২০০১ সালে
ঘুরে এলামঃ আজমীর-দিল্লী-আগ্রা
মোঃ আবু মনসুর
“কেউ ফিরে না খালী হাতে, গেলে খাজার দরবারে”
খাজা গরীবে নেওয়াজ মঈনুদ্দিন চিশতি
(রঃ) এর মাজার আজমীর শরীফ
জিয়ারতের প্রবল ইচ্ছা দীর্ঘদিন ধরে।
যদিওবা আমার মতাে মধ্যবিত্ত ঘরের
লােক বিদেশ ভ্রমণ করাটা অনেকটা
“বামন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়ানাে’র
মত”। তবু যে মনে বড় আশা হযরত খাজা
গরীবে
জেয়ারতের। এই প্রবল মনের টানে গত
এপ্রিল মাসে চুড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নিলাম
আজমীর যাবার। আমার সাথে আজমীর
যাবার সফরসঙ্গী হলাে বন্ধু পারভেজ
রফিক, ইয়াকুব এবং রফিকের সদ্য
বিবাহিত সহধর্মিনী মিসেস লাভলী।
সফরসঙ্গী বন্ধুদের আর্থিক অবস্থা আমার
চাইতে অনেক ভাল। তাই তারা একটি
নির্দিষ্ট তারিখ লক্ষ্য করে প্রস্তুতি নিতে
লাগলাে রওনা হবার। তাদের নির্দিষ্ট
তারিখ আমাকেও জানিয়ে দিল। ২৬
এপ্রিল বেলা দু’টা চল্লিশ মিনিটে তথা
নির্ধারিত সময়ে আমাদের যাত্রা শুরু
হলাে। এসি কোচ; নিয়মতান্ত্রিকভাবে
দরজা বন্ধ। শুধু গ্লাসের ভিতর দিয়ে
বাইরের প্রকৃতি অবলােকন করছি। বেশ
কয়টি পত্রিকা এবং ম্যাগাজিন গাড়ীতে
চড়ার আগেই নিয়ে নিয়েছি। গাড়ী চলছে।
তার আপন গতিতে। কিছুক্ষণ পত্রিকা
ম্যাগাজিনে চোখ বুলাচ্ছি, কিছুক্ষণ
একমনা হয়ে বাইরের প্রকৃতির সাথে
সখ্যতা গড়ার চেষ্টা করছি। এসি কোচের
দরজা বন্ধ করে যখন যাত্রা শুরু হলাে
তখন থেকে কেমন জানি মনে হচ্ছে
আমরা যারা এসি কোচের যাত্রী সবাই
বাইরের জগত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা,
জনবিচ্ছিন্ন জীব। এভাবে ভাবনার রেশ
কাটতেই আমার বন্ধু রফিকের স্ত্রী
লাভলীর সাথে দুষ্টুমীর পালা। লাভলী
অত্যন্ত চঞ্চল এবং মুক্ত মানসিকতার
মেয়ে।মুক্তভাবে লাভলীর সাথে কথা
বলতে পারাটা এতাে লম্বা ভ্ৰমণের
বিনােদন হিসেবে সহায়ক হয়েছে।
এভাবে দীর্ঘ সতের ঘন্টা গাড়ীতে চড়ে
২৭ এপ্রিল সকাল সাতটায় বেনাপােল
পৌছলাম। একটানা গাড়ীতে চড়ে আমরা
সবাই ক্লান্ত। নয়টার সময় বেনাপােল
কাষ্টমস খুলবে। কর্মকর্তারা আসবেন।
দুই ঘন্টার বিশ্রাম পেলাম। এরিমধ্যে
আমরা নাস্তার পর্বটা সেরে নিলাম।
যথারীতি নয়টা বেজে গেলাে। আমরা
কাষ্টমস এর দিকে এগুলাম। কাষ্টমসের
কাজ সারতে হবে। প্রথমে অামরা
জনপ্রতি ৩২০ টাকা করে ভ্রমণ কর
দিলাম। কাষ্টমসে আমাদের পাসর্পোটে
ইমিগ্রেশন সিল করতে হবে। লাইনে
দাঁড়ালাম। লাইনেই চট্টগ্রামের পটিয়া
থানার একভদ্র লােক উনি কলকাতার
মেডিকেলে ডাক্তারী পড়ছেন। তাঁর সাথে
পরিচয় হলাে। তিনি আমাদের যথেষ্ট
সহযােগিতা করেছেন যা ভােলার নয়।
বেনাপােল কাষ্টমস কর্মকর্তাদের
ভারতগামী যাত্রীদের উপর এদের ওপেন
সিক্রেট চাঁদার হার রয়েছে।
বহির্ভূতভাবে এরা এ টাকা নিয়ে থাকে।
এই বিড়ম্বনার শিকার আমরাও হলাম।
এভাবে কাষ্টমস সেরে আমরা বেনাপােল
সীমান্ত পার হয়ে ৮০০ রুপি দিয়ে ভাড়া
করলাম একটা টেক্সি।
২৭ এপ্রিল বেলা দুইটার সময় পৌছলাম
কলিকাতার জাকারিয়া স্ট্রীটে। হােটেল
আমানিয়াতে উঠলাম। দুই ঘন্টা বিশ্রামে
খাওয়া দাওয়া সেরে নিলাম। বিকেল
চারটার সময় পিয়ারলি প্যালেস ট্রেনের
টিকেট কাউন্টারে গেলাম। দেখলাম
পরের দিনের টিকেট নেই। ইতােমধ্যে
সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোন ট্রেনে যাবাে।
রাজধানী এক্সপ্রেসে যেতে হলে ১৫০০
রুপি লাগবে। তাই আমরা টাকা কম
খরচের জন্য রাজধানী এক্সপ্রেস বাদ
দিয়েছি। কিন্তু দালাল মারফতে আমরা
২৮ এপ্রিলের “কালকা এক্সপ্রেসের
টিকেট নিলাম ৬০০ রুপি করে। ট্রেন
ছাড়বে সন্ধ্যা সাতটায়। যথারীতি সন্ধ্যা
সাতটায় হাজির হলাম হাওড়া রেল
ষ্টেশনে। হাওড়া রেল ষ্টেশন দেখার মত
একটা জায়গা। অনেকগুলাে প্ল্যাটফর্ম
একটা প্ল্যাটফর্ম মিস হলে ট্রেন মিস হবার
সম্ভাবনা। তবে যাত্রীদের সুবিধার্থে
কম্পিউটারাইজড তালিকা প্রিন্ট রয়েছে।
কত নম্বর ট্রেন কত নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে
ছাড়বে স্পষ্টভাবে কম্পিউটার তালিকা
আছে। সেই সুবাদে আমাদের কোন
অসুবিধা হয়নি। সন্ধ্যা সাতটায় কালকা
এক্সপ্রেসে উঠলাম। শ্রিপিং সিট এ-
সুবিধা আছে ঘুমানাে যাবে। আমরা
কলকাতা থেকে রওনা দিলাম দিল্লী
উদ্দ্যেশ্যে।
২৯ এপ্রিল রাত আটটায় আমরা দিল্লীতে
পৌছলাম। পঞ্চাশ রুপি দিয়ে টেক্সি ভার্া
নিলাম দিল্লি জামে মসজিদ। সেখানে
“হােটেল নাজ” এ উঠলাম।
যেহেতু ১ মে রওনা দেব আজমীর এর
উদ্দ্যেশ্যে একদিন অবসর-বিশ্রাম
পাওয়ার সুবাদে দিল্লী জামে মসজিদে
নামাজ পড়ার সুযােগ পেলাম। দিল্লী
জামে মসজিদ মুসলিম স্থাপত্যের এক
অনন্য নিদর্শন। এ মসজিদের আয়তন
অনেক বড়, তবে মসজিদের ময়দানটা
অনেক বড়। অনেক দামী পাথরে গড়া
সম্রাট আকবর কর্তৃক স্থাপিত এ দিল্লী
জামে মসজিদ। এ মসজিদে হযরত
মুহাম্মদ (সঃ) এর কদম মােবারক এবং
দাড়ি মােবারক রয়েছে। প্রতি ওয়াক্ত
নামাজ শেষে দর্শনার্থীদের পবিত্র কদম
মােবারক এবং দাড়ি মােবারক স্পর্শ
করার সুযােগ থাকে। এই সুবাদে হযরত
মুহাম্মদ (সঃ) এর কদম মােবারক এবং
দাঁড়ি মােবারক চুম্বন করার মহা সুযােগ
পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করলাম।
তবে
দিল্লী জামে মসজিদের বর্তমান চিত্র দেখে
আমার মনে এক প্রশ্নের উদ্রেক হলাে।
ভারতীয় সরকার কি মুসলিম স্থাপত্যের
প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করছেনা?
