলাে, সেই পাথরটি
খাজা গরীবে নেওয়াজের কেরামতিতে
আটকে গিয়েছিলাে, সেই পাথরে খাজা
গরীবে নেওয়াজের আঙ্গুলের এবং ঘােড়ার
পায়ের ছাপ স্পষ্ট রয়েছে।
পরদিন আজমীর শরীফ থেকে চলে
আসার সিদ্ধান্ত নিই। জনাব জুনায়েদ
চিশতী সাহেবকে জানিয়ে দিলাম। আমরা
আছরের ওয়াক্তে হযরত খাজা গরীবে
নেওয়াজ শেখ সৈয়দ মইনুদ্দিন চিশতী
(রঃ) এর মাজার শেষবারের মত বিদায়ী
জেয়ারত করে নিই। খাদেমের ঘরে
আসি। এসে কাপড় চোপড় ভালভাবে
গুছিয়ে নিই। মাগরিব ওয়াক্তল ভাত খেয়ে
জুনায়েদ চিশতী থেকে বিদায় গ্রহণ করি।
চার/পাঁচদিন জুনায়েদ চিশতী ছাহেবের
যে আতিথেয়তা আমরা পেয়েছি আমি
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে, আমার ভাষায় আমি প্রকাশ করতে পারবােনা। আমি জুনায়েদ
সাহেবের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
পরদিন রাত
আটটায় আমরা বাস যােগে রওনা হই
দিল্লীর উদ্দ্যেশ্যে। বাস যােগে আসার
পথে চোখে পড়ে জয়পুর পিংক সিটি।
জয়পুর একটি চমৎকার জায়গা,
জয়পুরেই নাকি ভারতীয় ছায়াছবির
বেশীরভাগ শুুটিং হয়। দীর্ঘ নয় ঘন্টা
গাড়ীতে চড়ে সকাল পাঁচটায় গিয়ে পৌছি
দিল্লী। বাস থেকে নেমে টেক্সিতে করে
আবার জামে মসজিদ সংলগ্ন ” হােটেল
নাজ” এ উঠলাম। বিশ্রাম করলাম দুচার
ঘন্টা।
বিকেল চারটায় একটা টেক্সী ভাড়া
নিয়ে হযরত নেজাম উদ্দীন আউলীয়া
(রঃ), হযরত বখতিয়ার উদ্দীন কাকী
(রঃ), হযরত মুটকা শাহ (রঃ) এর
মাজার জেয়ারত করেছি। রাত্রে হােটেলে
এসে ম্যানেজার মারফতে আগ্রা যাবার
জন্য ট্যুরিষ্টবাসের টিকেট বুকিং দিলাম।
আগ্রা যাবার সিদ্ধান্তে সবাই একমত হতে পারলাম না। বন্ধু পারভেজ এবং ইয়াকুব
আগ্রা যাবার পক্ষপাতী নয় কেননা এরা
আগেও আগ্রার তাজমহল দেখেছে। আগ্রা
যাবার জন্য একমত হলাম আমি,
আলীদা, রফিক, লাভলী।
৭ মে সকাল ছয়টায় ট্যুরিষ্ট বাসে উঠে বসলাম
গাড়ীর ভিতর অডিও সেট
চলছে, গানগুলাে খুব ভাল লাগলো গাড়ী
চলাকালীন সময়। বেলা বারটায় গিয়ে
পৌছলাম আগ্রা পাের্ট এ। আমাদের সময়
দিলেন পঞ্চাশ মিনিট। এই অল্প সময়ের সবকিছু দেখতে হবে।
প্রতিযােগীতামূলক আমরা আগ্রা পাের্টের
গেইটে গেলাম। পাঁচ রুপি দিয়ে টিকেট
কেটে ভিতরে ঢুকে গেলাম। আগ্রা
পাের্টটি যমুনা নদীর তীর ঘেষেই
অবস্থিত।
আগ্রা পাের্ট তৎকালীন সম্রাটদের বাসভবন। প্রাচীন ঐতিহ্যে
নির্মিত উন্নতমানের পাথরে গড়া এ আগ্রা।
এখানে রয়েছে পঞ্চায়েত খানা,
সম্রাট আকবর, বাবর, হুমায়ুন এবং
বাদশা শাহজাহানের বাসভবন।
যমুনা