দিল্লী জামে মসজিদের সংস্কার কোন
সাধারণ জনগণের ব্যক্তিগত উদ্যোগে
করার ক্ষমতা পুরাে আওতার বাইরে
বিধায় সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা ছাড়া দিল্লী
জামে মসজিদের সংস্কার অসম্ভব বলে
আমার মনে হচ্ছে। দিল্লী জামে মসজিদে
আছর এর নামাজ পড়ে দিল্লীর লাল কেল্লা
দেখতে গেলাম। খুব সুন্দর স্থাপনা।
তৎকালীন
আভিজাত্যের স্থাপনা এ লাল কেল্লা।
সম্রাটদের শােবার ঘর, বাগান, বিচারের
আসন মানে পঞ্চায়েত মহল, এসব
অত্যাধিক আভিজাত্যের চিত্র দেখে মনে
হলাে এ সম্রাটরা রাজ্য শাসনের
পাশাপাশি অনেক শােষণ করেছে সাধারণ
জনগণকে।
১ মে নির্ধারিত রাত নয়টা পনের মিনিটের
আহমেদাবাগ এক্সপ্রেসে আজমীর যাবার
উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলাম। ট্রেনে বসে এক
আনন্দের ভাবনা এসে গেলাে। আজ দীর্ঘ
অনেক বছর যাবত আজমীর যাবার
আশা হৃদয়ে লালিত করেছি- হযরত
খাজা গরীবে নেওয়াজ মঈনুদ্দিন চিশতী(রঃ)
এর রওজা জেয়ারতের স্বপ্ন
অনেকদিনের। গাড়ী ছুটছে তার আপন
ছন্দময় গতিতে গন্তব্যের ঠিকানায়। আর
আমরা অপেক্ষায় কখন পৌছবাে আজমীর
শরীফ। ট্রেনে চড়ে ভাবছি আজ সত্যি
সত্যি আমার স্বপ্নের মহা প্রত্যাশার
জায়গা আজমীর যাচ্ছি।
এই ব্যাকুল আনন্দে কখন যে দীর্ঘ এগার ঘন্টা ট্রেনে
চড়ে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি। পরদিন
সকাল আটটায় আমরা আজমীর শরীফের
ষ্টেশনে নামলাম। টেক্সিতে করে আজমীর
শরীফের খাদেম জুনায়েদ মিয়া চিশতীর
বাসভবনে গিয়ে উঠলাম। আজমীর
শরীফে কোন হােটেলে থাকার চাইতে
জানাশুনা খাদেমদের ঘরে গেলে
খাওয়া জেয়ারতের যাবতীয় সুব্যবস্থা গুলি
খাদেমরাই করে থাকেন।
আমরা খাওয়া
দাওয়া সেরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিশ্রামই যেন ভাল লাগছেনা, এই মন শান্তি পাচ্ছে না
যতক্ষন না যাই হযরত খাজা গরীবে
নেওয়াজের পবিত্র রওজা জেয়ারত
করতে। জুনায়েদ চিশতী বেলা বারটায়
আমাদের রওজা শরীফে নিয়ে গেলেন।
আমরা ফুল এবং চাদর নিয়ে গেলাম
রওজা শরীফে। হযরত খাজা গরীবে
নেওয়াজ (রঃ) এর রওজায় ফুল ও চাদর
দিয়ে জোহরের নামাজ পড়লাম। প্রতিদিন জোহরের নামাজের পর থেকে কাওয়ালী আয়োজন করা হয়। এই কাওয়ালী গানের প্রতি প্রচন্ড দুর্বলতা আছে।
জীবনে আমার অনেক বড় স্বপ্ন ছিল খাজা
গরীবে নেওয়াজ (রঃ) এর দরবার শরীফে
কাওয়ালী গান শুনার। আল্লাহ্ আমার
সেই আশাপূর্ণ করেছে, আল্লাহর দরবারে
হাজার শুকরিয়া।
আমরা ৩ এপ্রিল আনা
সাগরে গেলাম। জলরাশি খুব পরিস্কার
খাজা গরীবে নেওয়াজ (রঃ)-কে যখন পৃথিরাজ এবং এর সৈন্যরা আনা সাগরের
পানি ব্যবহার করতে দিচ্ছিলনা, খাজা
গরীবে নেওয়াজ একটু রাগান্বিত হয়ে
এক মুরিদকে পাঠালেন আনা সাগরের
এক বদনা পানি আনতে। ঐ মুরিদ এক
বদনা পানি আনার সাথে সাথেই আনা
সাগর শুকিয়ে যায়। পরবর্তীতে এরা
আবার খাজা গরীবে নেওয়াজের নিকট
ক্ষমা প্রার্থনা
করলে তিনি ক্ষমা করে দেন।বদনার পানি আনা সাগরে ঢেলে
দিলে সাগর আবার পানিতে ভরপুর হয়ে
যায়। আছরের নামাজ পড়ে আবার বসে
গেলাম কাওয়ালীর আসরে।
আর আমাদের দেশীয়
কাওয়ালীর সাথে আজমীর শরীফের
কাওয়ালীর রয়েছে অনেক পার্থক্য।
আমরা ৪ এপ্রিল তারাগড় পাহাড়ে হযরত
মিরা সৈয়দ হােসেন দুলার মাজার
জেয়ারত করতে যাই।
পাহাড়ে যাবার সময় জীপ যােগে যাই।
এত উঁচু পাহাড়। জানতে পারলাম
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী
তারাগড় পাহাড়ে পানি এবং বিদ্যুৎ
সংযােগ করে দিয়েছেন। জেয়ারিত শেষে
আসার সময় হেঁটে হেঁটে আসি। নামার
সময় দেখি, হযরত খাজা গরিবে
নেওয়াজকে পৃথিরাজের যাদুকর যে বিরাট
পাথরটি নিক্ষেপ করেছিলাে, সেই পাথরটি
খাজা গরীবে নেওয়াজের কেরামতিতে
আটকে গিয়েছিলাে, সেই পাথরে খাজা
গরীবে নেওয়াজের আঙ্গুলের এবং ঘােড়ার
পায়ের ছাপ স্পষ্ট রয়েছে।
পরদিন আজমীর শরীফ থেকে চলে
আসার সিদ্ধান্ত নিই। জনাব জুনায়েদ
চিশতী সাহেবকে জানিয়ে দিলাম। আমরা
আছরের ওয়াক্তে হযরত খাজা গরীবে
নেওয়াজ শেখ সৈয়দ মইনুদ্দিন চিশতী
(রঃ) এর মাজার শেষবারের মত বিদায়ী
জেয়ারত করে নিই। খাদেমের ঘরে
আসি। এসে কাপড় চোপড় ভালভাবে
গুছিয়ে নিই। মাগরিব ওয়াক্তল ভাত খেয়ে
জুনায়েদ চিশতী থেকে বিদায় গ্রহণ করি।
চার/পাঁচদিন জুনায়েদ চিশতী ছাহেবের
যে আতিথেয়তা আমরা পেয়েছি আমি
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে, আমার ভাষায় আমি প্রকাশ করতে পারবােনা। আমি জুনায়েদ
সাহেবের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
পরদিন রাত
আটটায় আমরা বাস যােগে রওনা হই
দিল্লীর উদ্দ্যেশ্যে। বাস যােগে আসার
পথে চোখে পড়ে জয়পুর পিংক সিটি।
জয়পুর একটি চমৎকার জায়গা,
জয়পুরেই নাকি ভারতীয় ছায়াছবির
বেশীরভাগ শুুটিং হয়। দীর্ঘ নয় ঘন্টা
গাড়ীতে চড়ে সকাল পাঁচটায় গিয়ে পৌছি
দিল্লী। বাস থেকে নেমে টেক্সিতে করে
আবার জামে মসজিদ সংলগ্ন ” হােটেল
নাজ” এ উঠলাম। বিশ্রাম করলাম দুচার
ঘন্টা।
বিকেল চারটায় একটা টেক্সী ভাড়া
নিয়ে হযরত নেজাম উদ্দীন আউলীয়া
(রঃ), হযরত বখতিয়ার উদ্দীন কাকী
(রঃ), হযরত মুটকা শাহ (রঃ) এর
মাজার জেয়ারত করেছি। রাত্রে হােটেলে
এসে ম্যানেজার মারফতে আগ্রা যাবার
জন্য ট্যুরিষ্টবাসের টিকেট বুকিং দিলাম।
আগ্রা যাবার সিদ্ধান্তে সবাই একমত হতে পারলাম না। বন্ধু পারভেজ এবং ইয়াকুব
আগ্রা যাবার পক্ষপাতী নয় কেননা এরা
আগেও আগ্রার তাজমহল দেখেছে। আগ্রা
যাবার জন্য একমত হলাম আমি,
আলীদা, রফিক, লাভলী।
৭ মে সকাল ছয়টায় ট্যুরিষ্ট বাসে উঠে বসলাম
গাড়ীর ভিতর অডিও সেট
চলছে, গানগুলাে খুব ভাল লাগলো গাড়ী
চলাকালীন সময়। বেলা বারটায় গিয়ে
পৌছলাম আগ্রা পাের্ট এ। আমাদের সময়
দিলেন পঞ্চাশ মিনিট। এই অল্প সময়ের সবকিছু দেখতে হবে।
প্রতিযােগীতামূলক আমরা আগ্রা পাের্টের
গেইটে গেলাম। পাঁচ রুপি দিয়ে টিকেট
কেটে ভিতরে ঢুকে গেলাম। আগ্রা
পাের্টটি যমুনা নদীর তীর ঘেষেই
অবস্থিত।
আগ্রা পাের্ট তৎকালীন সম্রাটদের বাসভবন। প্রাচীন ঐতিহ্যে
নির্মিত উন্নতমানের পাথরে গড়া এ আগ্রা।
এখানে রয়েছে পঞ্চায়েত খানা,
সম্রাট আকবর, বাবর, হুমায়ুন এবং
বাদশা শাহজাহানের বাসভবন।
যমুনা
নদীর এক তীরে আগ্রা পোর্ট অপরতীরে সপ্তম আশ্চার্য্যের এক আশ্চার্য্য, প্রেমের
অপূর্ব নিদর্শন “তাজমহল”। ভারতীয়
সরকার আগ্রা পাের্ট থেকে কোটি কোটি
টাকা রাজস্ব পাওয়া সত্ত্বেও অবহেলায়।
প্রায় সৌন্দর্য বিলীন হবার পথেই। এ
আলীশান আগ্রা পাের্ট দেখে মনে প্রশ্নের
উদয় হলাে যে, এসব শাসকরা জনগণকে
শােষণ করে নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ
করার বর্হিপ্রকাশ আগ্রা পাের্ট। পঞ্চাশ
মিনিটের অল্প সময়ে পুরােপুরি দেখা সম্ভব
হয়নি। তবে আগ্রা পাের্টের একটি
জায়গায় আমি বেশ কিছুক্ষণ সময়
কাটিয়েছি। জায়গাটা হলো
শাহজাহান যে জায়গায় বসে জীবনের
অন্ধত্ব সময়ে শ্বেত পাথরে গড়া তাজমহলের রশ্মি দেখার বা অনুভব করতেন।
আমাদেরকে দেয়া পঞ্চাশ
মিনিট শেষ হওয়াতে আমরা আবার
গাড়ীতে উঠে গেলাম তাজমহল যাবার
উদ্দ্যেশ্যে। অল্প কিছুক্ষণ পরেই আমরা
তাজমহল-এ পৌছে গেলাম। গাড়ী
গিয়ে থামলাে তাজমহলের গেটের
সামনে।
টিকেট নিতে গিয়ে একটু বেকায়দায় পড়ে গেলাম।কাউন্টারের টিকেটের মূল্য এবং বৈষম্য
দেখে। কাউন্টারের বাইরে টিকেটের মূল্য
নির্ধারণ করে তালিকা দিয়েছে। ভারতীয়
নাগরিকের জন্য বিশ রুপি, আর বিদেশী
নাগরিকের জন্য বিশ ডলার অথবা নয়শত
ষাট রুপি। এ রকম বৈষম্যমূলক
টিকেটের মূল্য দেখে বিস্মিত হলাম।
আমরা যেহেতু বিদেশী নাগরিক তাই
আমাদের টিকেটের মূল্য হবে বিশ
ডলার। আর বিশ ডলার দিয়ে তাজমহল
দেখার সামর্থ আমাদের নেই। আমার
যেহেতু হিন্দি ভাষা জানা আছে, আমি
সাহস করে ভারতীয় লাইনে দাঁড়িয়ে
ছয়টি টিকেট নিলাম। নিয়ে গেটে
গেলাম। আমাকে জিজ্ঞেস করা হলাে-
“আপ কাহাছে আয়াহে”আমি জবাব দিলাম
ক্যালকাটাছে। আমাকে যাবার অনুমতি
দিলাে। আমি সামনের দিকে এগিয়ে
গেলাম। আমার পিছনে তিনবন্ধুর কাছ
থেকে কিছুই জিজ্ঞেস না করাতে এরাও
ভিতরে ঢুকে গেলাে। আমরা তাজমহলের
কাছাকাছি চলে গেলাম।
প্রেমের অপূর্ব নিদর্শন তাজমহল।
একজন মানুষ
তার প্রিয়কে কতটুকু ভালােবাসলে এরকম নির্দশন করতে পারে তার প্রমান তাজমহল।
বাদশা শাহজাহান
প্রিয়তমা মমতাজকে কত্তোবেশী ভালবাসতেন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তাজমহল।
তাজমহলটি দেখলে মনে হবে
চিরনতুন, যেন গতকালই নির্মিত হয়েছে।
কিছুদুর যেতেই ভারতীয় এক দালাল
আমাদেরকে চিনে ফেলে এবং আটকে
দিয়ে বিশ ডলার দাবী করে। বিশ ডলার
দিয়ে যেহেতু টিকেট নিতে আমরা অপারগ মরা তাজমহল মনানন্দে
দেখার সুযােগ না পেয়ে এক নীরব যন্ত্রণা
বুকে চেপে আবার গাড়ীতে উঠে বসলাম।
দিল্লীর উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলাম।
আসার
পথে ট্যুরিষ্ট বাস আমাদের নিয়ে গেলাে
হিন্দুদের তীর্থস্থান “বৃন্দাবনে”। বৃন্দাবন
জায়গাটি অনেক বড়। পাঁচ হাজার মন্দির
আছে বৃন্দাবনে। “ছয়মাস ঘুরে বৃন্দাবনের
সব মন্দির দেখা সম্ভব হবেনা” বলে
দর্শনার্থীদের মন্তব্য। বৃন্দাবনে দুই হাজার
বিধবা নারী আছে এরা উপাসনায়রত। এ
বিধবা নারীদের যাবতীয় খরচাদি বহন
করে বৃন্দাবনের পরিচালনা পরিষদ।
বৃন্দাবনের আয়তন নয়শত একর। এই
নয় শত একর জায়গা দান করেছেন
কলকাতার “সিদ্ধিসেট” নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি।
বৃন্দাবন থেকে রওনা
হলাম হিন্দুদের আর এক তীর্থস্থান
এ “মথুরা”। মথুরাতেও অনেক বড় বড় মন্দির
আছে। এসব জায়গায় হিন্দুরা পূজা
করে। মথুরা এবং বৃন্দাবন ঘুরে বুঝতে
পারলাম এখানকার মানুষ কত অভাবী।
৮ মে ৫টা ১৫ মিনিটে রাজধানী
এক্সপ্রেসে করে নিউ দিল্লী থেকে রওনা
হলাম কলকাতার উদ্দ্যেশ্যে। রাজধানী
এক্সপ্রেস ট্রেনটি সম্পূর্ণ শীতাতপ
নিয়ন্ত্রিত, খাওয়া দাওয়া সব ফ্রি। স্লিপিং
সিট, ঘুমানাের জন্য জনপ্রতি একটি
বালিশ, একটি বেডসিট, একটি কম্বল।
এক মনােরম ভদ্র পরিবেশ বিরাজমান এ
রাজধানী এক্সপ্রেস। যদিও টিকেটের দাম
একটু বেশী তারপরেও
ট্রেন।
সতের ঘন্টায় আমাদের পৌছে দিল
কলিকাতার “হাওড়া
“স্টেশনে। দীর্ঘ সতের
ঘন্টা যে ট্রেনে চড়েছি শরীরে বিন্দুমাত্র
ক্লান্তির রেশও লাগেনি। সব মিলিয়ে
রাজধানী এক্সপ্রেসের তুলনাই হয়না।
আবারাে কলকাতার জাকারিয়া স্ট্রীটে
“হােটেল আমানিয়াতে” উঠলাম। আসার
সময় ১১ মে তারিখের শ্যামলী চেয়ার কোচের টিকেট নিলাম। শ্যামলী কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত। আমরা