নদীর এক তীরে আগ্রা পোর্ট অপরতীরে সপ্তম আশ্চার্য্যের এক আশ্চার্য্য, প্রেমের
অপূর্ব নিদর্শন “তাজমহল”। ভারতীয়
সরকার আগ্রা পাের্ট থেকে কোটি কোটি
টাকা রাজস্ব পাওয়া সত্ত্বেও অবহেলায়।
প্রায় সৌন্দর্য বিলীন হবার পথেই। এ
আলীশান আগ্রা পাের্ট দেখে মনে প্রশ্নের
উদয় হলাে যে, এসব শাসকরা জনগণকে
শােষণ করে নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ
করার বর্হিপ্রকাশ আগ্রা পাের্ট। পঞ্চাশ
মিনিটের অল্প সময়ে পুরােপুরি দেখা সম্ভব
হয়নি। তবে আগ্রা পাের্টের একটি
জায়গায় আমি বেশ কিছুক্ষণ সময়
কাটিয়েছি। জায়গাটা হলো
শাহজাহান যে জায়গায় বসে জীবনের
অন্ধত্ব সময়ে শ্বেত পাথরে গড়া তাজমহলের রশ্মি দেখার বা অনুভব করতেন।
আমাদেরকে দেয়া পঞ্চাশ
মিনিট শেষ হওয়াতে আমরা আবার
গাড়ীতে উঠে গেলাম তাজমহল যাবার
উদ্দ্যেশ্যে। অল্প কিছুক্ষণ পরেই আমরা
তাজমহল-এ পৌছে গেলাম। গাড়ী
গিয়ে থামলাে তাজমহলের গেটের
সামনে।
টিকেট নিতে গিয়ে একটু বেকায়দায় পড়ে গেলাম।কাউন্টারের টিকেটের মূল্য এবং বৈষম্য
দেখে। কাউন্টারের বাইরে টিকেটের মূল্য
নির্ধারণ করে তালিকা দিয়েছে। ভারতীয়
নাগরিকের জন্য বিশ রুপি, আর বিদেশী
নাগরিকের জন্য বিশ ডলার অথবা নয়শত
ষাট রুপি। এ রকম বৈষম্যমূলক
টিকেটের মূল্য দেখে বিস্মিত হলাম।
আমরা যেহেতু বিদেশী নাগরিক তাই
আমাদের টিকেটের মূল্য হবে বিশ
ডলার। আর বিশ ডলার দিয়ে তাজমহল
দেখার সামর্থ আমাদের নেই। আমার
যেহেতু হিন্দি ভাষা জানা আছে, আমি
সাহস করে ভারতীয় লাইনে দাঁড়িয়ে
ছয়টি টিকেট নিলাম। নিয়ে গেটে
গেলাম। আমাকে জিজ্ঞেস করা হলাে-
“আপ কাহাছে আয়াহে”আমি জবাব দিলাম
ক্যালকাটাছে। আমাকে যাবার অনুমতি
দিলাে। আমি সামনের দিকে এগিয়ে
গেলাম। আমার পিছনে তিনবন্ধুর কাছ
থেকে কিছুই জিজ্ঞেস না করাতে এরাও
ভিতরে ঢুকে গেলাে। আমরা তাজমহলের
কাছাকাছি চলে গেলাম।
প্রেমের অপূর্ব নিদর্শন তাজমহল।
একজন মানুষ
তার প্রিয়কে কতটুকু ভালােবাসলে এরকম নির্দশন করতে পারে তার প্রমান তাজমহল।
বাদশা শাহজাহান
প্রিয়তমা মমতাজকে কত্তোবেশী ভালবাসতেন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তাজমহল।
তাজমহলটি দেখলে মনে হবে
চিরনতুন, যেন গতকালই নির্মিত হয়েছে।
কিছুদুর যেতেই ভারতীয় এক দালাল
আমাদেরকে চিনে ফেলে এবং আটকে
দিয়ে বিশ ডলার দাবী করে। বিশ ডলার
দিয়ে যেহেতু টিকেট নিতে আমরা অপারগ মরা তাজমহল মনানন্দে
দেখার সুযােগ না পেয়ে এক নীরব যন্ত্রণা
বুকে চেপে আবার গাড়ীতে উঠে বসলাম।