যেহেতু পরের সকালে রওনা দেব
একদিন সময় মেলাতে আমরা কলকাতা
চিড়িয়াখানা, পাতালপুরী রেলষ্টেশন
টমটম গাড়ী এবং বিভিন্ন শপিং মার্কে
ঘুরেছি।
লন্ডন প্রবাসী আলী দাও সাথে ছিলেন।
আলী দা কলিকাতা থেকে ঢাকা আসবেন,
ঢাকা থেকে লন্ডন চলে যাবেন। তার
ফ্লাইটের তারিখ ১৪ মে। তার আরো
তিনদিন কলকাতায় থাকতে হবে। আলী
দা খুব ভালাে এবং মজার মানুষ।দিল্লি
থেকে কলকাতা আসার সময় রাজধানী
এক্সপ্রেসের সতের ঘন্টার
ভ্ৰমণে দেড়শতের উপর আমাদেরকে গান
শুনিয়েছে। গলাটা খুব সুন্দর। ভাটিয়ালী
আঞ্চলিক, রবীন্দ্র, এবং আধুনিক গানে
সমান দখল রয়েছে তার। আমরা যেহেতু
পরের দিন চলে আসবাে আলীদাকে
ফেলে তার মনটা খুব খারাপ। তার
জন্য আমাদের মনটাও খারাপ।…..
এখনাে ……।
কালো মেঘে ঢাকা আকাশ। সাথে হালকা শীতল বাতাস বইয়ে যাচ্ছে। যেকোনো মূহুর্তে বৃষ্টির আগমন ঘটে যেতে পারে। অনেকক্ষন ধরে বসে আছি আনমনে। অবশেষে মেঘ তার ধৈর্য হারিয়ে বৃষ্টির আগমন ঘটায়। বৃষ্টির শব্দ আমার স্মৃতির দুয়ারে কড়া নাড়তে শুরু করে। শীতল বাতাসের হালকা বেগে স্মৃতির দুয়ার খুলে যায়। বৃষ্টির পানি সেই স্মৃতিকে আরো স্বচ্ছ করে তোলে।আমি হাঁটতে শুরু করি অতীতের পথে। যেই পথে কোন এক মেঘলা দিনের বৃষ্টিস্নাত বিকেলে তোমাকে দেখেছিলাম নদীর পাড়ে। শুভ্র কাপড় পড়ে প্রকৃতির সাথে মিশে গিয়ে খালি পায়ে হাঁটতে ছিলে বৃষ্টি ভেজা ঘাসের উপর। বাতাসে নদীর স্রোতের মতো উড়ছিল তোমার ঘন কালো লম্বা চুল। সেই চুলের সুগন্ধে ভরে উঠে শীতল বাতাস।
শুভ্রতার মাঝে কালো চুলে বেশ মানানসই লাগছিল তোমাকে। তোমার হাঁটার গতি ছিল নদীর মতো ধীর। তারপর মেঘের ঘনত্ব কমে গিয়ে হালকা রোদের দেখা দেয়। তাতে তোমার শুভ্রতা উজ্জ্বল হয়ে উঠে।
.
পর মূহুর্তে মেঘে মেঘে দন্ড শুরু হয়। নেমে আসে আবার বৃষ্টি। নদী পার ছেড়ে চলে যাও তুমি শুকনো আশ্রয়ের খোঁজে।আর আমি বৃষ্টিতে ভিজে দেখি তোমার চলে যাওয়া। তারপর বাস্তবে বৃষ্টি থেমে যায়। সন্ধ্যা নেমে আসে। প্রকৃতি শান্ত হয়। আকাশে তারা দেখা দেয় কয়েকটা। হয়তো এইভাবেই বৃষ্টি আমাদের অতীতের সন্ধান দিয়ে যাবে।
শব্দ কারিগরঃ MD Shihab Uddin
সমুদ্রের মাঝখানে এক জাহাজ প্রচন্ড ঝড়ের মধ্যে পরে লন্ডভন্ড হয়ে গেল। সেই জাহাজের বেঁচে যাওয়া এক যাত্রী ভাসতে ভাসতে এক নির্জন দ্বীপে এসে পৌছালো। জ্ঞান ফেরার পর প্রথমেই সে আল্লাহর কাছে প্রানখুলে ধন্যবাদ জানালো তার জীবন বাঁচানোর জন্যে। প্রতিদিন সে দ্বীপের তীরে এসে বসে থাকতো যদি কোনো জাহাজ সেদিকে আসে এই আশায়। কিন্তু প্রতিদিনই তাকে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হতো। এরই মধ্যে সে সমুদ্রতীরে তার জন্যে একটা ছোট ঘর তৈরী করে ফেললো। সমুদ্রের মাছ ধরে এবং বন থেকে ফলমূল শিকার সে বেঁচে থাকলো।
এরই মধ্যে সে একদিন খাবারের খোঁজে বনের মধ্যে গেল। বন থেকে সে যখন ফিরে এলো তখন দেখলো যে তার রান্না করার চুলা থেকে আগুন লেগেপুরো ঘরটিই ছাই হয়ে গিয়েছে এবং তার কালো ধোঁয়ায় আকাশ ভরে গিয়েছে। লোকটি চিৎকার করে উঠলো, ‘হায় আল্লাহ,তুমি আমার ভাগ্যে এটাও রেখেছিলে!’পরদিন সকালে এক জাহাজের আওয়াজে তার ঘুম ভাঙলো। জাহাজটি সেইদ্বীপের দিকে তাকে উদ্ধার করার জন্যই আসছিলো। সে অবাক হয়ে বললো, ‘তোমরা কিভাবে জানলে যে আমি এখানেআটকা পরে আছি!’ জাহাজের ক্যাপ্টেন জানালো,‘তোমার জ্বালানো ধোঁয়ার সংকেত দেখে।’ যখন আমরা খুব বিপদে পরি তখন আমরা প্রায় সবাই হতাশ হয়ে পড়ি। আমরা ভুলে যাই,’তিনি যা করেন তা আমাদের ভালোর জন্যেই করেন।’ তাই এরপর যখন আপনার ঘর পুড়তে থাকবে মনে রাখবেন এটা হয়তো সেই ধোঁয়ার সংকেত যা আপনাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবে।
অনেকেই জীবনের কোনো না কোনো সময় ‘ক্লান্ত লাগে’- এই কথাটি বলে থাকেন। পরিশ্রম করে ক্লান্ত হওয়া এক কথা, কোনো কারণ ছাড়াই ক্লান্ত হয়ে পড়া অন্য কথা। আপনার ক্লান্ত থাকার আড়ালে লুকিয়ে আছে শারীরিক কোনো না কোনো অসুস্থতা। আসুন জেনে নিই কোনো কারণ ছাড়া ক্লান্ত থাকা, কোন কোন শারীরিক সমস্যার পূর্বলক্ষণ।
রক্তশূন্যতা হলে আপনি ক্রমাগত ক্লান্ত থাকতে পারেন। অনেকেরই মাঝে মাঝে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় কিংবা ব্যায়াম করতে গিয়ে জোর পান না। এটা হয় রক্তশূন্যতার কারণে। রক্তশূন্যতা হলে আপনার রক্তে যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন থাকে না। এর ফলে আপনার শরীর ঠান্ডা থাকে এবং ঘুম ঘুম ভাব থাকে।
আপনার ক্লান্ত থাকার পেছনের আরেকটা কারণ হচ্ছে থাইরয়েড সমস্যা। আপনার যদি ত্বক শুষ্ক লাগে, শরীরে দুর্বলতা থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে এবং একইসাথে ক্লান্ত থাকেন তাহলে আপনার থাইরয়েডের সমস্যা থাকতে পারে।
ডায়াবেটিস শরীরে দানাবাঁধার পূর্বেও আপনার ক্লান্ত লাগতে পারে। ডায়াবেটিস হলে আপনার রক্তের সুগার লেভেল কমে যায়। সুগার লেভেল কমে যাওয়ার ফলে আপনার শরীর নেতিয়ে পড়ে এবং আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