দিল্লীর উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলাম।
আসার
পথে ট্যুরিষ্ট বাস আমাদের নিয়ে গেলাে
হিন্দুদের তীর্থস্থান “বৃন্দাবনে”। বৃন্দাবন
জায়গাটি অনেক বড়। পাঁচ হাজার মন্দির
আছে বৃন্দাবনে। “ছয়মাস ঘুরে বৃন্দাবনের
সব মন্দির দেখা সম্ভব হবেনা” বলে
দর্শনার্থীদের মন্তব্য। বৃন্দাবনে দুই হাজার
বিধবা নারী আছে এরা উপাসনায়রত। এ
বিধবা নারীদের যাবতীয় খরচাদি বহন
করে বৃন্দাবনের পরিচালনা পরিষদ।
বৃন্দাবনের আয়তন নয়শত একর। এই
নয় শত একর জায়গা দান করেছেন
কলকাতার “সিদ্ধিসেট” নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি।
বৃন্দাবন থেকে রওনা
হলাম হিন্দুদের আর এক তীর্থস্থান
এ “মথুরা”। মথুরাতেও অনেক বড় বড় মন্দির
আছে। এসব জায়গায় হিন্দুরা পূজা
করে। মথুরা এবং বৃন্দাবন ঘুরে বুঝতে
পারলাম এখানকার মানুষ কত অভাবী।
৮ মে ৫টা ১৫ মিনিটে রাজধানী
এক্সপ্রেসে করে নিউ দিল্লী থেকে রওনা
হলাম কলকাতার উদ্দ্যেশ্যে। রাজধানী
এক্সপ্রেস ট্রেনটি সম্পূর্ণ শীতাতপ
নিয়ন্ত্রিত, খাওয়া দাওয়া সব ফ্রি। স্লিপিং
সিট, ঘুমানাের জন্য জনপ্রতি একটি
বালিশ, একটি বেডসিট, একটি কম্বল।
এক মনােরম ভদ্র পরিবেশ বিরাজমান এ
রাজধানী এক্সপ্রেস। যদিও টিকেটের দাম
একটু বেশী তারপরেও
ট্রেন।
সতের ঘন্টায় আমাদের পৌছে দিল
কলিকাতার “হাওড়া
“স্টেশনে। দীর্ঘ সতের
ঘন্টা যে ট্রেনে চড়েছি শরীরে বিন্দুমাত্র
ক্লান্তির রেশও লাগেনি। সব মিলিয়ে
রাজধানী এক্সপ্রেসের তুলনাই হয়না।
আবারাে কলকাতার জাকারিয়া স্ট্রীটে
“হােটেল আমানিয়াতে” উঠলাম। আসার
সময় ১১ মে তারিখের শ্যামলী চেয়ার কোচের টিকেট নিলাম। শ্যামলী কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত। আমরা
যেহেতু পরের সকালে রওনা দেব
একদিন সময় মেলাতে আমরা কলকাতা
চিড়িয়াখানা, পাতালপুরী রেলষ্টেশন
টমটম গাড়ী এবং বিভিন্ন শপিং মার্কে
ঘুরেছি।
লন্ডন প্রবাসী আলী দাও সাথে ছিলেন।
আলী দা কলিকাতা থেকে ঢাকা আসবেন,
ঢাকা থেকে লন্ডন চলে যাবেন। তার
ফ্লাইটের তারিখ ১৪ মে। তার আরো
তিনদিন কলকাতায় থাকতে হবে। আলী
দা খুব ভালাে এবং মজার মানুষ।দিল্লি
থেকে কলকাতা আসার সময় রাজধানী
এক্সপ্রেসের সতের ঘন্টার
ভ্ৰমণে দেড়শতের উপর আমাদেরকে গান
শুনিয়েছে। গলাটা খুব সুন্দর। ভাটিয়ালী
আঞ্চলিক, রবীন্দ্র, এবং আধুনিক গানে
সমান দখল রয়েছে তার। আমরা যেহেতু
পরের দিন চলে আসবাে আলীদাকে
ফেলে তার মনটা খুব খারাপ। তার
জন্য আমাদের মনটাও খারাপ।…..
এখনাে ……।
কালো মেঘে ঢাকা আকাশ। সাথে হালকা শীতল বাতাস বইয়ে যাচ্ছে। যেকোনো মূহুর্তে বৃষ্টির আগমন ঘটে যেতে পারে। অনেকক্ষন ধরে বসে আছি আনমনে। অবশেষে মেঘ তার ধৈর্য হারিয়ে বৃষ্টির আগমন ঘটায়। বৃষ্টির শব্দ আমার স্মৃতির দুয়ারে কড়া নাড়তে শুরু করে। শীতল বাতাসের হালকা বেগে স্মৃতির দুয়ার খুলে যায়। বৃষ্টির পানি সেই স্মৃতিকে আরো স্বচ্ছ করে তোলে।আমি হাঁটতে শুরু করি অতীতের পথে। যেই পথে কোন এক মেঘলা দিনের বৃষ্টিস্নাত বিকেলে তোমাকে দেখেছিলাম নদীর পাড়ে। শুভ্র কাপড় পড়ে প্রকৃতির সাথে মিশে গিয়ে খালি পায়ে হাঁটতে ছিলে বৃষ্টি ভেজা ঘাসের উপর। বাতাসে নদীর স্রোতের মতো উড়ছিল তোমার ঘন কালো লম্বা চুল। সেই চুলের সুগন্ধে ভরে উঠে শীতল বাতাস।
শুভ্রতার মাঝে কালো চুলে বেশ মানানসই লাগছিল তোমাকে। তোমার হাঁটার গতি ছিল নদীর মতো ধীর। তারপর মেঘের ঘনত্ব কমে গিয়ে হালকা রোদের দেখা দেয়। তাতে তোমার শুভ্রতা উজ্জ্বল হয়ে উঠে।
.
পর মূহুর্তে মেঘে মেঘে দন্ড শুরু হয়। নেমে আসে আবার বৃষ্টি। নদী পার ছেড়ে চলে যাও তুমি শুকনো আশ্রয়ের খোঁজে।আর আমি বৃষ্টিতে ভিজে দেখি তোমার চলে যাওয়া। তারপর বাস্তবে বৃষ্টি থেমে যায়। সন্ধ্যা নেমে আসে। প্রকৃতি শান্ত হয়। আকাশে তারা দেখা দেয় কয়েকটা। হয়তো এইভাবেই বৃষ্টি আমাদের অতীতের সন্ধান দিয়ে যাবে।
শব্দ কারিগরঃ MD Shihab Uddin
সমুদ্রের মাঝখানে এক জাহাজ প্রচন্ড ঝড়ের মধ্যে পরে লন্ডভন্ড হয়ে গেল। সেই জাহাজের বেঁচে যাওয়া এক যাত্রী ভাসতে ভাসতে এক নির্জন দ্বীপে এসে পৌছালো। জ্ঞান ফেরার পর প্রথমেই সে আল্লাহর কাছে প্রানখুলে ধন্যবাদ জানালো তার জীবন বাঁচানোর জন্যে। প্রতিদিন সে দ্বীপের তীরে এসে বসে থাকতো যদি কোনো জাহাজ সেদিকে আসে এই আশায়। কিন্তু প্রতিদিনই তাকে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হতো। এরই মধ্যে সে সমুদ্রতীরে তার জন্যে একটা ছোট ঘর তৈরী করে ফেললো। সমুদ্রের মাছ ধরে এবং বন থেকে ফলমূল শিকার সে বেঁচে থাকলো।
এরই মধ্যে সে একদিন খাবারের খোঁজে বনের মধ্যে গেল। বন থেকে সে যখন ফিরে এলো তখন দেখলো যে তার রান্না করার চুলা থেকে আগুন লেগেপুরো ঘরটিই ছাই হয়ে গিয়েছে এবং তার কালো ধোঁয়ায় আকাশ ভরে গিয়েছে। লোকটি চিৎকার করে উঠলো, ‘হায় আল্লাহ,তুমি আমার ভাগ্যে এটাও রেখেছিলে!’পরদিন সকালে এক জাহাজের আওয়াজে তার ঘুম ভাঙলো। জাহাজটি সেইদ্বীপের দিকে তাকে উদ্ধার করার জন্যই আসছিলো। সে অবাক হয়ে বললো, ‘তোমরা কিভাবে জানলে যে আমি এখানেআটকা পরে আছি!’ জাহাজের ক্যাপ্টেন জানালো,‘তোমার জ্বালানো ধোঁয়ার সংকেত দেখে।’ যখন আমরা খুব বিপদে পরি তখন আমরা প্রায় সবাই হতাশ হয়ে পড়ি। আমরা ভুলে যাই,’তিনি যা করেন তা আমাদের ভালোর জন্যেই করেন।’ তাই এরপর যখন আপনার ঘর পুড়তে থাকবে মনে রাখবেন এটা হয়তো সেই ধোঁয়ার সংকেত যা আপনাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবে।