প্রচণ্ড হতাশ থাকলেও মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েন। হতাশ হলে অনেকেই বিছানা ছেড়ে উঠতে চান না, ঘুমাতেও চান না। সব মিলিয়ে এক অন্যরকম ক্লান্তির মধ্যে থাকেন।
ক্লান্ত থাকার আরেকটি গোপন কারণ হচ্ছে পেট খারাপ থাকা। রাস্তাঘাটের খোলামেলা পরিবেশে কোনো কিছু খেলে পেটে বদহজম অথবা ডায়রিয়া হয়। এসব কারণে মানুষের মাথা ব্যথা করে, বুক জ্বালাপোড়া করে, গলা থেকে ঢেকুর বের হয়- এতে শারীরিকভাবে দুর্বলতা দেখা দেয়। ক্লান্ত থাকার এটাও আরেকটা কারণ।
শরীরে কোনো ধরনের ইনফেকশন থাকলেও আপনি ক্লান্ত হতে পারেন। এপস্টেইনবার ভাইরাস অথবা লাইম ডিজিজে আক্রান্ত হলে আপনি অস্বাভাবিকরকম ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন।
শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও আপনার ক্লান্তির পেছনের আরেকটি কারণ হচ্ছে নাক ডাকা। আপনি যদি ক্লান্ত থাকেন তাহলে এটার মানে এটাও দাঁড়ায় যে, আপনি অনেকদিন ধরে নাক ডেকে যাচ্ছেন।
হার্টের অসুখ থাকলেও আপনার মধ্যে ক্লান্তিভাব দেখা দিতে পারে। হার্টে সমস্যা দেখা দিলে আপনার শরীরের ব্লাড টিস্যুগুলো থেকে রক্ত শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে যোগান দিতে থাকে। এতে আপনার পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
যদি নিয়মিত ক্লান্ত থাকেন তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। কারণ ক্লান্তির আড়ালে হয়তো আপনার শরীরে বাসা বেঁধে আছে কোনো ভয়াবহ রোগ।
নতুন_শশুর_বাড়িতে_বেড়ানোর_পরে_বাড়ি_ফিরলো_ছেলে….।
মা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, বাবা শশুড় বাড়ির লোকজন কেমন লাগলো?
ছেলেঃ ভালো মা।
মাঃ তোমার শাশুড়ি কেমন আদর যত্ন করলো?
ছেলেঃ সেটা বললে তো তুমি আবার রাগ করবা!
মাঃ না রাগ করবোনা, বল!
ছেলেঃ আমার শাশুড়ি তোমার থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসেন আমায়। তুমিতো একটা মুরগী রাধলে আমাকে ছোট একটা টুকরো দেও! আমার শাশুড়ী আমাকে আস্ত একটা মুরগী দেয়,কতো রকম পিঠা,খেতে বসলে পাশে বসে বাতাস করেন। এক কথায় তোমার থেকে অনেক গুন বেশি ভালোবাসে আমাকে! আসার সময় তো আসতে দিতেই চাননি। বললেন আর কটা দিন থেকে যাও। তবুও জোর করে চলে আসলাম। দুর দেখা যায় পথের দিগে তাকিয়ে ছিলেন।
মা মনে কষ্ট পেলেও মুখে হাসি রেখে বললেন, বাবা তোমার শাশুড়ীর মতো অতো ভালোবাসতে আমি শিখিনি। বাবা আমার একটা কথা রাখবি?
ছেলেঃ বলো মা রাখবো।
মাঃ এখন তুই আবার তোর শশুড় বাড়ি চলে যা। ঠিক ছয় মাস পরে বাড়ি ফিরবি। এক দিন আগেও আসবিনা।
ছেলে এইটা তো খুব ভালো সুযোগ।আমার শাশুড়ি আমায় যতো ভালোবসে তাতে ছয় মাস কেন ছয় বছর বেড়ালেও বেড়ানোর মজা শেষ হবেনা। মা বললেন ঠিক আছে বাবা তাহলে তুমি যাও।
ছেলে বউকে নিয়ে শশুড় বাড়ি ফিরে গেল।
শাশুড়ী জামাইকে দেখে বললে কি বাবাজি বাড়িতে গেলেনা? গিয়ে ছিলাম আবার আপনার কথা মনে পরলো তাই চলে এলাম।শাশুড়ী একগাল হাসি নিয়ে বললো ভালো করেছো। শশুড় মশাই বাড়ি ফিরে দেখলো জামাই ঘরে।ঘরে ঢুকে বউকে বললো কিগো তোমার জামাই বাড়ি যায়নি? তিনি উত্তরে বললো গিয়েছিলো আবার ফিরে এসেছে আমার কথা নাকি খুব মনে পরছিলো। শশুর বললো কেমন বেয়াক্কেল জামাই এই এক সপ্তা বেড়িয়ে সকালে গেল আবার বিকেলেই চলে এলো। শাশুড়ি বললো চুপ করো শুনতে পাবে। দু এক দিনেই তো আবার চলে যাবে। জামাই বেচারা সব কথা শুনে ফেললো।ভাবছে এইটুক সময়ের মধ্যে এতো পরিবর্তন! হোক ছয়মাস বেড়াতে হবে।
এখন আর আগের মতো আস্ত মুরগী তো দুরের কথা নিয়মিত মাছ ভাতও জুটেনা। কয়েক দিন পর সকাল বেলা একটা জাল হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, বাবা খালি বসে বসে খাবে কি দিয়ে? কয়টা মাছ ধরে নিয়ে আসো। পরে দিন গরুর দড়ি হাতে দিয়ে বললো, যাও গরুটা বেধে রেখে আসো। পরে হাতে কাচি ধরিয়ে দিয়ে বললো যাও ঘাস কেটে আনো। এতে জামাই বাবাজি বিব্রত হলেও কিছু বলতে পাছেনা। এক দিন জামাই বাবার খুব জ্বর এলো মেয়ে পাশে বসে মাথায় পানি দিচ্ছে। শাশুড়ী একবারও দেখতে যাওয়াতো দুরের কথা। মেয়েকে বললো কিরে তোর জামাই শুইয়া রইছে আর আকাইম্মাডার মাথায় পানি দাও। উঠ যাইয়া ঘরের কাম কাইজ কর।
বউ বললো, আর কতো অপমান সহয্য করব? চলো বাড়ি যাই । এখনো চার মাস পরে যাবো।এই কথা শুনে শাশুড়ি বললো, আমর বাড়ি থেকে বের হয়ে অন্য কোথাও গিয়া বদলা খেটে খাও। আমারে মুক্তি দাও বাপু। এর থেকে ঘর জামাই রাখলে বিয়ের বাড়তি খরচটা অন্তত বাচতো।
এভাবে প্রতি দিন যা তা ব্যাবহার করছে আর সহয্য করা যায়না। রেগে গিয়ে বউকে একটা চর মারলো। এতে যা হবার হলো; শাশুড়ী এক রকম ঝাটা পেটা করে ঘর থেকে বের করে দিলো আদরের জামাই বাবাজিকে।
ছেলে এতো দিনে হারে হারে বুজতে পারলো।মায়ের থেকে কেউ বেশি ভালোবাসতে পারেনা।
এখন মাত্র তিন মাস হলো এর মধ্যেই এই আচরন।মা তো ত্রিশ বছরেও এমন আচরন করেনি।অসুখ হলে রাতের পর রাত জেগে থাকতেন।পাশে বসে কেঁদে কেঁদে দোয়া করতেন।
ছেলে বাড়ি গিয়ে মায়ের পায়ের উপর পড়ে বললো, মায়ের মত আপন পৃথিবীতে কেউ হতে পারে না। আমাকে মাফ করে দাও।
হে আল্লাহ তুমি পৃথিবীর সকল মাকে সুস্থ থাকার তৌফিক দান করুন।।।
আমিন…….
কিছু বার্তা সময়ের শেষ বলে কিছু নেই ,সময়ের তো শেষ নেই ? তাইলে তুমি বা কেনো শেষ হবে ? তুমি কেনই বা হেরে যাবে ?? তোমার যেখানে শেষ ; সেখান থেকে অনেকেরই শুরু!! জীবনে থেমে থেকোনা কখনো….শেষ থেকেই শুরু করো আবার।
প্রিয় প্রজন্ম, আগামীর কর্ণধার তোমরা যাঁরা এইচ এস সি পরীক্ষা দিছো,যারা পরীক্ষায় ভাল ফলাফল নিয়ে যাঁরা পাশ করেছো তোমাদের অসাধারণ অর্জনের জন্য জানাই মনের ভিতর থেকে অভিবাদন, আর যাদের পরীক্ষার ফলাফল একটু খারাপ হয়েছে , কিংবা মোটামুটি নাম্বার পেয়ে কোনোরকম পাশ করেছো তাদের ও জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা, আর যারা এইচ এস সি পরীক্ষায় পাশ করতে পারোনি তাদের জন্য রইল আগামী দিনের জন্য প্রতিদিন নিজেকে নতুন ভাবে জাগিয়ে তুলার ও আরো শক্তিশালী ভাবে নিজেকে তৈরী করার আহবান। আর হ্যা তোমাদের মন খারাপের কিছু নেই,মনে রাখবে একটি পরীক্ষার ফলাফল তোমার জীবনের লক্ষ্যে কোন বাধা সৃষ্টি করতে পারে না, আর যদি তোমরা তা ভেবে থাকো তাহলে তোমরা ভুল ভাবছো। তোমরা জানো না হয়তো তোমাদের জন্য ভবিষ্যতে আরো অনেক বড় কিছু অপেক্ষা করছে। শোককে শক্তিতে পরিণত করো, জীবনে অনেক ব্যর্থতা আসবে, আঘাত পাবে, অনেক ভুল করবে কিন্তু এই ভূল ব্যর্থতা সবকিছু থেকে শিক্ষা নিয়েই সামনে এগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। পরীক্ষায় সবাই ভালো ফলাফল করবে না, সবাই জিপিএ ৫ পাবে না, কেউবা উত্তীর্ণই হবে না—এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে কারও মধ্যে মেধা বা সামর্থ্যের ঘাটতি আছে, তা কিন্তু নয়।
পৃথিবীতে সবাই জিনিয়াস প্রতিটা মানুষের মধ্যেই নিজের মেধা আর সামর্থ্য ফুটিয়ে তুলার ক্ষমতা আছে। কেউ পড়ালেখায় ভালো ফলাফল অর্জন করে, কেউ অন্যভাবে কিছু করে, কিংবা তার নিজের ভিতরের ইচ্ছে শক্তি আকংখা কে আবিষ্কার করে নতুন কিছু করে, তুমি যদি পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করেই থাক, তাহলে ধরে নিতে হবে, তোমার মধ্যে এমন অসাধারণ কিছু প্রতিভা লুকিয়ে আছে, হয়তো বা এখনো তা তুমি নিজেও জান না। শুধু প্রয়োজন অপেক্ষা আর ধৈর্য। তুমি নিজেই হয়তো একদিন শুধু নিজেকে নয় সারা বিশ্ব কে চমকে দেবে, তাই বিশ্বাস রাখো নিজের প্রতি। ব্যর্থ হয়ে ও যাঁরা ব্যর্থতা কে স্বীকার করে আত্মবিশ্বাসের সাথে সামনের দিকে এগিয়ে যায় তারা হারে না কখনো,ব্যর্থতা একটি পরীক্ষা মাত্র ,স্বীকার করে নাও কোথায় ঘাটতি আছে কি ভূল আছে তা খোজে বের করো, লড়াই চালিয়ে যাও যতক্ষণ না তুমি সফল হচ্ছো। স্বপ্ন দেখো সেটা যেটা তোমাকে তোমার স্বপ্ন পূরণে ঘুমুতে দেই না, জেগে স্বপ্ন দেখো ঘুমিয়ে নয় কামড় দিয়ে লেগে থাকো স্বপ্ন আর লক্ষ্যের পিছনে, মানুষ অবশ্যই স্বপ্নের চেয়ে বড়, স্বপ্ন দেখো শান্তির ঘুম ত্যাগ করো লড়াই করো মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যেও না, কিছু না করলে স্বপ্নের জ্বয়ধ্বনি শুনতে পাবে না, যে ব্যর্থ হয়ে ও শক্তি রেখে লড়াই করে নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যায় সে কখনো হারেনা। একটা কথা বলি তোমাদের হাজারো বাঁধার মধ্যে ও জীবন কখনোই থেমে থাকে না। বাঁধা অতিক্রম করে জীবন তার আপন গতিতে এগিয়ে ছুটে চলে….জীবন চলবে জীবনের নিয়মে, জীবন কখনো থামবে না,
যত কিছুই ঘটে যাক না কেন, জীবনের সাথে, সবকিছু মেনে নিয়ে লড়াই করে, হার মেনে না নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নাম-ই- জীবন! তোমরা কখনোই ভেবো না তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি শীলতা নেই , বিশ্বাস করে লড়ে যাও, তোমরা প্রজন্ম আগামী দিনের কর্ণধার, তোমাদের এই দেশ কে অনেক কিছু দেওয়ার আছে। তোমাদের হাত ধরেই এই পৃথিবী অনেক দূর এগিয়ে যাবে, তোমাদের ভিতরে লুকিয়ে থাকা অসাধারণ সৃষ্টি শীলতা ও প্রতিভা জাগিয়ে তুলো জীবনের শেষ বিন্দু পর্যন্ত লড়ে যাও।
আজ না কাল না হয় পরশু না তার পরের দিন একদিন না একদিন সফল হবেই ইনশাআল্লাহ। জয় হবেই, জয় তোমাদেরই
সবশেষে একটা কথায় বলবো তোমাদের সময়ের শেষ বলে কিছু নেই, সময়ের তো শেষ নেই?
তাইলে তুমি বা কেনো শেষ হবে? তুমি কেনই বা হেরে যাবে ?? তোমার যেখানে শেষ ; সেখান থেকে অনেকেরই শুরু!! জীবনে থেমে থেকোনা কখনো….শেষ থেকেই শুরু করো। আবার…..এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা তোমাদের, যাও ব্যর্থতার শব্দ থেকে মুছে দাও তোমাদের নাম, তোমার শক্তি সাহস আর সাফল্যের জানান দাও বিশ্বকে। …. তরুণ লেখক, বক্তা ও ব্যবসায়িক উদ্দোক্তা- ওসমানুজ্জামান হায়দার রোকন চৌধুরী।
-আলমগীর মাহমুদ।
দুই পাশের রেলিং ভাঙা
মধ্যখানে উঁচু- নিচু,
কোন মতে দাঁড়িয়ে আছে-
মোদের হালদা সেতু!
সারা বছর ভয়ে ভয়ে
পার হচ্ছে মানুষ,
কত লেখা নিউজ হচ্ছে-
তবুও নেই কারো হুঁশ!?