অনেকেই জীবনের কোনো না কোনো সময় ‘ক্লান্ত লাগে’- এই কথাটি বলে থাকেন। পরিশ্রম করে ক্লান্ত হওয়া এক কথা, কোনো কারণ ছাড়াই ক্লান্ত হয়ে পড়া অন্য কথা। আপনার ক্লান্ত থাকার আড়ালে লুকিয়ে আছে শারীরিক কোনো না কোনো অসুস্থতা। আসুন জেনে নিই কোনো কারণ ছাড়া ক্লান্ত থাকা, কোন কোন শারীরিক সমস্যার পূর্বলক্ষণ।
রক্তশূন্যতা হলে আপনি ক্রমাগত ক্লান্ত থাকতে পারেন। অনেকেরই মাঝে মাঝে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় কিংবা ব্যায়াম করতে গিয়ে জোর পান না। এটা হয় রক্তশূন্যতার কারণে। রক্তশূন্যতা হলে আপনার রক্তে যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন থাকে না। এর ফলে আপনার শরীর ঠান্ডা থাকে এবং ঘুম ঘুম ভাব থাকে।
আপনার ক্লান্ত থাকার পেছনের আরেকটা কারণ হচ্ছে থাইরয়েড সমস্যা। আপনার যদি ত্বক শুষ্ক লাগে, শরীরে দুর্বলতা থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে এবং একইসাথে ক্লান্ত থাকেন তাহলে আপনার থাইরয়েডের সমস্যা থাকতে পারে।
ডায়াবেটিস শরীরে দানাবাঁধার পূর্বেও আপনার ক্লান্ত লাগতে পারে। ডায়াবেটিস হলে আপনার রক্তের সুগার লেভেল কমে যায়। সুগার লেভেল কমে যাওয়ার ফলে আপনার শরীর নেতিয়ে পড়ে এবং আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
প্রচণ্ড হতাশ থাকলেও মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েন। হতাশ হলে অনেকেই বিছানা ছেড়ে উঠতে চান না, ঘুমাতেও চান না। সব মিলিয়ে এক অন্যরকম ক্লান্তির মধ্যে থাকেন।
ক্লান্ত থাকার আরেকটি গোপন কারণ হচ্ছে পেট খারাপ থাকা। রাস্তাঘাটের খোলামেলা পরিবেশে কোনো কিছু খেলে পেটে বদহজম অথবা ডায়রিয়া হয়। এসব কারণে মানুষের মাথা ব্যথা করে, বুক জ্বালাপোড়া করে, গলা থেকে ঢেকুর বের হয়- এতে শারীরিকভাবে দুর্বলতা দেখা দেয়। ক্লান্ত থাকার এটাও আরেকটা কারণ।
শরীরে কোনো ধরনের ইনফেকশন থাকলেও আপনি ক্লান্ত হতে পারেন। এপস্টেইনবার ভাইরাস অথবা লাইম ডিজিজে আক্রান্ত হলে আপনি অস্বাভাবিকরকম ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন।
শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও আপনার ক্লান্তির পেছনের আরেকটি কারণ হচ্ছে নাক ডাকা। আপনি যদি ক্লান্ত থাকেন তাহলে এটার মানে এটাও দাঁড়ায় যে, আপনি অনেকদিন ধরে নাক ডেকে যাচ্ছেন।
হার্টের অসুখ থাকলেও আপনার মধ্যে ক্লান্তিভাব দেখা দিতে পারে। হার্টে সমস্যা দেখা দিলে আপনার শরীরের ব্লাড টিস্যুগুলো থেকে রক্ত শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে যোগান দিতে থাকে। এতে আপনার পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
যদি নিয়মিত ক্লান্ত থাকেন তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। কারণ ক্লান্তির আড়ালে হয়তো আপনার শরীরে বাসা বেঁধে আছে কোনো ভয়াবহ রোগ।