দশের মাথা আছেন যারা
ভোটের আগে ফুলঝুরি,
এঁন করেগা তেঁন করেগা-
ভোটের শেষে পকেট ভারি..!?
আষাঢ় শ্রাবণ ভারি বৃষ্টিতে
সেতু করে টলমল,
শত-শত ছেলে-মেয়ে গুলো-
ভয় আতংকে যাই স্কুল!?
পড়িতে চাহিনা আমি
হালদার বুকে,
যত জনই মরুক
আমার (সেতু) দায় কিসের?
-১০/৭/২০১৯
অনেকদিন আগের কথা৷ আমি তখন দশ কি বারো৷ আমার গ্রামের পাশ দিয়ে চলে গেছে এক বহতা নদী, গ্রীষ্মে চর পরে, কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপন করতো৷ বর্ষায় প্রমত্তা সেই নদী, ভরা যৌবনা৷ নৌকা চলে, শৌখিন ভ্রমনে অনেকেই বেড়িয়ে পরে৷
নদীর উপর পারাপারের জন্য প্রায় দেড়’শ ফিট লম্বা ব্রীজ৷ আগে সবাই কে যমুনার শাখা নদী বলতে শুনেছি, এখন ব্রীজের পাশে নামফলক হয়েছে, ছোট যমুনা৷
যে ঘাটে গ্রামের সবাই গোসল করতো তার অদূরেই একটা শ্বশান ঘাট আছে৷ ওদিকে সবাই ভয় নিয়েই তাকাতো৷ প্রায় সেখানে মৃতদেহ দাহ হতো৷ বর্ষার জোয়ারের পানিতে কাঠ কয়লা ভেসে আসতো গোসলের ঘাটে৷
আমিও যেতাম বড়দের সাথে মাঝে মাঝে নদীতে গোসল করতে বা কখন বৈকালিক ভ্রমনে নদীর কুলে৷ একদিনের কথা৷ দেখলাম শ্বশান ঘাটে একজন কাউকে দাহ করা হচ্ছে, একটু দূরে একটি বিশ বাইশ বছরের মেয়ে আকুল হয়ে কাঁদছে৷
আমি আমার সংগের আত্মীয় কে জিজ্ঞাসা করলাম …..খালাআম্মা মেয়েটি কাঁদছে কেন? আর উনি একা দূরে কেন, সবার থেকে আলাদা কেন?
খালাআম্মা বলল যাকে দাহ করা হচ্ছে তিনি ঐ মেয়েটির বাবা আর মেয়েটি দূরে কারন ওর কাছে আসার অনুমতি নেই৷ সে পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন৷
কিছুদিন আগে মেয়েটি একজন মুসলিম যুবক কে ভালবেসে বিয়ে করেছে৷ মুসলিম পরিবার মেয়েটিকে মেনে নিলেও মেয়েটির পরিবার মেনে নেয়নি৷ মেয়েটিকে ত্যাজ্য করা হয়েছে এবং মৃত বাবার মুখ দেখার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে৷ তাই মেয়েটি দূরে দাড়িয়ে একা একা …. … ঐ বয়সেই ঘটনাটি আমাকে খুব আহত করে৷ অনেক প্রশ্ন মনে ভীর করে৷ কেন? আমার প্রশ্ন —মেয়েটি মুসলিম যুবক কে বিয়ে করে ভুল করেছে নাকি তার নিজ পরিবার তার সাথে যে নিদারুন আচড়ন করল সেটা অন্যায় হয়েছে?
একদিন সকাল বেলা খুব হৈ চৈ, নদীতে ছাদ ভেসে উঠেছে৷ সবাই বলা বলি করছে অতি প্রাকৃত কোন বিষয়, পুরাতন কোন জমিদার বাড়ি হবে হয়তবা! আমিও গেলাম অতি উৎসাহী হয়ে দেখতে৷ দেখলাম অনেকেই পানিতে নেমেছে৷ ওখানটায় পায়ের পাতা ডুবানো পানি৷ শ্বশান ঘাটটা খুব কাছেই৷ আমিও নামলাম পানিতে অনেকের সাথে এবং স্পষ্টতই দেখলাম একটা বিশাল আকৃতির ছাদ সদৃশ কিছু৷ বালু ভেদ করে জেগে উঠেছে চারকোনা …. সিমেন্টের তৈরী স্থাপনা৷ তবে আমার কাছে পুরাতন নিদর্শন বলে মনে হয়নি ! সারাদিন এই নিয়ে চলল অনেক আলোচনা ,উৎসাহ উদ্দীপনা, জল্পনা কল্পনা৷ রাত হলো ,সকাল হলো৷ পরদিন নদীর পাড়ে যেয়ে কেউ ভেসে উঠা ছাদটি দেখতে পায়নি৷ সবাই বলাবলি করল …অনেকে নাপাক শরীরে খোঁচাখুঁচি করেছে তাই হয়ত ওটা আবার ডুবে গেছে৷ কুসংস্কার ছন্ন অন্ধ সমাজ, যেমন দেখেছে তেমন করেই ভেবেছে৷ কিন্তু আমার প্রশ্ন কি ছিল ওটা যার উপর আমি নিজে হেঁটেছি???
ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি হিন্দু বাড়িতে খেলে পাপ হয়, বেহেস্ত নসীব হয়না৷ শিশু বয়েস থেকে মুসলিম ঘরের সন্তানেরা এভাবেই মানুষিক ভাবে তৈরী হয়৷ খাওয়া যাবেনা৷ আমি খেয়েছি এবং দেখেছি মুসলমান আপ্যায়নে ওরা কতটা আন্তরিক থাকে, খুশী হয়৷ এবং বিশেষ সর্তকতার সাথে খাবার পরিবেশন করা হয়৷ আলাদা করে রান্না করা, মুসলিম বাবুর্চি ডেকে এনে বিয়ে বাড়িতে রান্না করা, তা আলাদা করে পরিবেশন করে, আলাদা প্লেট আলাদা প্যান্ডেল৷ আমার প্রশ্ন ইসলাম কি এই ভেদাভেদ সমর্থন করে? হিন্দু পরিবার যে ভাতৃত্যবোধ দেখাচ্ছে তা অসর্থন কি করে ??
আমি একটি হিন্দু পরিবারের সাথে দীর্ঘদিন পাশাপাশি বসবাস করেছি৷ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার৷ কাছে থেকে দেখেছি ওদের জীবন যাপনের ধরণ ৷ নিয়ম বেঁধে পুজা আর্চা করা সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালানো, গোবর দিয়ে উঠান লেপা ……
শুনেছি প্রতিদিন কুয়াতে গোবর দিতো শুদ্ধতার জন্য৷ যে কারনে আমরা কখনও পানি খেতাম না ওই বাড়িতে৷ বরং ওই বাড়িতে গেলে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করতাম, কি জানি যদি আমার কারনে ওদের কোন অনাচার হয়!
হিন্দু ঘরে জন্ম নিয়ে দিনে দিনে পারিবারিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে, আচার আচরনে অভ্যস্থ হয়ে ওঠা, সমস্ত নিয়ম নীতি মেনে চলা মানুষ গুলো যখন শুনি কোন দিন বেহেস্তে প্রবেশ করবে না, তখন আমার প্রশ্ন আসে মনে, কেন ??
কথা আছে ….. জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো” আপন জন্মের ব্যাপারে মানুষের নিজের কোনো ভূমিকা থাকে না। উঁচু-নিচু, ধনি বা দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম হওয়াটা তার ইচ্ছা বা কর্মের ওপর নির্ভর করে না। কিন্তু কর্ম জীবনে তার ভূমিকা ও অবদানের দায় তার নিজের ওপর বর্তায়। তাই পৃথিবীতে মানুষের প্রকৃত বিচারে তার জন্ম-পরিচয় তেমন গুরুত্ব বহন করে না। বরং কর্ম-অবদানের মাধ্যমেই মানুষ পায় মর্যাদার আসন, হয় বরণীয় স্মরণীয়।
সমাজে এক শ্রেণির লোক আছে যারা বংশ আভিজাত্যে নিজেদের সম্ভ্রান্ত মনে করেন। তারা বংশ মর্যাদার অজুহাতে সমাজে বিশেষ মর্যাদা দাবি করেন। কিন্তু তাদের এই প্রয়াস বাস্তবতা বিবর্জিত ও হাস্যকর। সমাজের নিচু তলায় জন্ম নিয়েও মানুষ কর্ম ও অবদানে বড় হতে পারে। মানব সমাজের ইতিহাসে এ রকম উদাহরণ অজস্র। পদ্ম ফুলের সৌদর্যই বড়। পঙ্কে জন্মেছে বলে তাকে হেয় গণ্য করা হয় না। তেমনি মানুষের কর্মের সাফল্যই বড়, জন্ম-পরিচয়ে মানুষের বিচার হীনমন্যতারই পরিচায়ক। বস্তুত প্রকৃতির রাজ্যে মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই।
সমাজের এক দল মানুষ মানুষের উপর আধিপত্য স্থাপন করে ছোট বড় ধনী-গরিব ইত্যাদি ভেদাভেদ সৃষ্টি করেছে। ধর্মীয় ব্যবধান রচনা করেছে মানুষই। ফলে সমাজে মানুষে মানুষে আপাতদৃষ্টে ভেদাভেদ সৃষ্টি হয়েছে। তাই যে-কোন পেশা, যে-কোন কাজ মানুষ করুক না কেন, তা সমাজে গুরুত্বহীন নয়। তাকে অপ্রয়োজনীয় ও অবজ্ঞেয় করা সুস্থতার পরিচয়ক নয়। মানুষ যেখানেই জন্মগ্রহণ করুক বা যে কাজই করুক , সে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছে কিনা সেটাই বিবেচ্য। মানুষের কল্যাণে সমাজের অগ্রগতিতে সে যতটা অবদান রাখে তার ভিত্তিতেই তাকে মূল্যায়ন করা হয়। সে অনুযায়ী তাকে সমাজে স্বীকৃতি দিতে হয়। বংশ পরিচয়ের অজুহাতে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ, ক্ষমতা ও দম্ভের শক্তিতে মানুষের ওপর জবরদস্তি করে সমাজে মর্যদার আসন লাভ করা যায় না।
কর্মই মানুষের জীবনের আসল পরিচয়। জন্ম-পরিচয়ের উর্ধ্বে আপন কর্ম পরিচয় তুলে ধরাই মানুষের ব্রত হওয়া উচিত । তাহলেই সুকর্মের মাধ্যমে মানুষ গৌরব ও মর্যাদার আসনে আসীন হতে পারে।
প্রথমেই গণিতের একটি জাদু দিয়ে শুরু করা যাক। যে কোনো দুটি সংখ্যা ধরে নিয়ে এদের যোগফল বের করুন। প্রাপ্ত যোগফলটির সাথে ধরে নেওয়া দ্বিতীয় সংখ্যাটিকে আবার যোগ করুন । এবার প্রতিটি যোগফলকে আগের সংখ্যা দিয়ে যোগ করতে থাকুন । এভাবে ২০তম সংখ্যা পর্যন্ত বের করে ২০তম সংখ্যাটিকে ১৯তম সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল পাবেন ১.৬০৮ । যে কোনো সংখ্যা দিয়েই শুরু করা হোক না কেন, প্রতি ক্ষেত্রেই ফল আসবে ১.৬০৮ । উদাহরণস্বরূপ ৫ এবং ২ সংখ্যা দুটিকে বিবেচনা করব ।
৫+২ = ৭; ২+৭ = ৯; ৭+৯ = ১৬; ৯+১৬ = ২৫; ……………………
এভাবে ১৯ এবং ২০তম সংখ্যাটি পাওয়া যায় যথাক্রমে ১৩,১৫৩ এবং ২১,২৮২ । ২১,২৮২-কে ১৩,১৫৩ দ্বারা ভাগ করলে ভাগফল হয় ১.৬০৮ । এই সংখ্যাটিকে বলা হয় গোল্ডেন রেশিও। এটি প্রকৃত অর্থেই একটি জাদুকরী সংখ্যা। গণিতে যতগুলো তাৎপর্যপূর্ণ সংখ্যা আছে সেগুলোর মধ্যে গোল্ডেন রেশিও বা সোনালি অনুপাত একটি। বোঝাই যাচ্ছে, এটি একটি আনুপাতিক রাশি। এর মান ১.৬১৮০… এবং প্রকাশ করা হয় গ্রীক অক্ষর φ (ফাই) দ্বারা । এটি একটি অমূলদ সংখ্যা । অর্থাৎ এটাকে দুটি পূর্ণসংখ্যার ভগ্নাংশরূপে প্রকাশ করা যায় না । φ-কে প্রকাশ করার একটি সাধারণ রীতি হচ্ছে-
দেখা যাচ্ছে, φ-কে সাধারণ ভগ্নাংশে প্রকাশ করা সম্ভব নয় । এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। গণিতের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা পাই (π) অমূলদ সংখ্যা হলেও সেটাকে ২২/৭ ভগ্নাংশরূপে বেশ কিছু সংখ্যা পর্যন্ত সঠিকভাবে প্রকাশ করা যায় । এজন্য φ-কে বলা হয় গণিতের সর্বাধিক অমূলদ সংখ্যা ।
φ (ফাই) অক্ষরটি নেওয়া হয়েছে গ্রীক ভাস্কর ফিডিয়াস-এর নামের আদ্যক্ষর থেকে । বলা হয়, ফিডিয়াস (৪৮০-৪৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) এথেনীয় পার্থানন-এর নকশা করেছিলেন সোনালি অনুপাতের ওপর ভিত্তি করে । এর পর থেকেই সোনালি অনুপাতকে φ দ্বারা প্রকাশ করার রীতি চালু হয় । গোল্ডেন রেশিওকে গোল্ডেন সেকশন (Golden Section), গোল্ডেন মিন (Golden Mean), গোল্ডেন নাম্বার (Golden Number), ডিভাইন প্রোপরশন (Devine Proportion), ডিভাইন সেকশন (Devine Section), গোল্ডেন প্রোপরশন (Golden Proportion)-ইত্যাদি বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়েছে । φ সম্পর্কে প্রাচীন মিসরীয়দের জানা-শোনা ছিল বলে মনে করা হয় । আনুমানিক ২৫৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তৈরি হওয়া প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের একটি-মিশরের পিরামিডে সোনালি অনুপাতের ব্যবহার লক্ষ করা গেছে । ইউক্লিডের এলিমেন্টস-এও সোনালি অনুপাতের অনুরূপ একটি জ্যামিতিক প্রতিজ্ঞা দেওয়া ছিল । ১৫০৯ সালে ইতালীয় গণিতবিদ ও অ্যাকাউন্টিং-এর জনক লুকা প্যাচিওলির লেখা ‘ডি ডিভাইনা প্রোপরশনি (De divina proportione)’ নামক গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পর সংখ্যাটি অধিক পরিচিতি লাভ করে । বইয়ের জ্যামিতিক চিত্রগুলো এঁকে দিয়েছিলেন রেনেসাঁর প্রবাদ পুরুষ লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি । সংখ্যাটির সাথে ভিঞ্চি যে খুব ভালোভাবেই পরিচিত ছি্লেন তার জোরাল প্রমাণ এটা । লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯) তাঁর বহু শিল্পকর্মে সোনালী অনুপাত ব্যবহার করেছেন । এর মধ্যে ভিট্রুভিয়ান ম্যান, দ্য লাস্ট সাপার ও মোনালিসার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । এছাড়া মাইকেলেঞ্জেলোর ‘দ্য ক্রিয়েশন অফ অ্যাডাম’, রাফায়েলের ‘দ্য স্কুল অফ এথেন্স’, বত্তিচেল্লির ‘দ্য বার্থ অফ ভিনাস’, সালভাদর ডালির ‘দ্য স্যাক্রামেন্ট অফ দি লাস্ট সাপার’- ইত্যাদি বিখ্যাত সব চিত্রকর্মে গোল্ডেন রেশিওর ব্যবহার দেখা যায় ।